১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ছবি ;পার্থ সোম

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
ছবি ;পার্থ সোম

ছবি
পার্থ সোম

প্রত্যেক মানুষের আছে ভয়ানক এক রূপ।সে যতই নিরীহ হোক না কেন।নীল আকাশ যেমন কখনো ঘন কালো মেঘে ঢেকে ভয়ানক রূপ নিয়ে বানে, বজ্রপাতে সৃষ্টিকে নাজেহাল করতে পারে মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়।নিরীহ ভোলাভালা মানুষটাও হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর।

কালু নামের একজন ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে।এস আই সাব্বির আহমেদ এর সামনে বসে আছে সে।চলন্ত গাড়ির জানলা থেকে যুবতীর কানের দুল ছিড়ে পালাচ্ছিল।পাবলিক ধরে ফেলে পিটিয়ে আধমরা অবস্থায় থানায় নিয়ে আসে।

রোগা পটকা লোকটার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি ।
সাব্বির সাহেব বললেন,”সাথে কে কে ছিল?”
“তিনজন ছিলাম,দুজন পালিয়ে গেছে।”
“বাড়ি কোথায় তোর?”
“মিরপুরে।”
“পেশা কি?”
সে চুপ করে রইল।হঠাৎ বেজে উঠল টেলিফোন।ক্রন্দনরত নারীকন্ঠ ভেসে এলো ওপার থেকে।
“আমার মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।স্যার, বাঁচান আমার মেয়েটাকে।বারো ঘন্টা হয়ে গেল ওর কোনো খোজ পাইনি।”
“আপনার ঠিকানা?”….
কালুকে হাজতে ঢোকানোর নির্দেশ দিয়ে সাথে একজন জুনিয়র অফিসারকে নিয়ে সাব্বির সাহেব রওনা হলেন।

দোতলা বাড়িটা। চার বার বেল বাজানোর পর দরজা খুলল অত্যন্ত সুন্দরী এক নারী।
” আসুন স্যার।আমিই ফোন করেছিলাম আপনাকে।”
যেমন সুন্দর তার চেহারা তেমনি সুন্দর কণ্ঠ।
কাঁদতে কাঁদতে চোখের নিচটা কালো হয়ে গেছে।

দোতলার ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে কত বিচিত্র সব পেইন্টিং টাঙানো।কী অদ্ভুত সব ছবি।সাব্বির সাহেবের জানার ইচ্ছা হচ্ছিল এগুলো কোথা থেকে কিনেছে কিন্ত সেটা জিজ্ঞেস করার মত মুহুর্ত এখন নয়।

“ওগুলো আমার আঁকা।আমি একজন চিত্রশিল্পী। আমার নাম আরিফা হক।সাব্বির সাহেবের কৌতুহলী দৃষ্টি দেখে আরিফা হক বুঝে গেলেন তার মনের প্রশ্ন।”তারপর হঠাৎ দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল সে।

“আমার মেয়ে! আমার একমাত্র মেয়ে!তাকে নিয়ে গেল কারা।ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই।”

“আপনার হাসবেন্ড কোথায়?”
আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে দুবছর আগে।তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই।
“এ বাড়িতে আপনি একা থাকেন?”
“একা না আমি আর আমার মেয়ে থাকি।কিন্তু আমি তো একা হয়ে গেলাম।আমার মেয়েটা যে হারিয়ে গেল।হায়…..”
” এমন বলবেন না আমরা আছি তো নিশ্চয়ই তাকে পাওয়া যাবে। বয়স কত ওর?”
“এই জুনে আট হলো।”
“আচ্ছা ও কখন থেকে মিসিং? “

” পনের ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে।গতকাল বিকেলে আমি আমার আর্টরুমে বসে একটা ছবি আঁকছিলাম আঁকা শেষ করতে করতে রাত হয়ে যায়। তরপর থেকে আর ও নেই।তারপর কত খুঁজলাম।রাস্তায়,পাশের ফ্লাটগুলোতে কিন্তু কোথাও পেলাম না।সারারাত খুঁজেছি আমি ওকে।আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠল আরিফা হক।
মেয়েটার ছবি ড্রয়িংরুমের দেওয়ালেই টাঙানো ।মায়েরই চেহারা পেয়েছে মেয়েটা।
সাব্বির সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব আমরা আছি আপনার সাথে।
আরিফা হক চিৎকার করে উঠলেন, “না, না আমার মেয়েকে এখনি খুঁজে বার করতে হবে।সে আছে। আশেপাশেই আছে।হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে”।উন্মাদিনীর মত আচরণ করছেন আরিফা হক।

সাব্বির সাহেব দোতলার ঘরগুলো খুব ভালো করে দেখতে লাগলেন।
বাড়ির দরজা নাকি খোলা ছিল। তাহলে নিশ্চয় কেউ এসেছিল।অপহরণকারী কে হতে পারে?আশেপাশের ফ্লাটের কেউ নাকি।প্রশ্ন গুলো বার বার উকি দিচ্ছিল।
নিচতলা ঘরগুলো তালাবন্ধ।আরিফা হককে বললেন খুলে দিতে।
আপনার আর্ট করার ঘর কোনটা?
ডান পাশের ঘরটা।
“তালা খুলুন”
আরিফা হক ঘরের তালা খুললেন।রং তুলি, ক্যানভাস,নানা পেইন্টিং সব ছড়ানো ছিটানো।চিত্রশিল্পী বটে এই নারী।মনে মনে প্রশংসা না করে পারলেন না সাব্বির সাহেব।
সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা ক্যানভাসের কাপড় সরিয়ে চমকে উঠলেন সাব্বির সাহেব।
আরিফা হক তারই মেয়েকে এঁকেছেন।কী আশ্চর্য! কী অদ্ভুত। মেয়েটা মেঝেতে চোখ বুজে শুয়ে আছে। ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।

“এই ছবিটাই এঁকেছিলেন গতকাল?”
সেই ছবির দিকে আরিফা হক বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন।কি যেন বিড় বিড় করছেন আপন মনে।”এই ছবি আঁকতে গিয়ে মেয়েটাকে হারালাম।কেন আঁকলাম এ ছবি!”
তারপর সাব্বির সাহেবের দিয়ে তাকিয়ে বললেন, “এখনো খুজে পেলেন না আমার মেয়েকে!
আমার মনে পড়েছে আমার মেয়ে কোথায় আছে!মনে পড়েছে”।আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠে আরিফা হক।
মনে পড়েছে মানে? কোথায় আপনার মেয়ে?
“ছাঁদে।” তারপর বিশ্রীভাবে হেসে উঠলেন আরিফা হক।যে মুগ্ধতা গ্রাস করেছিল এই সুন্দরী মেয়েমানুষ এর উপর মুহূর্তে তা যেন ঘৃণায় রূপান্তরিত হলো।
সাব্বির সাহেব আর তার সহকর্মী একরকম ছুটেই ছাদে চলে গেলেন।
দরজায় তালা দেওয়া।
তালা ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাব্বির সাহেব তখনই বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে হাজির হলেন আরিফা হক।
“এই যে চাবি।আমার মেয়ে উপরে ভালো আছে।ঘুমাচ্ছে ও।ওকে ডাকবেন না।”
উত্তেজনায় হাত কাপছিল সাব্বির সাহেবের।কী উন্মাদ এই মহিলা।দরজা খুলে দেখলেন ছাদ ফাঁকা।শুধু একটা পানির ট্যাংকি ছাদের কোনায় আর দুটো গোলাপ ফুল গাছ টবে লাগানো। ফুলে ভরে গেছে গাছ দুটো।
সাব্বির সাহেব পানির ট্যাংকির ঢাকনা খুললেন।
দেখলেন সেখানে ভাসছে সেই ফুটফুটে মেয়েটার মৃতদেহ।আরিফা হক পেছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠলেন “পেয়েছে!আমার মেয়েকে খুজে পেয়েছে! “

শিক্ষার্থী,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ
বিভাগ:বাংলা,চতুর্থ বর্ষ।
Please Share This Post in Your Social Media
September 2024
T W T F S S M
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930