২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ইতিহাসের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও বঙ্গবন্ধুর ট্রামকার্ড !!

অভিযোগ
প্রকাশিত মার্চ ৭, ২০২৪
ইতিহাসের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও বঙ্গবন্ধুর ট্রামকার্ড !!

ইতিহাসের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও বঙ্গবন্ধুর ট্রামকার্ড !!
[A wrong decision in history and Trumcard of Bangabandhu !!]

কলনে
সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর
অ্যাভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
তারিখ : ২৭ মার্চ/২০২৩

ভূমিকা ( Introduction) : প্রায় দুইশো বছরের উপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে যখন স্বাধীন হয়,তখন এ অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য পাকিস্তান সৃষ্টি ছিল ইতিহাসের একটি ভুল সিদ্ধান্ত! তাই পরবর্তী সময়ে মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে তার অপমৃত্যু ঘটেছিল! কিন্তু কেন? তা নিয়ে বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তর গবেষণা-ব্যাখ্যা-বিতর্ক হয়েছে, এখনও হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তৈরির পেছনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের যুক্তিতে সমগ্র পাকিস্তানের মুসলিমরা সায় দিলেও পূর্ব বঙ্গের মুসলিমরা কখনই তাদের বাঙালিয়ানা জাতিসত্তাকে কিংবা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেনি। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাঙালিরা এত দ্রুত অস্থির হয়ে পড়ল কেন? পাকিস্তান সৃষ্টির দুই দশক না যেতেই বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে তাদের আবেগ, আকাঙ্ক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে পড়েছিল কেন? যার এক কথায় উত্তর বৈষম্য আর শাসকগোষ্ঠী তথা পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু কিছু ভূঁইফোড় নেতার অতি বাড়াবাড়ি তথা গোঁয়ার্তুমি মনোভাব!

যে সব ঐতিহাসিক বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল (Due to historical discrimination, Bengalis turned away from Pakistan) : পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যেহেতু দেশের পশ্চিমাংশে ঘাঁটি গাড়েন, সেহেতু শাসন ক্ষমতাও সেখানেই কুক্ষিগত হয়ে পড়ে।যদিও পূর্ব পাকিস্তানের তখন জনসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। সেই সাথে শুরু হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রে দেশের অন্য একটি অংশের নাগরিকদের প্রতি পদে পদে বৈষম্য।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে চাকরি, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর উঁচু পদে বাঙালিদের নিয়োগ পাওয়া ছিল খুব কঠিন। সেই সাথে বিনিয়োগে অবহেলার কারণে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কল-কারখানার কাঁচামালের যোগানদাতা এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রধান ক্রেতা।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল তার ‘ডেডলি এমব্রেস’ বইতে লিখেছেন পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই “পাকিস্তানের কাছে পূর্ব বাংলার গুরুত্ব ছিল দ্বিতীয় এবং বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে দেখা হতো।”

দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ( Second Class Citizens) : মি রিডেল, যিনি একসময় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর বিশ্লেষক হিসাবে কাজ করেছেন, তার বইতে লিখেছেন, “প্রথম থেকেই পাকিস্তানের শাসনক্ষমতার ভরকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ পাঞ্জাব রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং সেই একচ্ছত্র প্রাধান্য ধরে রাখার চেষ্টা পাকিস্তানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য ছিল। পাকিস্তানের ঐ অংশে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ছিল পাঞ্জাবে। সবচেয়ে বেশি উর্বর কৃষি জমি ছিল সেখানে। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল পাঞ্জাবের। অনেক পাঞ্জাবি সেনা কর্মকর্তা মনে করতেন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। তাদের অনেকেই বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতেন এবং তারা মনে করতেন বাঙালিদের লড়াই করার ক্ষমতা নেই।”

মার্কিন ঐ গবেষক আরো লিখেছেন, “সেনাবাহিনী এবং আমলাতন্ত্রে পাঞ্জাবিদের আধিপত্য কায়েম হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমাংশের উন্নয়নের দিকে প্রধান নজর দিল। পূর্ব পাকিস্তানকে একরকম উপনিবেশ হিসাবে দেখা শুরু হয়।”
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরের ২৫ বছর সেই প্রভু-সুলভ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে প্রশাসনের প্রতিটি প্রায় পদে পদে। সেইসাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দূরত্ব ক্রমাগত বেড়েছে এবং বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে।

বৈষম্যের খতিয়ান ( Discrimination Check) : কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ আসাদুল্লাহ ২০০৬ সালে তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে বেশি হওয়া সত্বেও সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্য ছিল অনেকটা পাহাড় সম।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের জায়গা পাওয়া কঠিন ছিল।
পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫০-৫৫), কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৫-৭০) সেই বরাদ্দ বাড়লেও তা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ ।

মি. আসাদুল্লাহ লিখেছেন – একদিকে বরাদ্দ অনেক কম দেওয়া হতো, তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রকাশ্যে এবং গোপনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তহবিল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জটিল ও বিভ্রান্তিমূলক কর ব্যবস্থায় আড়ালে নানা খরচ দেখিয়ে এই তহবিল নিয়ে যাওয়া হতো। এক হিসাবে ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হওয়া এই টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬০ কোটি ডলার।

শিক্ষা বৈষম্য (Educational Discrimination) : যেখানে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের দুই অংশে মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ছিল সমান, সেখানে ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় তাদের পূর্বের আয় থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঐ ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে বিনিয়োগের অভাবে শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে তা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে ২৪ বছরের আগের তুলনায় প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কমে যায়। বছরের পর বছর বরাদ্দে এই বৈষম্যের শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। ভারত ভাগের সময় পাকিস্তানের দুই অংশে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল প্রায় সমান। কিন্তু ১৯৭১ সালে এসে পূর্ব পাকিস্তানে ২৪ বছরের আগের তুলনায় প্রাইমারি স্কুলে

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30