মোঃ আবুল হাশেম ,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের লামা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বির্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে যেতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। দুর্যোগ কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫৫টি আশ্রয়ণকেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, বমুখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল, ইয়াংছা খাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কর্মহীন রয়েছেন বিভিন্ন পেশার হাজারও মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ জুলাই দিনগত রাত থেকে মুষলধারে বর্ষণ শুরু হয়। ফলে উপজেলার নদ-নদী, খাল ও ঝিরির পানি বেড়ে প্লাবিত হয়ে পড়ে লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিঅ্যান্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপস্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজাররসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা। পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের লাইনঝিরি ও মিরিঞ্জা এলাকায় এক পাশের মাটি ধসে গেছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজ, পৌরসভা এলাকার মাস্টার পাড়া ও মধুঝিরি আনসার ভিডিপি কার্যালয় সংলগ্ন পূর্বপাড়া শাহাদাতের বাড়ির পাশের ব্রিজটি স্রোতের টানে দেবে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গার গ্রামীণ সড়ক ধসে যাচ্ছে। লামা আলীকদম সড়কের কেয়ারারঝিরি এলাকা পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
মাতামুহুরী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীটির চাম্পাতলী এলাকার পশ্চিম পাশে সরু হওয়ায় পানি দ্রুত পানি নামতে পারছে না।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, পাহাড়ি ঢলে ইয়াংছা বাজারের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বার বার বলা হচ্ছে।
লামা বাজারপাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সেলিম, জাকির হোসেন, পিপলুসহ আরো অনেকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলে শত শত ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। পানি ওঠার সময় ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হচ্ছে তাদের।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, গত কয়েক দিনের বর্ষণে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে। এজন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ও প্লাবিতদের মধ্যে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও আশ্রিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যোগাযোগের নম্বর যথাক্রমে- নির্বাহী অফিসার ০১৫৫০০০৭১৮০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ০১৮৪৫৭২৯৭২১ ও পিআইও সহকারী ০১৭১৭৭১৪৭৩৬।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে তাগিদ দেয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পৌরসভা এলাকার ২৬ পরিবারসহ বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।