২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

প্লাস্টিকের বোতল কি একাধিকবার ব্যবহার করা নিরাপদ…….. ? কোন কোন বোতল একাধিকবার ব্যবহার যোগ্য……. ?

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ১৬, ২০১৯

মোঃ জনি ইসলামঃ বার বার সব ধরণের প্লাস্টিক বোতলের যথেচ্ছ ব্যবহার (রি-ইউজ) মোটেই স্বাস্থ্যকরনয়, এটা আপনার জন্য ডেকে আনতে পারে বা এরই মধ্যে হয়তো ডেকে এনেছে ভয়াবহ বিপদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেক রোগ-শোক আছে যা নিয়ে টেস্টের পর টেস্ট করে যাচ্ছেন আপনি, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওষুধের পর ওষুধ বদলাচ্ছেন কিন্তু রোগ ধরা পড়ছে না। এ ধরনের রোগের পেছনে প্লাস্টিকের বিষাক্ত প্রভাব থাকতে পারে। সেইসব প্লাস্টিক যা আপনি বোতল, কৌটা, মোড়ক হিসেবে ব্যবহার করছেন হরদম।
তারপরও এ নিয়ে বাছ-বিচার করেন না অনেকে। কারণ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং সচেতনতা নেই আমাদের। অথচ,এটি খুবই জরুরি। কিন্তু, কখনও আমরা কেউ খেয়াল করিনা প্লাস্টিকের বোতলের গায়ে থাকা চিহ্নগুলো।

এসব চিহ্ন অনেকের চোখে পড়লেও জানেন না চিহ্নগুলোর রহস্য! তবে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করার আগে জেনে নিতে হবে কোন বোতল কী কাজে ও কতো দিন ব্যবহার করা যাবে। আর তা জানতে হলে অবশ্যই জেনে নিতে হবে বোতলের গায়ে বা তলায় দেয়া চিহ্নের মানে। কোন চিহ্নের কী মানে তা জানা যায় বোতলের গায়ে চিহ্নিত ত্রিকোণ প্রতীকটি দিয়ে। এই চিহ্নটি আসলে প্লাস্টিক বোতলের চারিত্রিক ইনডেক্স। এই চিহ্ন থাকলে বোঝা যায় বোতলটি বিধিসম্মতভাবে তৈরি (চিহ্ন ছাড়া বোতল আরো ভয়াবহ হতে পারে)।
এছাড়া বোতলটি ব্যবহারের জন্য কতটা নির্ভরযোগ্য বা কী ধরনের জিনিস তাতে রাখা যাবে, তা ত্রিকোণ চিহ্নের মধ্যে থাকা সংখ্যা দ্বারা বোঝা যায়।

ত্রিকোণের মাঝে ১সংখ্যা: এর মানে বোতলটি একবারই মাত্র ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া বোতলটিতে পলিথিলিনটেরেপথ্যালেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে তাও নির্দেশ করে ১ সংখ্যাটি। সাধারণত বোতলজাত পানি বা কোমল পানীয়র (কোক-পেপসি) জন্য এ ধরনের বোতল ব্যবহার হয়।
এই ধরনের বোতল বহুবার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এছাড়া এই ধরনের বোতল গরমও করা উচিৎ না- যদিও অনেকেই গরম চা, দুধ ইত্যাদি এতে রেখে থাকেন। এ ধরনের বোতলের প্লাস্টিক উপাদান গলে বা ক্ষয়ে এর ভেতরে রাখা বস্তুর সঙ্গে মিশে যায়। এই প্লাস্টিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ত্রিকোণের মধ্যে ২সংখ্যা: এটালেখা থাকলে বুঝতে হবে এ ধরনের প্লাস্টিক বোতলে ঘনপলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত শ্যাম্পু বা ডিটারজেন্ট রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের বোতল ব্যবহার হয়।

ত্রিকোণের মধ্যে ৩সংখ্যা: এ ধরনের বোতল বেশিবার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এইবোতল তৈরি হয় ‘পোলিভিনাইলক্লোরাইড’ বা ‘পিভিসি’থেকে। এতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেখা যায় ‘পিনাটবাটার’ রাখতে এই বোতল ব্যবহার করা হয়।

ত্রিকোণের মধ্যে ৪সংখ্যা: এ ধরনের প্লাস্টিক বহুবার ব্যবহারেরউপযোগী। বিশেষ করে, প্লাস্টিকের প্যাকেটে এই চিহ্নপ্রচুর দেখা যায়। সাধারণত খুব দামি বোতলেও এই চিহ্ন থাকে। বারবার ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগ এ ধরনের প্লাস্টিকে তৈরি হয়।

ত্রিকোণের মধ্যে ৫সংখ্যা: এ ধরনের প্লাস্টিক একদম নিরাপদ। আইসক্রিমকাপ, স্ট্রবাওষুধের সিরাপের বোতল অথবা খাবার বা ওষুধের কন্টেইনারে এ ধরনের চিহ্ন দেখা যায়।

ত্রিকোণের মধ্যে ৬সংখ্যা এবং ৭সংখ্যা: প্লাস্টিকের রেড কার্ড বলা হয় একে। এই ধরনের প্লাস্টিক মারাত্মক রকমের ক্ষতিকারক। কারণ, এ ধরনেরপ্লাস্টিক তৈরি হয় পলিস্টিরিন এবং পলিকার্বনেটবিসপেনল থেকে। এটি মানবদেহে মারাত্মক হরমোনজনিত সমস্যা তৈরি করে। ক্রমাগত এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।
তাই, প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারে খুবই সাবধান হতে হবে। আমাদের দেশীয় বাস্তবতায় প্রতিদিন লাখ লাখ পরিবার ব্যবহার করছে প্লাস্টিকের বোতল, কন্টেইনার, ব্যাগ। কিন্তু এর কোনটায় কী খারাপ লুকিয়ে আছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞই থেকে যাচ্ছে বিশাল জনগোষ্ঠী।
এর পরোক্ষ ফলটা হচ্ছে লম্বা লাইন পড়ছে হাসপাতাল-ক্লিনিকে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমনকি গোরস্থানে। গলিতে গলিতে গজিয়ে উঠছে ওষুধের নতুন নতুন দোকান।
উন্নত দেশগুলোতে প্লাস্টিকের ক্ষতির বিষয়গুলো সম্পর্কে জনগণ কমবেশি অবগত। এখন নিউজওয়ানের পক্ষ থেকে আমরা যতটুকু পারা গেল জানালাম- এবার আপনার দায়িত্ব, স্বজন-পরিজন, বন্ধু, সহকর্মী, এলাকাবাসীকে সচেতন করার।

বিশেষজ্ঞ মত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুরাদ হোসেন বলেন, যে প্লাস্টিক বোতলে মিনারেলওয়াটার বা অন্যকোনো পানীয় কিংবা ওষুধথাকে, সেই বোতলে লেখা নাই যে সেটার টেম্পার কতদিন থাকবে। তাতে শুধু বিএসটিআইয়ে একটি অনুমোদন দেয়, সিলমারা থাকে। কিন্তু সেটা পানির না বোতলের জন্য অনুমোদনের সিল-তা জানানেই। এই বোতলের টেম্পার সাধারণত থাকে ১ সপ্তাহ বা ১৫ দিনের। টেম্পার নষ্ট হওয়ার পর এটা ব্যাকটেরিয়া ধারণ উপযোগী হয়ে পড়ে।
এরপর যখন সেই বোতলের পানি বা তরল কেউ সেবন করে তখন বিশাল সংখ্যায় ব্যাকটেরিয়া তার শরীরে ঢুকে ক্ষতি সাধন শুরু করে। তখন নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। এর থেকে স্টোমাক ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। শরীরের অন্যান্য দিকেও এফেক্ট করতে পারে।

একই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুজিত রঞ্জন বলেন, প্লাস্টিক বোতলে রাখা তরল পদার্থ রাখার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এগুলি সচরাচর যেসব দোকানে সেল করাহয়, তারা এগুলো দেখে না। ক্রেতারাও এই বিষয়টি দেখেন না। তারা ব্যবহার করছেন দেদারসে।ফলে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারা এর কারণ বুঝতে পারেন না। শুধু বলেন,এই রোগে আক্রান্ত হইছি। রোগের কেস হিস্ট্রিও মেলেনা। কারণ, তিনি তোজানেন না যে প্লাস্টিক বোতলের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। রোগী এই সেই কারণ মন থেকে খুঁজে বলেন। এর পর দেওয়া হয় পরীক্ষার পর পরীক্ষা। কিন্তু আসল বিষয় মানে রোগের সঠিক কারণ খুব কমই জানা যায়।

শিশু বিষেজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হুসাইন মোল্লা জানান, সব ধরনের দুষণে বা প্রতি কূল অবস্থায় বাচ্চারা সহজেই আক্রমণের শিকার হয়। তাই প্লাস্টিক জাত বোতল বা মোড়কের ক্ষতিকারক প্রভাব ও তাদেরকে পর্যুদস্তুকরে বেশি। অনেক সময়ে দেখা যায় যে বড়দের খাবারের পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য যেসব প্লাস্টিকজাত মোড়কে খাবার রাখাহয় সেই মোড়ক বাবোতলগুলি ও মান সম্পন্ন থাকে না। কিন্তু তা আমাদের দেখতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে এ সবের মান। এটা গুরুতর প্রসঙ্গ, এটা নিয়ে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, এসব বোতলের টেম্পারেচার ধারণ ক্ষমতা কতটুকু, কতটুকু তাপে বা সময়ে এগুলোর নিজেদের উপাদান গলে বা আলগা হয়ে বোতলে থাকা ওষুধ, পানি বা জুসের সঙ্গে কিংবা তেলের সঙ্গে মিশে যায় তা হিসাবের আওতায় আনতে হবে। এগুলি নিয়ে রেডিও, টিভিতে প্রচারণা চালাতে হবে।এটা জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

অধ্যাপকডা. আবিদ হুসাইন মোল্লা আরও বলেন, অভিভাবক এবং শিক্ষিত সমাজ এগুলো দেখে-শুনে ব্যবহার করতেপারলে নানান রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারে। অনেক সময়ে দেখা যায় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা টেম্পার বিহীন বোতল দিয়ে ফের বোতল তৈরি করাহয়। কিন্তু সেই প্লাস্টিকটির হয়তো পুণঃপ্রক্রিয়াজাত করার মানই নেই। অথচ ওই ক্ষতিকর প্লাস্টিক দিয়ে নতুন করে বানানো কৌটায়,পাত্রে তেল-পানি ভরে তাতে বিএসটিআইয়ের সিল মারা হয়। কিন্তু তারা সত্যি কি এতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেয়েছে? আর অনুমোদন দিয়ে থাকলে বিএসটিআই কি তাযাচাই করেদিয়েছে? এ সব বোঝার ক্ষমতা সাধরণ মানুষের নেই। তাইএ সব দেখতে হয় সরকারের বিশেষ বিভাগের লোকজনকে। সমাজের সচেতন বা তথা কথিত সুশীল সমাজের। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ দেখেনা। দেখার কেউনেই হয়তো। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় শিশুরা আক্রান্ত হয় বিকলাঙ্গের মতো নানা রোগে। যার সূচনা হয় প্রথমে খুসখূসে কাশি, এরপর স্বাসকষ্ট,পরবর্তীতে কঠিন জ্বর হয়। এবং শেষ পর্যায়ে বিকলাঙ্গ বা পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে পড়ে শিশু।
ফাস্ট ফুডের দোকানে যেসব কেক খাওয়ারপ্যাকেট বা ওয়ানটাইম কৌটা রাখা হয় সেগুলো মানসম্পন্ন কিনা- সেগুলোও ফুডগ্রেড কিনা- তাও দেখার কেউ নেই। যারা এ সব দেখার দায়িত্বে আছেন- তারা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিভিন্ন রোগশোক থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও বিএসটিআই এগুলো দেখে থাকে। কিন্তু তারা কি আদৌ এই দায়িত্ব ঠিক ঠিক পালন করছে? এই প্রশ্ন তথ্যাভিজ্ঞ মহলের। এসব বিষয় জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এ গুলি নিয়ে রেডিও, টিভিতে প্রচারণা চালাতে হবে। এটা জাতীয় স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে ।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30