২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অদম্য এক ইচ্ছাশক্তির নাম মাউথপ্রিন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
অদম্য এক ইচ্ছাশক্তির নাম মাউথপ্রিন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম

স্টাফ রিপোর্টারঃ লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ঘটলো দুর্ঘটনা। দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ এর কাজ করতে গিয়ে ২০০৫ সালের সে দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়ে ফেলেন তার দুটি হাত। চিকিৎসার খরচ পল্লীবিদ্যুত নিলেও নেয়নি তার ভবিষ্যত জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরছেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ৮ বছর। হাত নেই, পঙ্গু হয়েছে দুই পা। তবে কী হয়েছে তাতে। তবুও মুখ দিয়ে এঁকে চলেছেন এক মনে বিভিন্নরকমের ছবি। কথাগুলো বলা হচ্ছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়ন এর চককেশব গ্রামের এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমের। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম জানান, প্রথমদিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরতো। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতেন। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে বেশিক্ষণ ছবি আঁকতে পারেন না তিনি বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেন্সিল ও রঙ-তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন।

উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার চককেশব নিজগ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। গত ৪ বছর যাবত্ তিনি তার বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারণে নিজ বাড়ি চককেশব বালুবাজারে আছেন। তিনি ভালোবাসেন গ্রামবাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে। নিজ বাড়িতে থেকে তার মুখ দিয়ে অঙ্কনকৃত ছবি প্রদর্শনী অসম্ভব। তবে তিনি যদি সুযোগ পান তাহলে তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান।

তিনি বেশ গর্ব নিয়ে জানালেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শনী হয়েছে। আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। ছবির দাম নিয়ে দেন-দরবার তেমন একটা করা হয় না। বেশিরভাগ সময়ই তারা খুশি হয়ে যা দেন, তাই নেন। বর্তমানে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোনোরকমে চলছে তার সংসার। তবে বর্তমান অবস্হা আরো খারাপ বলে জানালেন ইব্রাহিম ও তার বোন সালেহা, শারীরিক অবস্হা অবনতি হওয়ায় আঁকতে পারছেন না ছবিও সাথে জুটেছে রাজশাহী সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল এ যাতায়াত ও টেস্ট সহ ইউরিন থলিতে জমা পানি নিয়ে চলছে জীবন।
মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজর রহমান(উজ্জল)বলেন, ‘মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও মাসিক ৩০ কেজি চালের ব্যবস্হা করে দিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় আরো ব্যবস্হা করা হবে।

উপজেলা ভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে সে বিকশিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। যদি বড় পর্যায়ে কখনো তার প্রতিভাকে দেখানোর সুযোগ পান তবে তিনি একদিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবেন।
মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘দুই হাত নেই তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন বিভিন্নরকমের ছবি। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা যে তার একটি বিশেষ গুন তা তার ছবিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। তবুও মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিমের স্বপ্ন একদিন তিনি মুখ দিয়ে ছবি এঁকে পুরোবিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করবেন।’ এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে তার ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা এবং সরকার কর্তৃক সার্বিক সহযোগিতা আশ্বাস দেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30