২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাংলা ভাষার সৃষ্টি ও বিস্থারের কথায় তথ্য সংগ্রহে

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
বাংলা ভাষার সৃষ্টি ও বিস্থারের কথায় তথ্য সংগ্রহে

ও রচনায়- কবি ডা.মিজান মাওলা (অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সাংবাদিক)

তথ্য সুত্র প্রকাশ : জাতীয় ভাষার বিশেষ জাতির জন্যে অজানা কে জানুন….
বাংলা ভাষায় দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালী জাতির বাষা বাংলা

ইংরেজ শাসনের প্রায় ১৯০ বছর পরে ‘৪৭ এর দেশ বিভাগ, মাতৃভাষা বাংলা অধিকার রক্ষায় ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রজনতার প্রাণ উৎসর্গ ও ত্যাগ, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুথ্থান ও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের রক্তক্ষয়ী বহু সংগ্রামের পর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা প্রদান করেছে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিশ্বের ১৯৩টি দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলা নামের অন্যান্য নিবন্ধের জন্য,
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা।[১০] মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা[১১] এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা।[১২][১৩] এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে।[১৪] সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে।[২] বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলা

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যোগাযোগের সহায়ক হিসেবে নানা মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। তন্মধ্যে ভাষা মন ও মননের ভাব প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য মাধ্যম।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “মনুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তারই নাম ভাষা।”

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ” মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দ সমষ্টিকে ভাষা বলে।”

মুহাম্মদ আব্দুল হাই এর মতে, “এক এক সমাজে সকল মানুষের অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।”

ভাষা গবেষক সুকুমার সেন এর মতে, ” মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিই ভাষা।”

ড. মুনীর চৌধুরী বলেন, “ভাষা মানুষে মানুষে সম্পর্ক স্থাপনের প্রধানতম সেতু, সামাজিক ক্রিয়া-কর্ম নির্বাহের অপরিহার্য মাধ্যম, সভ্যতার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ভাষা সাহিত্যের বাহন, ভাবের আধার, আবেগের মুক্তিপথ, চিন্তার হাতিয়ার।”

বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট বলেন, “A language is a system of arbitrary vocal symbols by which members of a social group co-operate andinteract.”

ভাষা হলো বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি ও ধ্বনিসমষ্টি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি আবেগ, অনুভূতি অর্থাৎ মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারে।

বাংলা ভাষা ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ইন্দো-ইউরোপীয় (Indo-European) এই ভাষা পরিবারের এমন নামকরণের কারণ হচ্ছে এই পরিবারের ভাষাগুলোর সীমা একদিকে ভারত অন্যদিকে ইউরোপ। বাংলা ভাষা ইন্দো-ইরানীয় ভাষার শাখা থেকে উৎপত্তি।

ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষাগুলো সাধারণত ১০টি শাখায় বিভক্ত: ক. ইন্দো-ইরানীয় খ. আর্মেনীয় গ. গ্রীক ঘ. আলবানীয় ঙ. ইটালীয় চ. সেলটিক ছ. জার্মানীয় জ. বাল্টো-শ্লাভীয় ঝ. আনাতোলীয়। এবং ঞ. তুখারীয়।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি দল প্রথমে ইরান ও পরে ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে এই ভাষা দুটো অঞ্চলে প্রসারিত হয়। এই শাখার মধ্যে ইরানীয় ভাষায় প্রাচীন ভাষার গঠন সংরক্ষিত থাকায় এবং পরবর্তীকালে সংস্কৃত ভাষার প্রাচীন কাঠামো ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষা পুনর্গঠনে বিশেষ সহায়তা করে।

ভারতীয় আর্য ভাষার প্রাচীন নমুনা ঋগ্বেদে সংরক্ষিত। ঋগ্বেদের রচনাকাল ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আর্যগণ ভারতে আসতে শুরু করে আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই তিনশ’ বছরে তারা ভারতে অবস্থান করে যে ভাষা ব্যবহার করত তাকে সুকুমার সেন বলেন, প্রত্ন-ভারতীয় আর্য ভাষা বা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা। এই ভারতীয় আর্য ভাষা থেকেই আধুনিক ভারতের বাংলাসহ বহু আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়েছে। বাংলাকে তাই ভারতীয় আর্য ভাষার এক সুদূর বংশধর বলা যায়।

আজ পর্যন্ত ভারতীয় আর্য ভাষার জীবনকাল প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর। এই সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাস তিনটি পর্বে বিভক্ত: ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ( ১৫০০-৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) খ. মধ্য ভারতীয় আর্য (৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ) গ. নব্য ভারতীয় আর্য (১০০০খ্রিষ্টাব্দ-বর্তমান)।

প্রাচীন ভারতীয় ভাষাকে সাধারণত সংস্কৃত ভাষা বলা হয়। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি পর্যায় বা পর্ব: ক. বৈদিক ভাষা ও সাহিত্য খ. সংস্কৃত। সংস্কৃত ভাষা চারশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রচলিত ছিল। ঋগ্বেদের প্রাচীনতম শ্লোক এক হাজার খ্রিষ্টপূর্বে রচিত বলে অনুমান করা হয়। পরবর্তীকালে ঋগ্বেদের শ্লোকের ব্যাখ্যা এবং ভাষার সংরক্ষণশীলতার জন্য ঋগ্বেদের ভাষা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থেকে সংস্কৃতের জন্ম হয়। সংস্কৃত ভাষা চারশ’ খ্রিষ্টপূর্বে প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ভারতে ব্যবহৃত শুদ্ধরূপ সংস্কৃতের পাশাপাশি কথ্যভাষা প্রাকৃত প্রচলিত ছিল। তৎকালীন প্রচলিত ভারতীয় ভাষাকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়: ক. বৈদিক সংস্কৃত (১২০০-৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) খ. ধ্রপদী সংস্কৃত (প্রচলিত রূপ ৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব শতকে) এবং গ. প্রাকৃত। বৈদিক ও ধ্রুপদী সংস্কৃতকে প্রাচীন ভারতীয় এবং প্রাকৃতকে মধ্য ভারতীয় স্তরে ফেলা যায় (৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ)।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30