৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মেয়েকে হত্যা করে জামাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা – বাবা

অভিযোগ
প্রকাশিত জানুয়ারি ২২, ২০২৩
মেয়েকে হত্যা করে জামাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা – বাবা

মেয়েকে হত্যা করে জামাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা – বাবা

স্টাফ রিপোর্টার ঢাকাঃ সাত বছর আগে টাঙ্গাইলের গৃহবধূ পারুল আক্তার হত্যার ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করার কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি বলছে, নিজের পছন্দের ছেলেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন পারুল। সেই বিয়ে মেনে নেননি তার বাবা। তাই নিজের ও পরিবারের সম্মান নষ্ট করায় মেয়েকে হত্যা করেন আ. কুদ্দুস খাঁ।

পারুলকে তার বাবা কিভাবে হত্যা করেন তার বর্ণনা দিয়ে পিবিআই বলেছে- বিয়ের পর ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় এসে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন পারুল ও তার স্বামী নাছির উদ্দিন ওরফে বাবু। দুজন যা বেতন পেতেন তা দিয়ে তাদের সংসার খুব ভালোভাবে চলত না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝে-মধ্যেই ঝগড়া হতো। বিয়ের তিন বছর পর ঝগড়া করে স্ত্রীকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান নাছির। এরপর পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানান।

ক্ষুব্ধ বাবা পারুলকে বাড়ি ফিরতে বলেন। বাবার কথায় স্বামীর সংসার ছেড়ে গ্রামে চলে যান পারুল। এরপরই মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কুদ্দুস খাঁ।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার জানান, পারুলের বাবা কুদ্দুস খাঁ মেয়েকে ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাঙ্গাইল থেকে জয়পুরহাটে নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডলকেও সঙ্গে নিয়ে যান পারুলের বাবা কুদ্দুস। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় গিয়ে সেখানকার একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বাবা কুদ্দুস। পরে বন্ধু মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেন বাবা।

২০ জানুয়ারি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মেয়ে পারুল হত্যার এমন লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত বিবরণ দেন কুদ্দুছ খাঁ। তিনি এখন কারাগারে বন্দি। তার তথ্য তুলে ধরতেই আজ ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি।

পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পারুল সব ভাইবোনের মধ্যে মেধাবী ছিল। স্কুলে তার রোল নাম্বার ছিল ২। দেখতেও ছিল সুন্দরী। বাবা কুদ্দুসের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে শিক্ষিত করবেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা ক্ষুব্ধ হন। তখন থেকেই কুদ্দুসের পরিকল্পনা ছিল মেয়ে তাকে যে অসম্মান করেছে, তাতে তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মেয়ের বিয়ের তিন বছর পর সেই সুযোগ পেয়ে তিনি তার বন্ধুর সহযোগিতায় মেয়েকে হত্যা করেন। কুদ্দুসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোকাদ্দেছকে গ্রেফতার করা হয়।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মেয়েকে হত্যার পর কুদ্দুসের মধ্যে আরেকটা বিষয় কাজ করছিল যে তার মেয়ের এই পরিণতির জন্য নাছির (পারুলের স্বামী) দায়ী। তাকেও শাস্তি দিতে হবে। তাই মেয়ের জামাইকে ফাঁসাতে একের পর এক মামলা দায়ের করেছেন তিনি। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই প্রতিবেদন দেয়। মেয়ের বাবাও বারবার নারাজি দেন।

পিবিআইপ্রধান জানান, পারুলের বাবা শুরুতে অপহরণ ও গুমের মামলা করেন। পরে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন তিনি। সেই মামলার তদন্তভার আবার পিবিআই পায়। এরপর তদন্তে নেমে বাবা কুদ্দুসের করা সাধারণ ডায়রিতে (জিডি) দেওয়া একটি মোবাইল ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়। মেয়েকে হত্যার পর নাছিরকে শাস্তি দিতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মামলা চালিয়েছেন কুদ্দুস। এজন্য নিজের জমিও বিক্রি করেছেন তিনি।
 

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031