৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপতি প্রস্তাব বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করতে পারে : মোমেন

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৮, ২০২২
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপতি প্রস্তাব বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করতে পারে : মোমেন

অনলাইন ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বলেছেন, জাতিসংঘে (ইউএন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাব দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল জাতির মধ্যে টেকসই শান্তি ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধার মানসিকতা তৈরি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ নামে পরিচিত একটি প্রস্তাবনা করেন, যেখানে বর্ণ, গোষ্ঠি, বংশ পরিচয়, জাতি বা ধর্ম নির্বিশেষে অন্যদের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধার মানসিকতা তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদি আমরা এই ধরনের মানসিকতা তৈরি করতে পারি তবে বিশ্বজুড়ে টেকসই শান্তি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে স্থল ও সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে পানির হিস্য ভাগাভাগির মত বাংলাদেশের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান করেছেন।

তিনি (শেখ হাসিনা) দেশের প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার পুরুষ ও নারীকে বিদেশে অনেক মিশনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ একটি ব্র্যান্ড-নাম।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী- উদযাপনের অংশ হিসেবে দুই দিনের সম্মেলনের আয়োজন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের অয়োজক কমিটির সভাপতি এবং জাতীয় সংসদ (জেএস) স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।

মোমেন বলেন, শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন পরোপকারী সমাজকর্মী। তাঁর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তাঁর আজীবন সংগ্রাম ছিল শান্তিপূর্ণভাবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে বাঙালী জাতির সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অবিসংবাদিত নেতাতে রূপান্তরিত করেছিল। মন্ত্রী বলেন, তাকে (বঙ্গবন্ধু) তাঁর জনগণ ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছে যার অর্থ বাংলার বন্ধু।

মোমেন ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘শান্তির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ অঙ্গীকার এই উপলব্ধির জন্য যে কেবল মাত্র শান্তির পরিবেশই আমাদের দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, নিরক্ষরতা এবং বেকারত্বের প্রকোপ মোকাবেলায় আমাদের সমস্ত শক্তি ও সম্পদকে একত্রিত ও মনোনিবেশ করতে সক্ষম করবে।’

তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করেন, ‘মানবজাতির বেঁচে থাকার জন্য শান্তি অপরিহার্য। এটি বিশ্বজুড়ে পুরুষ ও মহিলাদের গভীরতম আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। তবে, সহ্য করার জন্য শান্তি অবশ্যই ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে হতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করেছিলেন যে বাংলাদেশ শান্তির দেশ হবে যা সারা দেশে শান্তির চর্চা উদ্ভাসিত করবে। মন্ত্রী বলেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির নকশা করেছেন, যার মূল নীতি হচ্ছে ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’।

দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের অনেক অংশের মানুষ অত্যাচার, নিপীড়ন, ঘৃণা ও বঞ্চনার বিষ, সহিংসতা এবং যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা একা সহিংসতা এবং নৃশংসতা শেষ করতে পারি না’।

রোহিঙ্গাদের উপর বা ফিলিস্তিনে যে সহিংসতা ও নৃশংসতা চালানো হয়েছে তা মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু এগুলো মানবসৃষ্ট, তাই, আমার একটি স্বপ্ন আছে, আপনাদের সক্রিয় সমর্থনে আমরা একদিন সহিংসতা, যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসের অবসান ঘটাতে পারি, কোন শিশু পরিবার ছাড়া থাকবে না, কোন সৈনিক তার অস্ত্র তুলে অন্য ব্যক্তির জীবন নেবে না, সর্বনাশা বোমা এবং ঘৃণ্য মন আশা করি বন্ধুত্ব এবং শান্তির ফুল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।

বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সকলকে এই অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে, মোমেন বলেন, ‘সারা দেশে ঘৃণা, অজ্ঞতা এবং সহিংসতার বিষ দূর করতে আমাদের এই অনুষ্ঠানে উঠে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায় একসঙ্গে হাঁটতে হবে। আসুন স্বপ্ন দেখি এবং সবার জন্য একটি উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন দেখি।

অনুষ্ঠানে ছয়জন অতিথি বক্তা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট নোবেল বিজয়ী হোসে রামোস ওর্তা, রাজনীতিবিদ এবং ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল, রেল, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু, মিশরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আরব লীগের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আমর মুসা, বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরাম ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তান শ্রী দাতো সেরি সাইদ হামিদ আলবার এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু এনডিরিটুও উদ্বোধনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি এবং সশরীরে বক্তব্য রাখেন।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2024
T W T F S S M
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930