৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সাগরে করোনা ভাইরাসের আস্তানা হয়ে উঠছে যে জাহাজটি

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
সাগরে করোনা ভাইরাসের আস্তানা হয়ে উঠছে যে জাহাজটি

মনির সরকার ::  চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি বিপদ তৈরি করেছে সাগরে ভাসমান একটি জাহাজ। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যটকভর্তি ব্রিটিশ পতাকাবাহী এই প্রমোদ জাহাজটিতে ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়ার পরপরই এটিকে জাপানের ইয়োকোহামায় নোঙর করা হয়। চেষ্টা চলছে থাকে কোনওভাবেই যেন অন্য যাত্রী বা ক্রুরা এতে সংক্রমিত না হন।

 

সে সময় ওই জাহাজে যাত্রীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৬৬৬ জন। তারা ৫৬টি দেশের নাগরিক। নাবিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ছিল মোট ১০৪৫ জন। তখন থেকেই তাদের ডাঙায় নামতে দেওয়া হচ্ছে না। জাহাজের ভেতরেও কেবিনের মধ্যে এক ধরনের অবরুদ্ধ সময় কাটাতে হচ্ছে; যাতে যতটা সম্ভব এক অন্যের সংস্পর্শে না আসতে পারে।

 

যাদের শরীরে যখনই করোনা ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের তীরে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনও কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসের বিস্তার। প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে চার থেকে পাঁচজনের শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকছে। প্রতিদিনই নতুন করে কয়েক ডজন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস বাসা বাঁধছে।

 

১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার জাপানের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামের জাহাজটিতে নতুন করে ৮৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে প্রমোদ জাহাজটিতে গত ১৪ দিনে ৫৪২ জন যাত্রী এবং ক্রু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে জাপানের কর্তৃপক্ষ।

 

ডায়মন্ড প্রিন্সেসে শেফ (বাবুর্চি) হিসেবে কাজ করেন বিনয় সরকার। হোয়াটস আ্যপে তিনি বিবিসি-কে জানান, যত দিন যাচ্ছে জাহাজে যাত্রী এবং ক্রুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে যে, কে কখন আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. অ্যান্টনি ফাওচি সোমবার বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কয়েক হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রেখে যেভাবে জাহাজটিতে ভাইরাস আটকানোর চেষ্টা চলছে, তা কাজ করছে না।

 

হয়তো এ কারণেই একের পর এক দেশ ওই জাহাজে আটকে থাকা নিজেদের নাগরিকদের নিয়ে যেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই জাহাজে থাকা তাদের ৩৮০ জন নাগরিকের অধিকাংশকেই সোমবার বিশেষ একটি ভাড়া বিমানে করে নিয়ে গেছে।

 

মঙ্গলবার কানাডা জানিয়েছে, তারাও একটি বিমান ভাড়া করেছে। জাহাজে ২৫৬ জন কানাডার নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়া একটি বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে তাদের চারজন নাগরিককে নিয়ে যেতে। অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।

 

ডায়মন্ড প্রিন্সেসের শেফ বিনয় সরকার বলেন, সম্ভবত বিদেশিদের কাছ থেকে কিছুটা চাপ তৈরি হওয়ায় সোমবার থেকে জাপানিদের কাছ থেকে অনেক বেশি তৎপরতা চোখে পড়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘কয়েকশ সেনা জাহাজে উঠে পুরোদমে স্যানিটাইজেশনের কাজ করছে। বিশেষ করে করে যেসব যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে গেছেন তাদের ছেড়ে যাওয়া কক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে সেনারা।’

 

কবে খালি করা হবে ডায়মন্ড প্রিন্সেস!
জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাহাজের সব যাত্রী এবং ক্রুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তবে কিছু পরীক্ষার ফল পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

 

তিনি বলেন, ১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাত্রীদের নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সব যাত্রী ও ক্রুকে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আপনি এবং আপনার কক্ষের সহযাত্রীর শরীরে যদি কোনো ভাইরাস না পাওয়া যায়, শরীরে কোনও লক্ষণ না থাকে তাহলে আপনি জাহাজ ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।’ তবে হাজারেরও বেশি ক্রুকে আরও কিছুদিন জাহাজে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

 

বিনয় সরকার জানান, তাদের জানানো হয়েছে যে যাত্রীরা নেমে গেলে ক্রুদের আলাদা আলাদা ঘরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এ সময় তাদের কোনো কাজ করতে হবে না। জাপানিরাই সব কাজ করবে। বাইরে থেকে ইতোমধ্যেই সবার জন্য খাবার পাঠানো শুরু হয়েছে।  সূত্র: বিবিসি।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031