১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

এতিম মেয়ে তপতীর পুলিশে চাকুরী

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ১, ২০১৯
এতিম মেয়ে তপতীর পুলিশে চাকুরী

 

মৌখিক পরীক্ষার পর চুড়ান্ত ফলাফলে নাম ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন তপতী। পিতৃহীন হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য হিসেবে এ চাকুরী যেন তার কছে পৃথিবী হাতে মুঠোই পাওয়ার মত ঘটনা। যদিও পরের দিন শারীরিক ফিটনেস জন্য মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজনী ছয় হাজার টাকা নেই তার ও তার বিধাব মা’ য়ের কাছে। যে কারণে চুড়ান্ত নাম ঘোষণার পর দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কিন্ত পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ানের মহানুভবতায় সেই দুশ্চিন্তাও দুর হলো তার। তপতীর অর্থনৈতিক অসহায়ত্বর বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ সুপার এই টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নিলেন।
দুই-তিন দিন অগে বাছাই পর্ব ও লিখিত পরীক্ষার পর শনিবার মাগুরা পুলিশ লাইনস্ এ ২৬ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার দিনে এ ঘটনা ঘটে।
তপতীর বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতী গ্রামে। সরকারি খাস জমিতে খুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। বাবা তপন চক্রবর্তী একটি বেসরকারি কোম্পনীর বিপনন কর্মী ছিলেন। সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি মারা যান ২০১৪ সালের ১৪ মে। সেই থেকে তপতী তার মা ও ছোট বোন চরম দারিদ্রতার মাঝে আধ পেটা – এক পেটা খেয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করেছেন। ফরিদপুরে পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী মামার প্রতিমাসে পাঠানো সামান্য টাকায় চলতো সংসার। খেয়ে-না খেয়ে দিন চললেও চরম অনটনের সংসারের লেখা পড়া চালিয়ে গেছেন তপতী। এবার শালিখার বুনাগাতি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী তিনি। তপতীর মনে শংঙ্কা একমাত্র সাহায্যকারী মামার বিয়ের কথা চলছে। বিয়ে হলে সংসারের চাপে ই”ছা থাকলেও তিনি আর তাদের জন্য খরচের টাকা দিতে পারবেন না। তখন তাদের কপালে দুর্ভোগের শেষ নেই। যে জন্য দ্রুত তাকে একটা কিছু করতে হবে। এরই মধ্যে সে জানতে পারে কোন টাকা ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনেস্টবল নিয়োগের খবর। এ খবরে মনের মধ্যে স্বপ্ন বোনেন তিনি। ভাবেন চাকরিটা পেলে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট বোনকেও পড়াতে পারবেন। সাথে দু’বেলা দুই মুঠো খাবারের নিশ্চয়া হবে। বিধবা মাকে আর প্রতি রাতে খালি পেটে চোঁখের জ্বলে বালিশ ভেজাতে হবে না। যার প্রেক্ষিতেই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর শনিবার মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চুড়ান্তভাবে মনোনিত হন তপতী।চাকরির জন্য এ পর্যন্ত তার ব্যাংক ড্রাফট করতে খরচ হয়েছে মাত্র এক’শ টাকা। কিন্তু পরদিন রোববার মেডিকেল পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন আরো ৬ হাজার টাকা। যা নেই তপতী ও তার বিধাব মায়ের কাছে। ছয় হাজার টাকাতো দূরের কথা বাড়ি থেকে মাগুরায় আসা-যাওয়ার ভাড়ার টাকাও জোগাড় করতে হবে ধার দেনা করে। তাই চাকুরী পাবার আনন্দে কেঁদে ফেললেও একইভাবে দুঃচিন্তার ছাপ ছিল তার চোখে মুখে । কিন্তু পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান কোন এক মাধ্যমে জানতে পারেন মেডিকেলের চেক আপের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০০০ টাকা জোগাড় করার সামর্থ নেই তপতীর। এ সময় তিনি তপতীকে খুজে বের করে তার মেডিকেল চেক আপরে প্রয়োজনীয় টাকার দায়িত্ব নেন তিনি।
তপতীর মা চন্দনা চক্রবর্তী বলেন, বিনা টাকায় মেয়ে চাকরি পাওয়ায় তিনি খুশি। আর এ প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পুলিশ লাইনসে আসা চাকরী প্রাপ্তদের মধ্যে মেহেদী হাসান, আল ইমরান, ইব্রাহিম হোসেন জানান, বিনা ঘুষেই মাত্র ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফটে তারা এবারের পুলিশের চাকরী পেয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই বলেন, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ঘুষ লাগলে তাদের কপালে আর চাকরি জুটতো না। এ জন্য তারা মাগুরা পুলিশ সুপার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
মাগুরা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোওয়ান এ বিষয়ে বলেন, পুলিশের চাকরীর সাথে রয়েছে মানবিক সেবার সম্পর্ক। এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। তিনি সেই দায়িত্বটি পালন করেছেন মাত্র। তবে এর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মাগুরা সর্বস্তরের জনগন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সর্বপরী পুলিশ প্রধান আইজিপি মহোদয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর।তিনি সুচারু রুপে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031