২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মাগুরার শ্রীপুরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অভিযোগ।

Weekly Abhijug
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
মাগুরার শ্রীপুরে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অভিযোগ।

মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের কুশাইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মান খারাপ এবং নির্মাণ কাজেও করা হয়েছে অনিয়ম এমন অভিযোগ সচেতন এলাকাবাসীর।
নিয়ম অনুযায়ী কার্যস্থলে নির্মাণ কাজের বিবরণ সম্বলিত সাইন বোর্ড দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ফলে এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিম্নমানের ইট, খোয়া,বালি দিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের ভবনের মূল স্থাপনার পিলারের ঢালাই হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে দুই-তিন নম্বর ও নম্বরবিহীন নিম্নমানের ইট এবং ইটের খোয়া। পা দিয়ে একটু জোরে চাপ দিলেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে ইট ও ইটের খোয়া গুলো।
অপর দিকে মূল স্থাপনার খুঁটি যেখানে ঢালাই হচ্ছে সেখানে রয়েছে হাঁটু সমান পানি। পানির মধ্যে চলছে ঢালাই কাজ। এতে করে মূল স্থাপনা অনেক দুর্বল হয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালনা কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা আর নীরব ভূমিকার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমান ও নম্বরবিহীন এসব ইট,বালি,খোয়া ব্যবহার করে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সিডিউলে উন্নতমানের ইট, পাথর ও রড, সিমেন্ট দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা, বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সাথে আঁতাত করে নিম্নমানের ইট,খোয়া,বালি এবং পরিমাণে কম সিমেন্ট ও অতিরিক্ত পরিমাণে বালি ব্যবহার করেছে বলে গ্রামবাসি অভিযোগ করেন।

কুশাইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাহারুল ইসলাম কাছে ভবন নির্মাণ কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইটের খোয়া ও বালি নিম্নমানের।নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত ভেজাল বালি মিশিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করছে।আমি উধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি কাজটা সঠিক তদন্ত করে করা হোক।
তিনি আরো বলেন,কাজের গুণগত মান খারাপ ছিল। খোয়ার মান একটু খারাপ ছিল। আপনার বাসায় এই সমস্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ আপনার বাসায় করবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই করবো না। তিনি বলেন ইঞ্জিনিয়ার সাহেবদের কে জানিয়েছি তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।

কুশাইছাপুর গ্রামের আকিদুল মোল্লা ও শাকিল বলেন, কয়েক দিন ধরেই আমরা ঠিকাদারকে বলে আসছি- এই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা যাবে না। কিন্তু তারা আমাদের কথার কোনো গুরুত্বই দেয়নি।মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর)বিদ্যালয়ের কাজ করার জন্য যে বালু ও ইটের খুয়া এনেছে তা একেবারেই নিম্নমানের। বালুর মধ্যে শুধু কাঁদা ও মাটি মেশানো। আর ইটের খোয়া হাত দিয়ে চাপ দিলেই তা ভেঙে যাচ্ছে।এত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয় আমরা কখনো দেখিনি।

স্থানীয়রা জানায়, প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে স্থানীয় ঠিকাদারের লোকজনের যোগসাজশে দায়সারাভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ময়লাসহ নিম্নমানের বালু ও ইটের খোয়া। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে তাতে ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।এ ভবনে ছেলে মেয়েদের কীভাবে লেখাপড়া করাতে পাঠাবো তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। স্কুলের ছাদ ঢালাইয়ের আগে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি করা উচিত।

গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজ মোল্লা বলেন, এলাকাবাসী দুইদিন ধরে আমার কাছে নিম্নমানের সামগ্রীর অভিযোগ করে আসছে। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে জানাই। তারা বলেছেন- প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা প্রকৌশলী শাফিন শোয়েব জানান,কুশা ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপারে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।পরে বৃহস্পতিবারে ভালোমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির পরিপেক্ষিতে কাজ শুরু হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কুশাইশাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের নির্মাণ সামগ্রী নিম্নমানের এলাকাবাসীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজ আমি বন্ধ করে দিয়েছি। পুনরায় নির্মাণ কাজ চালু হওয়ার কথা না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার শিকদার নাসিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন । পরবর্তীতে এলাকাবাসীরদের সাথে কথা বলে কাজ শুরু করেছি।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30