Sharing is caring!
ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি উপলক্ষে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আয়োজনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মাষ্টমী উৎযাপন হয়েছে। এ উপলক্ষে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদ্যাপন কমিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে শুক্রবার সকালে জেলা শহরের শিবতলা কর্মকারপাড়া শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক কনক রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মাজহারুল ইসলাম তরু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন, বৃহত্তর রাজশাহী হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের প্রাক্তন ট্রাস্টি শ্রীযুক্ত তপন কুমার সেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা মন্দিরভিক্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের সহকারী প্রকল্প পরিচালক শ্রী মিলন কুমার দাস, পূজা উদযাপন পরিষদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সম্পাদক শ্রীযুক্ত প্রণব কুমার পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রীযুক্ত দিলীপ কুমার রায়, গোমস্তাপুর উপজেলা শাখা সভাপতি শ্রীযুক্ত ডলার কুমার সাহা, শিবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি শ্রীযুক্ত প্রদীপ গড়গড়িয়া, নাচোল উপজেলা সভাপতি শ্রীযুক্ত স্বপন কুমার সাহাসহ হিন্দু ধর্মালম্বীরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা এ জেড এম নূরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সব ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয় নি, জাতির স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা। সেই লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন।
কোন ধর্ম না থাকার চাইতে যেকোন ধর্ম থাকাই উত্তম উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ জাতিকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। এসময় মন্দিরের পরিবেশ আরো সুন্দর রাখতে বিভিন্ন সহায়তার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
আলোচনা সভা শেষে একই স্থান থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে শিবতলা মোড়, হাসপাতাল রোড, বড় ইন্দারা মোড়, বঙ্গবন্ধু চত্বর হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শেষে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন। পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়।