২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ডেংগু জ্বর, লক্ষন,চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করনীয়।

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ২৩, ২০১৯

 

 

 

সাইদুল ইসলাম(কসবা প্রতিনিধি) বর্তমান সময়ের এক মহামারী ডেংগু জ্বর।২০০০ সালে ঢাকা শহরে এটার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বিশাল আকার ধারন করেছিল বলে এটাকে তখন ঢাকা ফিভার নামকরণ করা হয়েছিল। ডেংগু একধরনের ভাইরাস জ্বর,যা মুলত এডিস ইজিপ্টাই নামক ডেংগু ভাইরাসবাহি মশার কামড়েই হয়ে থাকে,এটাকে ভেক্টর বর্ন ডিজিজ বলা হয়।অর্থাৎ একজন ডেংগু আক্রান্ত ব্যাক্তিকে যখন জিবানুবিহীন মশা কামড়ায় তখন সে ঐ জীবানু বহন করে আবার যখন অন্য সুস্থ ব্যাক্তি কে কামড় দেয় তখন ঐ ব্যাক্তি আক্রান্ত হয় মূলত এভাবেই এই রোগ ছড়ায় ।এই ভাইরাসের চার ধরনের টাইপ রয়েছে। ডেংগু জ্বরের লক্ষন কি? অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতই এই জ্বরে তাপমাত্রা খুব দ্রুত বেড়ে যায়,কখনো কখনো ১০২ ১০৩ ১০৪ ১০৫ পর্যন্ত উঠে যায়।সাথে সারা শরীরে ব্যাথা মনে হবে যেন কেউ হাড় ভেঙ্গে ফেলছে এইজন্য এর আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা(Arthralgia ),Skin Rash যা এলার্জির মত বা লাল ঘামাচির বিচির মত হয় তবে এটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর ভাল হওয়ার পর দেখা দেয়। বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে ,পেটে ব্যাথা হতে পারে। মূলত এই জ্বর ৫-৭ দিন স্থায়ী হয়। রোগ নির্নয় পদ্ধতি ? রোগ নির্নয়ের জন্য রক্তের CBC, Platelet Count (এক লক্ষের কম) ,এবং Anti Dengue IgM ও IgG(ELISA method) করে মোটামুটি ভাবে নির্নয় করা যায় তবে তা অবশ্যই মিনিমাম ৫ দিন পর করতে হবে ডেংগু কি প্রানঘাতি? ডেংগুর কিছু কমপ্লিকেশন বা জটিলতা রয়েছে,ডেংগু প্রধানত দুই ধরনের, ১ ।ডেংগু ক্লাসিক্যাল ফিভার ২,ডেংগু হেমোরেজিক ফিভার।প্রথমটা ৫ থেকে ৭ দিন বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই ভাল হয়ে যায়,কিন্তু দ্বিতীয়টাতে ভয় বেশী কারন তখন নাক দিয়ে রক্ত পরা,চামড়ার নিচে রক্ত ক্ষরন,দাতের মাড়ি দিয়ে রক্তপরা সহ পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।সবচেয়ে প্রানঘাতি হলো ডেংগু শক সিনড্রোম, তখন সার্কুলেটরী ফেইলর হয় অর্থাৎ পালস খুই বেশী বেড়ে যায়,ব্লাড প্রেসার খুব বেশী কমে যায়,শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়,শ্বাসকষ্ট হতে পারে, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ রেনাল ফেইলিয়র,লিভার ফেইলিয়ার ইত্যাদি ডেভেলপ করে রোগী মারা যেতে পারে,মনে রাখবেন বর্তমানে ডেংগু জ্বরে যত রোগী মারা যাচ্ছে তার কারন হচ্ছে ডেংগু শক সিন্ড্রোমে, প্লাজমা লিকেজ হয়ে ফ্লুইড বেড়িয়ে যাচ্ছে, তাই এই চিকিৎসা বাড়িতে সম্ভব নয় হসপিটালে ভর্তি থকে প্রোপার মনিটরিং এ না থাকলে মৃ ত্যু অনিবার্য চিকিৎসা কি? সিম্পটোমেটিক ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ লক্ষন অনুযায়ী চিকিৎসা, জ্বর কমার জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল এবং শরীর মুছে দেয়া,এই ক্ষেত্রে এসপিরিন কিংবা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যাথানাশক কোন ভাবেই দেয়া যাবে না,এতে করে রক্ত ক্ষরনবেড়ে যাবে।এবং এক্ষেত্রে প্লেটিলেট কমে গেলে তখন প্লেটিলেট দেওয়া লাগতে পারে তাছাড়া প্রচুর পরিমান ফ্লুইড বা তরল খাবার খেতে হবে। ডেংগু কি একবার হলে আবার হতে পারে? হ্যাঁ, ডেংগু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে তাই এটা চারবার হতে পারে,তবে দ্বিতীয় বার থেকা ভয়াবহতা বেশী হয়। ডেংগু প্রতিরোধে করনীয় এডিস মশাকে অভিজাত শ্রেনির মশা বলা হয়,এরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শহরের বসবাস করে, স্বচ্ছ পানিতে এদের বসবাস ,তাই বাড়িতে ডাবের খোসা,পরিত্যক্ত টায়ার,ফুলের টব,টিনের কৌটা,ঝোপঝাড়, বাথরুমে জমানো পানি ইত্যাদি পরিস্কার রাখতে হবে কোন ভাবেই পাঁচদিনের বেশী পানি জমতে দেয়া যাবে না।ফ্রিজ,এয়ার কন্ডিশনের নিচ টা পরিস্কার রাখতে হবে যাতে পানি না জমতে পারে।মনে রাখতে হবে ডেংগু মশা দিনের বেলা(সকাল -সন্ধা) কামড়ায় তাই দিনের বেলা মশাড়ি টানিয়ে ঘুমাতে হবে,যাদের এলার্জি বা এজমা আছে তারা কয়েল ব্যাবহারে সাবধনতা আবলম্বন করবেন,এইটা বর্ষাকালে বেশী হয় তাই এই সময় বাচ্চা দের স্কুলে পাঠানোর সময় হাফ শার্ট প্যান্ট না পরিয়ে ফুল জামা পরাবেন ,প্রয়োজনে মসকুইটো লুপেরেন্ট (মশানিরোধক ক্রীম) ব্যবহার করবেন।শহর এলাকায় হলে নির্দিষ্ট সময় পরপর মশা নিধনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা। “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ই উত্তম,, আসুন সচেতন ইই নিজে বাঁচি ,অন্যকে বাঁচাই। লেখক ——- ডা .এম আনোয়ার হোসাইন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মেহারী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,বিডিএমএ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা শাখা

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30