৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দেশের প্রথম তারবিহীন শহর হচ্ছে সিলেট!

অভিযোগ
প্রকাশিত জানুয়ারি ৭, ২০২০
দেশের প্রথম তারবিহীন শহর হচ্ছে সিলেট!

ফকির হাসান , সিলেট থেকে ফিরে :

খুঁটি নেই। একসঙ্গে বিদ্যুতের তারও নেই। নেই তারের ঘিঞ্জি পরিবেশ। তারপরও আলো ঝলমলে সিলেট! এ যেন সিলেটের আরেক নতুন সৌন্দর্য, নতুন পরিবেশ। এমন দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের দেখা মিলবে কেবল সিলেটেই!

 

সারাদেশে এই প্রথম সিলেটের বিদ্যুৎ লাইন গেলো ভূগর্ভে। আর সিলেট নগরের হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ সড়ক এই জঞ্জাল থেকে প্রথম মুক্ত হলো। অথচ একদিন আগেও প্রতিটি খুঁটিতে বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে মাকড়সা জালের মতন ঝুলছিলো টেলিফোন লাইনসহ অন্যান্য ক্যাবল লাইন। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রথম ভূগর্ভে দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে।

 

বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের জঞ্জাল মুক্ত হওয়ায় বাড়তি সৌন্দর্য বেরিয়েছে এই এলাকার। ফলে সিলেটকে ডিজিটাল সিটি করার লক্ষ্যে কাজ একধাপ এগোলো বলে মনে করছেন নগরের বাসিন্দারা।

বিদ্যুৎলাইন মাটির নিচে নেওয়ার পর গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) দিন থেকে রাত অব্দি খুঁটি সরানোর কাজ করেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। এরপর বেরিয়ে আসে খুঁটিহীন নগরের সৌন্দর্য।

 

আর সরকারের এই উদ্যোগকে আরেকটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সিলেটের মানুষ। এই সৌন্দর্যকে ধারণ করতে ছবি তুলে অনেকে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন। প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মন্তব্য।

 

আহাদ আম্বিয়া খোকন নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, পূণ্যভূমি সিলেট থেকে শুরু হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নগরপিতাকে ধন্যবাদ জানান।

 

নগরের দরগাহ গেট এলাকার বাসিন্দা আশরাফ হাসান কামরান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, সিলেট শহরের দরগাহ গেট এলাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিবিহীন হওয়াতে ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

 

প্রকল্প পরিচালক কে এম নাজিম উদ্দিন বলেন, এটা সিলেটবাসীর জন্য পরম সৌভাগ্যের। সিলেটের মানুষের জন্য যেটা করা দরকার আমরা একাগ্রতার সঙ্গে করে যাচ্ছি। সিলেটের মেয়রও দিনরাত উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করছেন।

 

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটকে স্মার্টনগরে রূপ দিতে তারের জঞ্জাল (বৈদ্যুতিক লাইন) পাতালে নেওয়া হচ্ছে। আর পাতাল বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের ফলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে সিলেটবাসী। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি ছিলো বলেন তিনি। এ প্রকল্প শেষ হলে পর্যাক্রমে পুরো নগরীর বৈদ্যুতিক লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি নগরের আম্বরখানায় ভূগর্ভ বৈদ্যুতিক লাইন কাজের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্টের অর্থায়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই প্রকল্প বাস্থবায়ন হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরে ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৫শ আরএম স্কয়ার ক্যাবল ক্যাপাসিটির তার নগরের ইলেক্ট্রিক সাপ্লাইস্থ বিদ্যুৎ সাবস্টেশন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে যাবে চৌহাট্টায়। সেখান থেকে একটি লাইন যাবে নগরীর জিন্দাবাজার হয়ে সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত। আরেকটি লাইন যাবে চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার হয়ে ওসমানী হাসপাতাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। এরপর দীর্ঘায়িত হয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা।

 

প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ২০৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটে বিদ্যুতের ডিভিশন-১,২,৩,৪ এলাকায় নয়টি সাবস্টেশন হবে। বিভাগে অত্যাধুনিক অন্তত ২৫টি সাবস্টেশন হবে।

 

নগরের ভূগর্ভ লাইনসহ সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে ৩৩ কেভি ২ কিলোমিটার, ১১ কেভি ২৫ কিলোমিটার, চার কেভি ১৮ কিলোমিটার ভূগর্ভ লাইন, ১১ দশমিক ৪ কেভি উপকেন্দ্র, বিদ্যুৎবিভাগ সিলেটের চারটি ডিভিশনে ট্রান্সফরমার স্থাপন, ১১ কেভি লাইন ২০২ কিলোমিটার নতুন, সংস্কার ৩৫৬ কিলোমিটার, ১১ দশমিক ৪ কেভি নতুন ১৭৭ কিলোমিটার, সংস্কার ২২৮ কিলোমিটার, চার কেভি নতুন লাইন ৩৪৯ কিলোমিটার এবং ৩৫০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031