৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

নজিরবিহীন অধিবেশন তর্জন-গর্জনই সার, মমতা সরকারের লেখা বাজেটই পড়লেন ধনখড়

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০
নজিরবিহীন অধিবেশন তর্জন-গর্জনই সার, মমতা সরকারের লেখা বাজেটই পড়লেন ধনখড়

অভিযোগ ডেস্ক : গত ৭২ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের বাজেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমার মনমতো না হলে আমি বাজেট ভাষণে আমার বক্তব্যই বলব। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এক ঐতিহাসিক বাজেট অধিবেশনের সূচনা দেখবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতা সরকারের তৈরি করে দেয়া বাজেটের প্রারম্ভিক বক্তব্যই পড়লেন রাজ্যপাল।

 

ঐতিহাসিক না হলেও, বেশ কিছু নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইলো পশ্চিমবঙ্গের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন। রাজ্যপালের এই ভাষণ নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা এতটাই বেড়েছিল যে ওইদিন সকালেই বিধানসভায় জানিয়ে দেয়া হয়, অধিবেশন চলাকালীন কোনও মিডিয়া অধিবেশন কক্ষে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ সরকারপক্ষ এবং রাজভবন উভয় পক্ষই একরকম ধরেই নিয়েছিল, রাজ্যপালের বক্তব্যে সরকারের লিখে দেওয়া বয়ানের বাইরে কিছু থাকবেই। সে ক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই শাসক দলের প্রতিবাদও থাকবে। ফলে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ প্রথমেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

 

এমনটা মনে হওয়ার যথেষ্ট সঙ্গত কারণও ছিল। সাংবিধানিক প্রথামতো, রাজ্যপাল কোনও অধিবেশনের সূচনায় রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেয়া ভাষণই পাঠ করেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাজভবন এবং মমতা সরকারের মধ্যে যে রকম ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে রাজ্যপাল যে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়বেন না, তা বোঝা গিয়েছিল। তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন রাজ্য্যপালও। একই সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলও স্পষ্ট করে দিয়েছিল, রাজ্যপালকে সরকারের তৈরি করে দেয়া ভাষণই পাঠ করতে হবে।

 

সম্প্রতি একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল দক্ষিণ ভারতের বাম-শাসিত রাজ্য কেরলেও। সেখানে বাজেট অধিবেশনে সে রাজের রাজ্যপাল সরকারের তৈরি করে দেয়া বয়ানের তোয়াক্কা না করে একের পর এক অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে গিয়েছিলেন এবং কোথাও কোথাও নিজের মতও বলে গিয়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে মাত্র কয়েকমাস আগেই তোলপাড় হয়েছিল ভারতের রাজনীতি। ফলে মনে করা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গেও একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন রাজ্যপাল। কেননা মমতা সরকারের লিখে দেওয়া বক্তব্যে মোদি সরকারের বিরোধিতা থাকবেই। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপাল ( যিনি এক অর্থে দিল্লির সরকারের প্রতিনিধি) তা পাঠ না করে উল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরোধিতা করতে পারেন। এমনিতেই দু’পক্ষের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। প্রতি মুহূর্তেই রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করতেই অভ্যস্ত রাজ্যপাল ধনখড়। কিন্তু বাস্তবে যা হল তাকে বলা যেতে পারে পর্বতের মূষিক প্রসব। রাজ্যপাল এলেন। যাবতীয় প্রথা ভেঙে বিধানসভার স্পিকারের ঘরে গিয়ে আধ ঘ্ণ্টা আলোচনাও করলেন স্পিকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। এরপর ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা সরকারের আমলারা যা লিখে দিয়েছিলেন, তাই লাইন বাই লাইন পড়ে গেলেন। সাংবিধানিক প্রথা মেনে যা হওয়ার ছিল তাই হল।

 

রাজ্যপালের বক্তব্যের পর তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধানসভার স্পিকার বিমান মুখোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক বাজেট শুরু হবে আগামীকাল (শনিবার থেকে)। এরপরই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধী নেতারা। তারা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করলেন, আবার প্রমাণ হল মোদি –মমতার গোপন বোঝাপড়া। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক আব্দুল মান্নান অভিযোগ করলেন, রাজ্যপালের ভাষণে এমন কিছু লেখাই ছিল না, যা নিয়ে জগদীপ ধনখড় আপত্তি করতে পারতেন। মোদি সরকারের আ একটা কথাও লেখা ছিল না সেখানে। ফলে রাজ্যপালের আপত্তি করার প্রশ্নই ওঠে না।

 

আব্দুল মান্নান বলেন, আজ সকাল পর্যন্ত যেখানে বোমা ফাটানো কথা বলা হচ্ছিল, সেখানে দুপুরের মধ্যে পুরো পরিস্থিতিটা পাল্টে গেল কী করে? তাহলে কি কোথাও কোনও সমঝোতা হয়ে গেল? পশ্চিমবঙ্গে শিল্প তথা কর্মসংস্থানের অবস্থা ভয়াবহ। উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের মৃতপ্রায় অবস্থা। এ সব তো ছিলই, সর্বোপরি, সিএএ, এনআরবি এবং এনআরসি নিয়ে সারা দেশ উত্তাল, অথচ রাজ্য সরকারের বাজেট ভাষণে তার তেমন উল্লেখই নেই! বিশেষ করে যে সরকার সিএএ বিরোধী প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করিয়েছে? দিল্লির সরকারের সেটুকু সমালোচনাই করা হয়েছে, যা না করলেই নয়। আর তা এটাই নির্বিষ, যে জগদীপ ধনখড়ের মতো স্পর্শকাতর রাজ্যপালও তাতে আপত্তির কিছু খুঁজে পেলেন না?

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031