২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঈদের ছুটিতে ঘুরতে পারেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট

অভিযোগ
প্রকাশিত জুন ৬, ২০১৯
ঈদের ছুটিতে ঘুরতে পারেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট

ফকির হাসান :: অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ খ্যাত সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ পাহাড়-টিলা, চা-বাগান, দেশের একমাত্র সোয়াম ফরেস্ট, হাওর, বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত। ঈদের এই ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের শতাধিক পর্যটনস্পট। কিছু সময় এসব পর্যটন এলাকায় কাটালে আপনার মন নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে। সিলেটকে এজন্যই বলা হয় প্রকৃতিকন্যা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা-বাগান, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগর। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিলেট জেলার পর্যটন স্পট পর্যটক বরণে এখন প্রস্তুত। প্রতি বছরের মতো আসছে ঈদেও এসব স্পটে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মনকে সতেজ করে তুলতে ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে নানা সাজে। তবে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন বাংলোর ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এবারের ঈদে বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি রয়েছে।

অতিবৃষ্টি হলে পর্যটকরা সিলেটে কম আসবেন এবং ব্যবসায় ভাটার আশঙ্কা রয়েছে। তবুও পর্যটন স্পটগুলোর সবকটি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট সেজেছে বর্ণিল সাজে। এদিকে পর্যটকদের সুরক্ষা ও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দঘন করতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন, থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এ ছাড়া প্রতিটি পর্যটন স্পটসমূহে পুলিশি টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট। এটি সিলেট বিভাগীয় শহরের জেলা। সিলেট বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এখানে শায়িত আছেন ওলিকুল শিরোমনি হজরত শাহজালাল ও হজরত শাহপরান (রহ.)-সহ ৩৬০ জন আউলিয়া।

জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, প্রকৃতিকন্যা জাফলং, বিছানাকান্দির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি সাদা পাথরের স্তুপ আর দেশের একমাত্র রূপওয়ে স্টেশন পর্যটকদের টেনে আনে বারবার। ঘুরে দেখতে পারেন এই অপরূপ শহর।

সিলেট জেলার পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে- মালনীছড়া চা-বাগান, হজরত শাহজালাল (র.) মাজার, হজরত শাহপারান (র.) মাজার, শ্রী চৈতন্য দেব মন্দির, জাফলং, সারিনদী, লালাখাল, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়া চা-বাগান, লোভাছড়া পাথর কোয়ারি, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, রায়েরগাঁও হাওর, বিছনাকন্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত, লক্ষণছড়া, মিঠাপানির জলারবন রাতারগুল, জৈন্তা হিল রিসোর্ট, নাজিমগড় রিসোর্ট, নগরের সুরমা নদীর উপর লোহার নির্মিত সেতুর নাম কিন ব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, ঐতিহাসিক জিতু মিয়ার বাড়ি, মনিপুরি রাজবাড়ি, এমএজি ওসমানী জাদুঘর, হাসন রাজার মিউজিয়াম।

বিনোদন পার্কগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভেন্সার ওয়ার্ল্ড, এক্সলিয়রস পার্ক, ওসমানী শিশু পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, খাদিম জাতীয় উদ্যান, টিলাগড় ইকুপার্ক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি।

হোটেল মালিকরা বলছেন, এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকায় সিলেট হয়ে উঠবে পর্যটন নগর এমনটা বলছেন হোটেল মালিকরা। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি হোটেলে বিশেষ নজরদারি থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

পুলিশ জানায়, ঈদে সিলেটে পর্যটকদের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যায়। এই মৌসুমকে কেন্দ্র করে কয়েকটি ছিনতাই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। পর্যটকরা বাস, ট্রেন অথবা বিমান থেকে নামার পর এই চক্রের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হন। আর এদের প্রতিরোধ করে পর্যটকদের নিরাপদে রাখতে এবার বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাস, ট্রেন ও বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি চেকপোষ্ট ও টহল বাহিনী সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখবে সকল স্থানে। বিশেষ করে পর্যটকরা যেসকল হোটেলে উঠবেন প্রতিটি হোটেলেই বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট জোনের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের অনেক সুন্দর সুন্দর পর্যটন স্পট রয়েছে যা পৃথিবী অনেক উন্নতদেশের মনোরম সৌন্দর্য হার মানায়। এবার ঈদুল ফিতরে সিলেটে অন্যবছরের তুলনায় পর্যটক বাড়তে পারে। পর্যটন কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলাবাহীনিকে আরো সর্কক হতে হবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে ভ্রমনে আরো আগ্রহী হবেন পর্যটকরা।’

এব্যাপারে সিলেট জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পর্যটকরা যাতে নির্বিঘে্ন চলাচল করতে পারেন সেজন্য পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ পর্যটন স্পটগুলোতে দায়িত্বরত থাকবেন। পর্যটকরা যাতে প্রতারিত না হন সেজন্য ঘাটের ইজারাদার, নৌকার মাঝি ও হোটেল মালিকদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম ও ডুবুরিদেরও সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সিলেটের প্রতিটি পর্যটন স্পটে সতর্কতামুলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছেও বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো, জেদান আল মূসা বলেন, ‘পর্যটন নগর সিলেটে ঈদের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ঘুরতে আসেন। এসময় অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হন। এবার পর্যটকদের নির্বিঘ্ন চলাফেরার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে। হোটেলগুলোতে নজর রাখা হবে। এবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে পুরো সিলেটজুড়ে।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30