২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কাজী নজরুলের আলোচিত পাঁচমিশালী প্রেমের ঘটনা

অভিযোগ
প্রকাশিত মার্চ ৭, ২০২৪
কাজী নজরুলের আলোচিত পাঁচমিশালী প্রেমের ঘটনা

কবি পরিচয়ের বাইরে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রেমিক পুরুষ। যার আকর্ষণীয় চেহারা, বিপুল জনপ্রিয়তা, খেয়ালী চরিত্রের জন্য খুব সহজেই নারীরা আকৃষ্ট হতেন। নজরুলের প্রেম ও প্রেমিকাদের নিয়ে কথা বলতে গেলে যাদের নাম অনায়াসে চলে আসে, তারা হলেন- সফুরা খাতুন, নার্গিস, প্রমিলা, রানু সোম ও ফজিলাতুননেসা। এখানে তাদের সঙ্গে কবির প্রেমের গল্প সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

০১। সফুরা খাতুন
নজরুলের প্রথম মন দেয়া-নেয়া হয়েছিল তারই গ্রামের এক ধনীর দুলালীর সঙ্গে। সেটা ঘটেছিল তাঁর কিশোর বয়সে। এই মেয়েটিই ছিল প্রকৃতপক্ষে নজরুলের প্রথম প্রেমিকা। তার বাড়ি ছিল খোট্টাডিহির কাছে নিমসা গ্রামে। মেয়েটি সত্যি দেখতে শুনতে অত্যন্ত সুন্দরী ছিল। বাল্যকাল থেকেই এই কিশোরীর সঙ্গে নজরুলের মন দেয়া-নেয়া শুরু হয়। নজরুলের এই প্রথম প্রেমিকার নাম সফুরা খাতুন। রানী গঞ্জ মহকুমার তথা রানীগঞ্জ থানার খোট্টা ডিহির সন্নিকটস্থ নিমসা গ্রামেই তাঁর বিয়ে হয়। অবশ্য বিয়ের পর তাঁর নামকরণ হয় সফুরা বিবি। নজরুল ব্যথার দান উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর কৈশরের সেই মানস প্রিয়ারই উদ্দেশ্যে এই বলে- ‘মানসী আমার! মাথার কাঁটা দিয়েছিলুম বলে ক্ষমা করোনি, তাই বুকের কাঁটা দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করলুম।

০২। নার্গিস
এরপর যে মেয়েটি নজরুলের জীবনে আলোড়ন তুলেছিল তার নাম নার্গিস। অবশ্য তার নাম ছিল সৈয়দা খাতুন। কবি ভালোবেসে তার নাম দিয়েছিল নার্গিস। তার সঙ্গে কবির আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছিল কবির বাঁশি বাজানো নিয়ে। এক রাতে কবি খাঁ বাড়ির দিঘির ঘাটে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, সেই বাঁশির সুরে মুগ্ধ হন নার্গিস। খাঁ বাড়ির মুরব্বিরা নার্গিসের বর হিসেবে নজরুলকে পছন্দ করতেন না। নজরুলকে তারা বাউণ্ডুলে হিসেবেই দেখেছিলেন। কিন্তু গ্র্যাজুয়েট আলী আকবরের জন্য প্রতিবাদ করতেন না। এক পর্যায়ে খোদ নজরুলই বিয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একদিন নার্গিস নজরুলের কাছে এসে বললেন, ‘গত রাতে আপনি বাঁশি বাজিয়েছিলেন? আমি শুনেছি।’ এভাবেই প্রেমের সূত্রপাত। আলী আকবর খান নজরুল-নার্গিসের বিয়ের আয়োজন করলেন জাঁকজমকের সঙ্গে। বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩ আষাঢ় ১৩২৮ সন। তবে কবিকে শর্ত দেওয়া হলো- ঘরজামাই থাকতে হবে। এটি শুনে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে সরাসরি কুমিল্লা চলে গেলেন। কবির জন্য নার্গিস দীর্ঘ ১৬ বছর অপেক্ষা করেছিল।

০৩। প্রমীলা দেবী
প্রমীলা সেনগুপ্তা। ডাক নাম দোলন। কবির একমাত্র সহধর্মিণী। এবং ৩য় প্রেমিকা। কবি ও প্রমীলা দেবীর বিয়ে নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ প্রমীলা দেবী ছিলেন হিন্দু আর কবি ছিলেন মুসলমান। কোন ধর্ম মতে বিয়ে হবে এ নিয়ে। তাদের বিয়েতে, সিভিল ম্যারেজ আইন অনুযায়ী বর-কনে উভয়কে এক স্বীকৃতি এই বলে দিতে হয় যে, আমি কোনও ধর্ম মানি না। কিন্তু কবি তা মানেনি। কবি বলেন, আমি মুসলমান আর মুসলমানী রক্ত আমার শিরায় শিরায় ধমনীতে ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে, এ আমি অস্বীকার করতে পারবো না। পরে মুসলিম আইনে কবি ও প্রমীলা দেবীর বিয়ে হয়।

০৪। রানু সোম
এরপর কবির জীবনে এলো রানু সোম নামে এক নারী। কবি রানুকে গান শেখাতেন। কিন্তু রানু সোম প্রেম করে বুদ্ধদেব বসুকে বিয়ে করেন। রানু সোমকে নিয়ে রটিত নজরুলের প্রেম সক্রান্ত কথাগুলো পুরোপুরি মিথ্যে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, তাদের ভিতর স্যার-ছাত্রীর সম্পর্ক ছিল। নজরুল মিশুক প্রকৃতির ছিলেন, তাই তাঁকে নিয়ে অনেক বদনাম করা হতো।

০৫। ফজিলাতুননেসা
১৯২৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় দফা ঢাকা সফরের সময় ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ফজিলাতুন্নেসা তখন ঢাকার দেওয়ান বাজারস্থ হাসিনা মঞ্জিলে থাকতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের কাছ থেকে ফজিলাতুন্নেসা জানতে পারেন নজরুল হাত দেখে ভাগ্য বলতে পারেন এবং ফজিলাতুন্নেসারও তার হাত নজরুলকে দেখাবার ইচ্ছে হয়। এভাবে ফজিলাতুন্নেসা ও তার বোন সফীকুননেসার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় ঘটে ফজিলাতুন্নেসার বাসায়। কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে জানা যায়, সেই দিন রাতেই নজরুল ফজিলাতুন্নেসার ঘরে যান এবং প্রেম নিবেদন করেন। ফজিলাতুন্নেসা নজরুলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

তথ্যসংগ্রহ:
’জনপ্রিয় লেখকদের অদ্ভুত কাণ্ডকাহিনি’ বইটি থেকে

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30