৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সহজ শর্তে ঋণের টোপ, চোরাই মোবাইল পাচার হয় বাংলাদেশ।  

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ২৯, ২০২২
সহজ শর্তে ঋণের টোপ, চোরাই মোবাইল পাচার হয় বাংলাদেশ।  

 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট কলকাতা: দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে চুরি-ছিনতাই হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন চোরাপথে যেত বাংলাদেশ। এখন অন্য উপায়ে যাচ্ছে। এই মোবাইলগুলোই জঙ্গি গোষ্ঠীর স্লিপার সেলের সদস্যদের হাতে যাচ্ছে কিনা, সেটি তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশ।

রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগে চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের ব্যাপারে অভিযোগ এলে আইএমআই নম্বর অনুযায়ী টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা হতো। সে অনুযায়ী, মোবাইল কোথায় আছে জানা যেত। অনেক সময় বাংলাদেশে মোবাইলের উপস্থিতি পাওয়া যেত। বহুক্ষেত্রে কোম্পানির সহযোগিতায় সেসব ফোন নিষ্ক্রিয় করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী চোরা মোবাইলের চালান আটকাতে সব সময় সচেষ্ট। তাদের মাধ্যমেই সীমান্ত পার হওয়া অবৈধ ফোন বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ সরকার।

কিন্তু এখন ভিন্ন উপায়ে ফোনের চোরাচালান করলে কারবারিরা। জানা গেছে, প্রান্তিক-গরিব মানুষকে টার্গেট করে অপরাধীরা নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। মূলত, গরীব মানুষকে ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নেয় কারবারিরা। সে তথ্য দিয়ে কেনা হয় বিভিন্ন ব্যান্ডের স্মার্ট ফোন। মাসিক কিস্তিতে এসব ফোন কিনে চোরা পথে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে।

পুলিশ জানায়, বনগাঁ, বসিরহাট সীমান্ত এলাকাজুড়ে এ কায়দায় চলে মোবাইলের চোরাচালান। কারবারিদের নতুন এ কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ বেড়েছে রাজ্য পুলিশের। চোরা পথে এসব মোবাইল কার হাতে যাচ্ছে, সেটি জানার চেষ্টা চলছে। নাশকতা ছড়াতে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর স্লিপার সেলের সদস্যরা এই মোবাইল ফোন হাতে পাচ্ছে কিনা, সেটি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

সপ্তাহখানেক আগে বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানায় ২১ জন তাদের গুরুত্বপূর্ণ নথি গড়মিলের তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন। তাদের দাবি, কোনো মোবাইল তারা কেনেননি। কিন্তু তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইলের কিস্তি প্রতিনিয়ত পূরণ হচ্ছে। কারও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলে কিস্তির টাকা জমা পড়ছে না। তখন বাড়িতে অভিযান চালায় ব্যাংকের এজেন্ট। অভিযোগকারীদের কেউ হকার, কেউ রিকশাচালক। অন্যের বাড়িতে কাজ করা নারীরাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, এসব ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জেনেছে, অসীম মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি দুর্গাপূজার কিছুদিন আগে অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি সহজ শর্তে, কম সুদে ভুক্তভোগীদের লোন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। রাজি হলে তিনি ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে আধারকার্ড, ব্যাংকের তথ্যসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। ব্যাংক থেকে লোন পাশ হলে সে টাকা চলে যেত নির্দিষ্ট মোবাইল বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে। শো-রুমে গিয়ে ফোন সংগ্রহে করে নিত অসীমের লোকজন।

অভিযোগকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে যে অর্থ লোপাট হয়েছে, তদন্তে নেমে সে ব্যাপারে আগে তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। জানা গেছে, অসীম মণ্ডল ভুক্তভোগীদের নথি সংগ্রহ করে অন্তত ২০০ স্মার্ট ফোন কিনেছেন। মনোজিত গায়েন নামে একজনও এ কারবারে জড়িত। এরপর খোঁজ চালিয়ে কয়েকদিন আগে বনগাঁ এলাকা থেকে অসীম ও মনোজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেরা করতেই বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় দুই পাড়ে মোবাইল চোরাচালানকারীরা এ চক্র পরিচালনা করে। অন্যেরে নামে মোবাইল কিনে তা বাংলাদেশ পাচার করে এ চক্র। গত একমাসে প্রায় ৪০০ স্মার্ট ফোন অবৈধভাবে কিনে চোরা পথে পার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। অসীম ও মনোজিতের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি র‌্যাকেট জড়িত। তাদের মাধ্যমে কাদের হাতে চোরা মোবাইল পৌঁছচ্ছে, সেটি বের করাই এখন কলকাতা পুলিশের চ্যালেঞ্জ।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2024
T W T F S S M
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930