২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শকুন কমে যাওয়ায় দেশে এ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক ও অন্যান্য জুনোটিক রোগের সংক্রমণ ঘটছে !

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
শকুন কমে যাওয়ায় দেশে এ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক ও অন্যান্য জুনোটিক রোগের সংক্রমণ ঘটছে !

মঞ্জুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা প্রতিনিধি:

প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে শকুন একটি পরিচিত পাখি। নানা ধরনের মরা-পচা খেয়ে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে যেমন আমাদের রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। বর্তমানে এই উপকারী পাখিটি মানুষের অসচেতনতা, অজ্ঞতা, অবহেলা আর অদূরদর্শিতার কারণে অতিবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দিন দিন অস্বাভাবিকহারে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে শকুন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে জানিয়ে বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ইনাম আল হক বলেন,এনথ্রাক্স এমন একটি রোগ যা কিনা ১০০ বছর মাটির নিচে থাকলে তা সুপ্ত থাকে। কিন্তু একমাত্র শকুনের পেটে তা হজম হয়। অথচ শকুন কমে যাওয়ার ফল এ্যানথ্রাক্স, যক্ষা, খুরা রোগসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শকুন (ইংরেজি: Vulture) মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারিদিকে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখিবিশেষ।

শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে। লোকচক্ষুর আড়ালে মহীরুহ বলে পরিচিত বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধে। সাধারণত গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি সাদা বা ফ্যাকাসে ডিম পাড়ে।

সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়, এর মধ্যে পশ্চিম গোলার্ধে ৭ প্রজাতির এবং পূর্ব গোলার্ধে (ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া) ঈগলের সাথে সম্পর্কিত ১১ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশবাংলাদেশে প্রায় ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে, এর মধ্যে ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বাবাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। তবে শুধু গ্রীফন প্রজাতির শকুনই মাঝে মাঝে দেখা যায় (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০)। এসব প্রজাতির শকুনই সারা বিশ্বে বিপদাপন্ন। স্থায়ী প্রজাতির মধ্যে রাজ শকুন মহাবিপন্ন। এটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্যে ঠোঁটে পাথরের টুকরো বহন করে ও ডিমের উপর নিক্ষেপ করে।

ইদানীং বিভিন্ন দেশে, গবাদি পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডাইক্লোফেন’ নামের ব্যথানাশক ঔষধের প্রভাবে শকুন মারা যাচ্ছে। একারণে ডাইক্লোফেন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে।বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না; কিন্তু ডাইক্লোফেন দেওয়া হয়েছে, এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে (২০১০) উপমহাদেশে ৭৫% শকুন মারা গেছে। ১৯৮০’র দশকে সার্কভুক্ত দেশে প্রায় ৪,০০,০০,০০০ শকুনের অস্তিত্ব ছিলো, অথচ এই সংখ্যা এখন কমে মাত্র ৪০,০০০-এ এসে দাঁড়িয়েছে।

এভাবে শকুন কমতে থাকলে তা পরিবেশ এর জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশ এর ভারসম্য রক্ষায় এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
—————————————-(প্রকৃতি বাংলা)

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30