রোখশানা রফিকঃ-
আজকাল অদ্ভুত এক কো ইন্সিডেন্সের মতো যেখানেই প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছি, সংশ্লিষ্ট অফিসারের নাম হচ্ছে তারেক, শতকরা ৮০% ক্ষেত্রে। ( টিনের চালে কাক, আমি তো অবাক!)
এরফলে হচ্ছে কি, ব্যাংকার তারেক প্রয়োজনীয় কাজে ফোন দিলে তাকে বলছি বিল্ডিং বানানোর কথা। ইঞ্জিনিয়ার তারেক ফোন দিলে তাকে বলছি লোনের কথা। বন্ধু তারেক ফোন দিলে বলছি, ” জি ভাই, রোখশানা রফিক বলছি, আস সালামু আলাইকুম “।
কখনো ভুলে একজনের উপর জমে থাকা ক্ষোভ ঝাড়ছি আরেক জনের উপর। একজনের কাছে বলতে চাওয়া মজার কথা ভুল করে বলছি আরেক তারেক কে, যার সাথে একদম সৌজন্য মূলক সম্পর্ক…নামের এমনই মাহাত্ম্য যে উলটা & পালটা চলছেই!
অথচ এইতো কিছু রোডের দূরত্বে থাকতেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়াতেন, সেই তারেক শামসুর রেহমান স্যার।
যিনি রাজনৈতিক কৌশলের জটিল বিষয় গুলো পানির মতো সহজ করে ব্রেনে ঢুকিয়ে দিতেন ক্লাসেই। বিশেষ করে SAARC এর খুঁটিনাটি আজও এমন মুখস্থ স্যারের পড়ানোর গুণে যে, যে কোনোদিন SAARC বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিজেকে দেখতে পেলে আশ্চর্য হবো না, তা হোক স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে।
আধুনিক মানুষের জীবন যাপনের ধরন এমনই, স্যার মারা যাবার পর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেলাম, এতো কাছাকাছি থাকতেন। দাফন হয়ে যাওয়ার পর জানতে পেলাম, এখানেই জানাজা হয়েছে আজ বাদ আসর।
অথচ, আমাদেরকে শিক্ষিত করে তোলার ভার নেয়া একাকী মানুষটির সাথে হয়তো কন্যার স্নেহ নিয়ে কোন একটি বিকেলে এক কাপ কফির সঙ্গী হতে পারতাম অন্ততঃ। হয়তো নিজ হাতে রাঁঁধা কোনো একটি খাবার নিজেই পৌঁছে দিতে পারতাম পিতৃসম শিক্ষকের ঠিকানায়।
হয় না, এসবের কিছুই হয়ে ওঠে না আজকের যান্ত্রিক জীবনে। মিডিয়ায় ভেসে আসা পরিচিত মুখ, বাস্তবে হয়ে গেছে অচেনা। ভালো থাকুন, শ্রদ্ধেয় তারেক শামসুর রেহমান স্যার পরপারে। আল্লাহ পাক বেহেশত নসীব করুন আপনাকে, আমীন।