অভিযোগ ডেস্ক : ব্যাটে-বলে ধুন্ধুমার লড়াই, রোমাঞ্চকর পট পরিবর্তন আর টান টান উত্তেজনা- সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হাতে রচিত হলো বিশ্বজয়ের অমর ইতিহাস। আইসিসি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ২০২০ আসরের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করলো খুদে টাইগাররা।
হোক যুব দল, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ জিতেছে, ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছে। এই উৎসবে কোন বাধন থাকা মানা। এ আনন্দ সীমানাছাড়া। আকবররা পেরেছেন, বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বজয়ের স্বাদ। এই উল্লাসে রঙ ছিটানো হবে। এই জয়ে চারপাশ আলোকজ্জ্বলতায় ভরবে।
কত প্রশ্ন ডালপালা মেলেছিল ফাইনালের আগে। কত শঙ্কা জমেছিল মনের কোণে। ‘ভারতজুজু’ নামের এক অস্বস্তি ভর করেছিল হৃদয়ে। এ দীর্ঘশ্বাসের কি শেষ নেই কোথাও? এই ব্যথার কি সমাপ্তি নেই আদৌ? এ যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তি কোথায় যাবে পাওয়া? এই না পাওয়ার বেদনা কোথায় যাবে ভুলা? এ হাহাকারের ইতি কি নেই সত্যি? ভারতকে হারানোর মন্ত্রটা কি জানা হবে না কোথাও? এমন সব প্রশ্ন চিহ্ন উবে গেছে। আকবর আলীরা ভারতকে হারিয়েছে। বিশ্বজয়ের মালা পড়িয়েছে।
অবশেষে আকবররা পেরেছেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ঘরে তুলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা। তাই তো রাকিবুল জয়ের রানটা নিতেই সবার ভৌ দৌঁড়। পতাকা হাতে ঝাঁপটে ধরেছেন একে অপরকে। আকবর আলী স্টাম্পটা বুগলে নিয়ে জানান দিয়েছেন, ‘আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান বিশপে গলায় শোনা গেছে ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী উৎসবের নগরী হবে’। উচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চটা সঙ্গী করে মাঠে ঢুকে পড়ে। রুদ্ধশ্বাসে ফাইনালের শেষে এমন উদযাপন তো বাধ না মানা।
ম্যাচের একেবারে শুরুটা বাংলাদেশের। ভারতকে চেপে ধরে সপ্তম ওভারেই স্কোরকার্ডে ৯ রানে থাকতেই প্রথম উইকেট তুলে নেয়া, ফাইনালের একাদশে সুযোগ করে নেয়া অভিষেক দাসের কল্যাণে। এরপর খানিক কক্ষপথে ফেরার চেষ্টা ভারতের, তীলক বার্মাকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের সংগ্রামে জয়ী যশাওয়ালের। বার্মাকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন সাকিব, ভাটা পড়েছে ভারতের রানের চাকায়। তবে দমে যাননি যাশওয়াল। ৮৮ রানে তানজিদ হাসানের ক্যাচ বানিয়ে তাকে আউট করেছেন শরিফুল ইসলাম।
এরপর ছন্দপতন ভারতের। পথ হারানো। বাংলাদেশের বোলারদের জেগে ওঠা। ভারতের ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করা। যাশওয়াল আর বার্মার পর দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন একজন, জুড়েল। ব্যস, ওই তিনজনই। আর কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ভারত তাতে গুঁটিয়েছে ১৭৭ রানে।
লক্ষ্যটা বড় না। আকবরদের তো তা টপকে যাওয়ার কথা সহজেই। হলো না। রবি বিষ্ণু প্রতিরোধ গড়েছেন। একাই তুলে নিয়েছেন চার ব্যাটসম্যানকে। দম আটকেছে, বারবার জেগেছে হেরে যাওয়ার শঙ্কা। তা হতে দেননি আকবর আলী। নিজের মর্ম বুঝিয়েছেন, ঠাণ্ডা মাথায় ফিরেছেন ম্যাচ জিতিয়ে। তাকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সঙ্গ দিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। বল হাতে ঝলক দেখানো রাকিবুল অভয় দিয়েছেন।
বীরচিত ইনিংস আকবর জিতিয়েছেন দলকে। ঠাণ্ডা মাথায় মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে খুন করেছেন প্রিয়াম গার্গদের হৃদয়, ঘটিয়েছেন রক্তক্ষরণ, চোখ ভাসিয়েছেন জলে। ৭৭ বলে ৪ চারে ১ ছক্কায় করেছেন ৪৩ রান। হ্যামস্ট্রিকে চোট পেয়ে দুই দফায় মাঠে নেমে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ করেছেন ওপেনার তানজিদ হাসান ইমন।
পচেফস্ট্রুম থেকে তাই তো বাংলার আনাচে-কানাচে জয়ের গল্প বলা হয়েছে।
ঢাকার ব্যস্ত সড়কে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থেকে এই জয়ে অনেকে কেঁদেছেন হয়তো। কেউ হয়তো অভিজাত জায়গায় বসে মুচকি হেসে জয়োল্লাস করেছেন। যে যেভাবেই উদযাপনে মাতুক, পুরো দেশ ভেসেছে উৎসবের বৃষ্টিতে। দুচোখে স্বপ্ন এঁটেছেন, ভালোবাসায় বুক ফুলিয়েছেন। হয়তো মনে মনে ভেবেছেন, এমন দিন আসুক আরও বড় মঞ্চে।