১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেটে রমরমা টোকেন বানিজ্য : বেপরোয়া সারীঘাটের টোকেন ফয়সল চক্র

অভিযোগ
প্রকাশিত মার্চ ১২, ২০২১
সিলেটে রমরমা টোকেন বানিজ্য : বেপরোয়া সারীঘাটের টোকেন ফয়সল চক্র

সিলেটে রমরমা টোকেন বানিজ্য : বেপরোয়া সারীঘাটের টোকেন ফয়সল চক্র

কামরুল ইসলাম লিমনঃ-
নতুন সড়ক পরিবহন আইনের পর অনেকেই ভাব ছিলেন ফয়সলের টোকেন বিক্রি বন্ধ হতে পারে। সম্প্রতি একটি অনুষ্টানে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন নম্বরবিহীন সিএনজি বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু টোকেন ফয়সল এসপির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও তামাবিল মহাসড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ফয়সলের বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযানে দু’চারটি নম্বরবিহীন অটোরিক্সা আটক হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানগুলো থেমে যায়! ফলে এই তিন সড়কে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলাচলে বাধা থাকছে না কোথাও।

 

সরেজমিন অনুসন্ধান নামে টিম। উটে আসে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও শাহপরান উপজেলার ৪ সড়কের টোকেন বাণিজ্যের প্রদান ফয়সল সহ টোকেন সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম। জানা গেছে, এই চার সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী। আর অবৈধ গাড়িগুলো চলছে বিশেষ টোকেন’র মাধ্যমে। টোকেন বাণিজ্য করে মাসে লাখ লাখ ও বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে টোকেন ফয়সল সিন্ডিকেট। অবৈধ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সাহস যেন কারই নেই!

টোকেন সিন্ডিকেট প্রদান ফয়সল উরফে টোকেন ফয়সল নামে ব্যাপক পরিচিতি। টোকেন ফয়সল সিলেট জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ শাখার অন্তর্ভুক্ত সারীঘাট সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক।

এই টোকেন ফয়সলের চক্রের ইশারায় ওই চার সড়কে দীর্ঘদিন দিন থেকে চলছে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা। পরিচিতি শুধু টোকেন। তবে, টোকেন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফয়সল।

জানা যায়, এই সড়কগুলোতে রেজিস্টেশনবিহীন অটোরিক্সা চলতে প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সাকে প্রতি মাসে কিনতে হয় ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকার টোকেন। আদায়কৃত এই চাঁদা থেকে নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশনবিহীন অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলের জন্য বিআরটিএ এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করা হয়ে থাকে বলে বিশ্বস্থ একটি সূত্র তা নিশ্চিত করেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টোকেন বাণিজ্যের মূলহোতা ফয়সল ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের কয়েকজন মিলে তাদের বড় একটি সিন্ডিকেট। এই তিন উপজেলার সব ক’টি সড়কের নিয়ন্ত্রকরা রেজিস্টেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা (অনটেষ্ট) গাড়িতে টোকেন লাগিয়ে দিলে সেটি চলাচলের জন্য বৈধ হয়ে যায়! সিএনজি অটোরিক্সা তাদের মাধ্যমে চলাচলে প্রথমে এককালীন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সার জন্য একটি টোকেন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টোকেন অটোরিক্সার সামনের গ্লাসে লাগিয়ে দিলে গাড়িগুলো সড়কে চলতে আর কোনো অসুবিধা থাকেনা। এই উপজেলাগুলোতে এমন অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার যা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নতুন সিএনজি চালিত অটোরিক্সার নিবন্ধন বন্ধ থাকায় এই চার উপজেলার সব সড়কের নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলাচলের জন্য টোকেন বাণিজ্য গড়ে তুলেন টোকন ফয়সল ও তার বাহিনী। শুধু তাই নয় টোকন ফয়সল দাবী করেন সিলেটের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশের সব সেক্টরে টোকেন বাণিজ্য করে আদায়কৃত টাকার ভাগ দিয়েই টুকেন ব্যবসার অনুমতি নিয়েছে সে। তাই তার দেয়া পরিচিতি টোকেন নিতে পারলেই জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট রোডে অবৈধ নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলতে বাধা থাকেনা। অন্যথায় কেউই রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা চালাতে পারেবে না বলে জানায় কয়েকজন চালক।

তবে, থানা পুলিশের সাথে এব্যাপারে কথা হলে তারা টোকেন বাণিজ্যের বিষয়টি জানেন না বলে সাফ জানিয়েছেন তারা।

তবে দেখা গেলো টোকেন ফয়সল ও তার বাহিনীর টোকেনের বাস্তব শক্তি। অনুসন্ধান থেকে ফেরার পথে শাহপরান (রহ.) থানাধীন সদর-জৈন্তিয়া সীমান্তে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের সামনে পুলিশ সিগনাল দেখে এখানে ঘন্টা খানেক থেমে যায় অনুসন্ধানি টিম। ঘন্টাব্যাপী দেখা যায়, একের পর এক নম্বরবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা সিলেট সদর উপজেলাধীন ‘পীরের বাজার ও সুরমা গেইট’ সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নিতে আসা অটোরিক্সাগুলো পুলিশ সিগনালে পড়ে। কিন্তু সিএনজিতে থাকা যাত্রীদের তল্লাসী করে অবৈধ গাড়িগুলোর বৈধ কাগজপত্র যাচাই করা তো দুরের কথা চালককে একবার জিজ্ঞাসাও করছেন না পুলিশ সদস্যরা। শুধু সাইড করে যাচাই করা হচ্ছে বৈধ গাড়ির কাগজপত্র! ছাড় পাচ্ছে টোকন ফয়সলের টোকেন’র গাড়িগুলো! এব্যাপারে কথা বলতে এগিয়ে যাওয়ার আগেই পুলিশ চলে যায়।

এদিকে, বৈধ সিএনজি চালক সমিতির নেতৃবৃন্দরা জানান, বিআরটিএ ও প্রসাশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে সক্ষতা থাকায় এই টোকেন বাণিজ্যের হোতাদের অবৈধ এ বাণিজ্য আজো বন্ধ হচ্ছে না। এদিকে এই সব রেজিস্ট্রেশন বিহীন (অনটেস্ট) সিএনজি অটোরিক্সার টোকেন ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করে নিজেরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অন্যদিকে এই টাকা টোকেন ব্যবসায়ীরা আত্মসাৎ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031