২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কবি আল-মাহমুদ এর প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
কবি আল-মাহমুদ এর প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী

রচনায়- ডা.মিজানুর রহমান মাওলা (অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও কলামিষ্ট)

জন্মঃ- আল মাহমুদ ( আব্দুস শুক্কুর মীর) তবে কবি আল-মাহমুদ নামেই পরিচিত,
১১ জুলাই ১৯৩৬ মোড়াইল গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ মৃত্যুঃ-ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯ (বয়স ৮২)
পেশাঃ-কবি, সম্পাদক, সাংবাদিক জাতীয়তাঃ-ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩৬-১৯৪৭) পাকিস্তানী (১৯৪৭-১৯৭১)

 

বাংলাদেশী (১৯৭১-২০১৯) নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ সময়কাল বিংশ শতাব্দী ধরন কবিতা, গল্প, উপন্যাস বিষয় গ্রামীণ জীবন, নারী উল্লেখযোগ্য রচনাবলি লোক লোকান্তর কালের কলস সোনালি কাবিন মায়াবী পর্দা দুলে উঠো কাবিলের বোন (উপন্যাস)।

 

পানকৌড়ির রক্ত (গল্পগ্রন্থ) উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:
একুশে পদক (১৯৮৬)
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮)
দাম্পত্যসঙ্গী সৈয়দা নাদিরা বেগম
১৯৫০-এর দশকে যে কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন তাদের মধ্যে মাহমুদ একজন।[৫] লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৭৩), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।[৬] কবি আল মাহমুদ তার অনবদ্য গল্প ও উপন্যাসের জন্যও খ্যতি অর্জন করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা:
আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।[৭] তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর।[৮] তার দাদার নাম আব্দুল ওহাব মোল্লা যিনি হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন।

কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করে ঢাকায় আসার পর কাব্য সাধনা শুরু করেন এবং ষাট দশকেই স্বীকৃতি ও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা:
সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আগমন করেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলা পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে তিনি ভারত গমন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ নামক পত্রিকায় প্রতিষ্ঠা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।[৩]

সাহিত্যজীবন সম্পাদনা:
১৯৫৪ সাল অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স থেকে তার কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ ও কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম পরিচিত হয়ে ওঠে এবং তাকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর (১৯৬৩) সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস (১৯৬৬), সোনালি কাবিন (১৯৭৩), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।

তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার নগরকেন্দ্রিক প্রেক্ষাপটে ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে তার কবিতায় অবলম্বন করেন। নারী ও প্রেমের বিষয়টি তার কবিতায় ব্যাপকভাবে এসেছে। উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নারীর যৌনতা, আকাঙ্ক্ষা ও ভোগের লালসাকে তিনি শিল্পের অংশ হিসেবেই দেখিয়েছেন।[৯] আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের প্রয়োগ তার অনন্য কীর্তি।
১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[১০] তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম সোনালি কাবিন। ১৯৭০-এর দশকের শেষার্ধ তার কবিতায় বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস উৎকীর্ণ হতে থাকে; এর জন্য তিনি প্রগতিশীলদের সমালোচনার মুখোমুখি হন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস “কবি ও কোলাহল”। কোনো কোনো তাত্ত্বিকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিশ্বাসগ্রস্ততার কারণে তার বেশকিছু কবিতা লোকায়তিক সাহিত্যদর্শন দৃষ্টান্তবাদ দ্বারা অগ্রহণযোগ্য। তবে একথাও সত্য, কবিতায় দর্শন থাকে, কিন্তু দর্শন দ্বারা কবিতা নিয়ন্ত্রিত নয়, কবিতা আবেগের কারবার। [১১]

উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পাদনা:
লোক লোকান্তর (১৯৬৩) কালের কলস (১৯৬৬) সোনালী কাবিন (১৯৭৩) মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬) আরব্য রজনীর রাজহাঁস,বখতিয়ারের ঘোড়া
অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না
Selected Poems – Al Mahmud (১৯৮১) দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র
প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র, কবির আত্নবিশ্বাস
কবিতাসমগ্র, কবিতাসমগ্র-২
পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না
নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে, ফুলের কাছে
প্রেমও ভালোবাস।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30