২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দীর্ঘ ৫৭ বছর পর বাংলাদেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন; ড. শাহাজাহান আলম

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
দীর্ঘ ৫৭ বছর পর বাংলাদেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন; ড. শাহাজাহান আলম

স্টাফ রিপোর্টার : অধ্যক্ষ ড. শাহজাহান আলম সাজু সাধারণ সম্পাদক,স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ,ফাস্ট সেক্রেটারি-ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব টিচার্স ইউনিয়ন (WFTU), বলেন বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ০৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে এবং ইউনেস্কোর তত্বাবধানে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন দোশের শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের এক সভায় প্রতি বছর ০৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সভায় শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক একটি সুপারিশমালা গৃহীত হয়। ‘আইএলও’ এই সুপারিশমালা অনুসমর্থন করে। এই সুপারিশমালাটি ও মুলত বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য রচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ও আইএলওর ১৯৭৭ এবং ১৯৮৮ সালে শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক আরো দুইটি ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। ফলে সকলস্তরের শিক্ষকদের অধিকার,মর্যাদা ও কতৃত্ব সমন্বয়ে ইউনেস্কো – আইএলও একটি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করে। এইসব নীতিমালা বাস্তবায়নে দায়িত্ব বর্তায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর।

০৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি উদ্যোগে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে থাকে। তবে আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত না হলেও কিছু শিক্ষক সংগঠন ও দুই একটি এনজিও দিবসটি পালন করে থাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একটি বিশেষ দিনে শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মিষ্টিমুখ করান এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকে। শিক্ষকরাও তাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ করেন। শিক্ষকদের সম্পর্কে জাপানের প্রবাদে বলা হয়ে থাকে “Better than a thousand days of delight study is one day with a great teacher.” বিশ্বখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে ‘যারা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকে ও অধিক সম্মাননীয়’।

বাংলাদেশে বিভন্ন সংকট, নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে। এদেশের শিক্ষকদের নানাবিধ প্রতিকুলতা ও বঞ্চনার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। এক সময় এদেশের শিক্ষকদের কোন বেতনই দেওয়া হতো না। এক সময় শিক্ষক বলতে বুঝাতো জীর্ণশীর্ণ চেহারা,চোখে ভাঙা ফ্রেমোর ফিতা ঝুলানো চশমা,পড়নে মলিন পাজামা পাঞ্জাবি কিংবা লুঙ্গি, পায়ে ছেঁড়া জুতা কিংবা সেন্ডেল,হাতে তালি দেওয়া ছাতা। তখন শিক্ষকদের সম্মান জানাতে শিক্ষার্থীদের বাড়ির শাক সবজি, ফলমূল, গাভীর দুধ, পুকুরের মাছ শিক্ষকদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হতো । বৃটিশ শাসনামলে ১৯৪৪ খ্রি.মাসিক পাঁচ (০৫) টাকা ভাতা চালু হয় । কালের বিবর্তনে আমাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা ও বেড়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের গত ১৪ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তথাপিও এখনো শিক্ষা খাতে নানাবিধ সমস্যা এবং শিক্ষকদের মর্যাদার ক্ষেত্রেও অনেক ঘাটতি রয়েছে।

মর্যাদায় সাথে শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে । একজন শিক্ষক যদি তাঁর জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে নুন্যতম আর্থিক সাপোর্ট না পান তখন তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য টিউশনি বা পার্টটাইম অন্য কোন পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে হতে বাধ্য হন। । অনেক ক্ষেত্রে সেটা হয়ত তাঁর শিক্ষকতা পেশা বা সম্মানের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয়।

অন্যদিকে শুধুৃাত্র আর্থিক সচ্চলতার উপরই একজন শিক্ষকের মর্যাদা নির্ভর করে না। শিক্ষকতা পেশা যেহেতু জ্ঞান চর্চা বা জ্ঞান বিতরণের। তাদের রাষ্ট্র বিনির্মাণ কিংবা পরিচালনার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সেটাও বিবেচ্য বিষয় । একসময় বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল চোখে পড়ার মত। সধীতাত্তোর বাংলাদেশে শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান সহ অনেক শিক্ষকই জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমানে জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব একবারেই নগন্য। অতিসম্প্রতি এক জড়িপে জানা যায় জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ৬০%। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্য সভা এবং বিধান সভায় শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব অন্যান্য যে কোন পেশার চেয়ে বেশি। উন্নত বিশ্বে তো আরো বেশি।

আজ থেকে ৫৭ বছর পুর্ব থেকে সারা বিশ্বে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে দিবসটির কোন সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দীর্ঘদিন যাবৎ রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের দাবি জানিয়ে আসছিল কিন্তু কোন সরকারই রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে এই দিবসটি পালনের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। শিক্ষা বান্ধব বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষকদের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে গত সোমবার মন্ত্রী পরিষদের সভায় এবার ৫ অক্টোবর থেকে সারা বিশ্বের সাথে একই দিনে বাংলাদেশেও রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্য বিষয়টি অনেক গর্ব ও আনন্দের। সুদীর্ঘ ৫৭ বছর পর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকার বিশ্ব শিক্ষক দিবসের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে এদেশের শিক্ষক সমাজের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদেশের সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী সহ মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

তবে সম্মানিত শিক্ষকগণকেও মনে রাখা প্রয়োজন শিক্ষকতা পেশা শুধু চাকরি নয়। শিক্ষকতা একটা মহান ব্রত। তাদের চাল চলন, আচার আচরণ অবশ্যই সকলের নিকট অনুকরনীয় ও শিক্ষক সুলভ হতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2023
T W T F S S M
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930