মোঃ শাকিল আহম্মেদ প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ :আজ থেকে ৪৮বছর আগে দেশে ধর্ষণ করেছিল দেশদ্রোহীরা বিভিন্ন স্বার্থে। কিন্তু কারা এখন কীসের স্বার্থে আবারো এ ধরণের অমাণবিক কাজ অব্যহত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে লাগাতর ধর্ষণ সংক্রান্ত খবর পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। তাই ধর্ষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে । তাহলে ধষর্ণকে কী কোথাও বৈধতা দিয়েছে, এমন প্রশ্নের স্বাধ জাগে আমার মত অনেকের। যেহেতু গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত , সেহেতু আজ অবধি পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশ বা বিশ্বের কোন ধর্ম ধর্ষকের পক্ষপাতীত্ব হয়ে কাজ করেছে,তার প্রমাণ মেলে নি। আবার এটাইও সত্য যে নীরব আইন ভূমিকাতেই দিনের পর দিন ধর্ষণ বেড়ে চলছে প্রতিযোগিতাসরূপ।
কিন্তু সবারই জানা দরকার ধর্ষণ ‘যৌন মিলন নয়’, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্ক নয়’ কিংবা ‘যৌনতার অপব্যবহার নয়’। বৈধ ধর্ষণ বলে কিছু নাই। প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষণ, স্বামী কর্তৃক ধর্ষণ অথবা সঙ্গী কর্তৃক ধর্ষণ, এগুলো সবই ধর্ষণ। ধর্ষণ, ধর্ষণই।
এখন পর্যন্ত ধর্ষণ অপরাধে গোটা বিশ্বে সেরা দশে যেসব রাষ্ট্রের নাম পাওয়া গেছে,তা নিয়ে একটু জানুন।
আমেরিকা :
আমেরিকার ব্যুরো অব জাসটিস স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ী আমেরিকায় ধর্ষণের শিকার নারীর পরিসংখ্যান ৯১% এবং ৮% পুরুষ।ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার।পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মত অপরাধের প্রবণতা তৈরি হয় শিশু মননে।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
সন্তান এবং শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। এই দেশে একজন ধর্ষকের শাস্তি মাত্র ২ বছরের কারাবাস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বলা হয় ‘রেপ ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।
সুইডেন :
ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সুইডেনেই সবথেকে বেশি ধর্ষণ হয়। প্রতি বছরই প্রায় ৫৮% হারে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ে সুইডেনে।
ভারত :
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতের মত উন্নতশীল দেশে ধর্ষণের অভিযোগ জমা হয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩টি। ভারতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়।
ব্রিটেন :
৪ লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের মত ঘটনার শিকার হন ব্রিটেনে। প্রতি ৫ জন মহিলার (১৬-৫৯ বছর বয়সী) মধ্যে একজন করে ধর্ষণের শিকার হন।
জার্মানি :
এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে জার্মানিতে। প্রতি বছর জার্মানিতে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ৬৫ লাখ ৭ হাজার, ৩৯৪।
ফ্রান্স :
১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের মত ঘটনা ফ্রান্সে অপরাধ বলেই মানা হত না। ফ্রান্সের সরকারী গবেষোণায় দেখা গেছে প্রতি বছরে এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ৭৫ হাজার নারী।
কানাডা :
এই দেশে এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগের (ধর্ষণ) সংখ্যা ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৯১৮টি (এই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ১৭ জন মহিলার মধ্যে ১ জন করে মহিলা এই দেশে ধর্ষিতা হন। যাদের মধ্যে ৬২% শারীরিকভাবে আহত হন।
শ্রীলঙ্কা :
এই দেশে অপরাধের শতাংশের বিচারে ১৪.৫ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় ধর্ষণে। ধর্ষণে অভিযুক্তদের ৬৫.৮% ধর্ষণের মত নারকীয় কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকেও কোনও প্রকার অনুশোচনা তাদের মধ্যে হয় না।
ইথিওপিয়া :
এই দেশের ৬০% নারী ধর্ষণের শিকার।
নারীদেহ কোন বস্তু নয়। যখন নারীদেহকে বস্তু মনে করা হয় তখন সেখানে বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
ধর্ষনের এই চলমান ধারাকে ইংরেজিতে বলে রেপ কালচার। মেয়েরা আজ ঘরে বা বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। বাড়ির উঠোনে খেলতে থাকা বাচ্চা মেয়েকে তুলে নিয়ে যেমন ধর্ষণ করা হচ্ছে তেমনি চলমান বাসেও মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। পিপার স্প্রে কিংবা ব্লেড কোনোটাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে না যতদিন মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ির উঠোনে খেলতে থাকা বাচ্চাটা না রাখবে ব্লেড না রাখবে পিপার স্প্রে। চলন্ত বাসে ৩/৪ জন পুরুষের কাছে একজন নারীর শক্তি হার মেনে যেতেই পারে। তবে ধর্ষণ বা রেপ কালচার প্রতিরোধের উপায় কি??
কঠিন সত্যটা হচ্ছে ধর্ষণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ তো দুরের কথা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নেয়া হয় নাই। তারপরও কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ধর্ষণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে নিজেদের অবস্থান থেকে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এতে করে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে পরিবর্তন সম্ভব। “Don’t be that guy” – নামক প্রচারণার ফলে ভ্যানকুভারে যৌন সহিংসতা প্রায় ১০ ভাগ কমে গিয়েছে। যুক্তরাজ্যে আরো অনেক প্রচারণা আছে যা ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়তা করছে। নারীবাদী সংগঠন TBTN বা Take Back The Night এবং V-Day এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের দেশেও সাংগঠনিকভাবে ধর্ষনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।
মিডিয়া এবং যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্রে ধর্ষণবিরোধী প্রচারণা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু এর ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত মেয়েদের সাথে নানা ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে। যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করেন তারা এগুলোর সম্মুখীন বেশি হন। এমন কিছু দেখলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করতে হবে। একা ভয় পেলে পাশের জনকে বলতে হবে। প্রতিবাদের ভাষা কঠিন হতে হবে। যারা অপরাধী তারা ভীতু প্রকৃতির হয়।রাষ্ট্র কর্তৃক দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এই ঘৃণ্যতম অপরাধ দমনে সফলতা আসবে।
এরকম আরো উপায় থাকতে পারে যার মাধ্যমে ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব। আমাদের সাবধানতা এবং সচেতনতাই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে।দেশকে ভালোবাসুন, দেশের সব শ্রেণির মানুষকে ভালোবাসুন এবং দেশের প্রতিটি ইতিবাচক কাজকে প্রশংসা সরূপ হ্যাঁ ও নেতিবাচক কাজকে নিন্দাসরূপ না বলার সাহসিকতা তৈরি করুন। কারণ দেশটা