৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রোহিঙ্গা গণহত্যা ‘সুচি সেনাদের’ ভাগ্য নির্ধারনী আইসিজের অন্তর্বর্তী রায় আজ

অভিযোগ
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৩, ২০২০
রোহিঙ্গা গণহত্যা ‘সুচি সেনাদের’ ভাগ্য নির্ধারনী আইসিজের অন্তর্বর্তী রায় আজ
মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি • ফাইল ফটো
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ ( বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি) জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বহুল প্রতীক্ষিত অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষিত হতে যাচ্ছে। রয়টার্স

 

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাজনগোষ্ঠির ওপর পরিচালিত গণহত্যার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সরকার। সর্বশেষ তদন্ত প্যানেল রোহিঙ্গাদের ওপর কিছু অপরাধের কথা স্বীকার করলেও বরাবরের মতোই গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশে অবস্থিত শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা বলছেন, মিয়ানমার সরকারের তদন্ত কমিটি গণহত্যার প্রমাণ না পেলেও, ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যা বিভিন্ন সময়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ (আইসিজে) জাতিসংঘের একাধিক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানি হয়েছে। যার অন্তর্বর্তীকালীন গাম্বিয়ার করা মামলায় রায় আজ ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে তাদের পক্ষে রায় আসবে এমন প্রত্যাশায় এখন হেগের দিকে চোখ রোহিঙ্গাদের। বিবিসি

 

ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আইসিজে রায়ে রোহিঙ্গাদের জয় আশা করছি আমরা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণাদি আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে আসছিল সেনারা। যা ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে বড় আকারে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে।’

 

এআরএসপিএইচ সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারে গণহত্যার কোনো প্রমাণ পায়নি বলে সেদেশে একটি তদন্ত প্যানেল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা, প্রকাশিত ১৪০ পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট আমি পড়েছি। সেখানে তারা আমাদের মা, বোনদের ওপর ধর্ষণ ঘটনার কোনো চিত্র উল্লেখ নেই। এটি শুধু নামে স্বাধীন তদন্ত প্যানেল। প্রকৃত পক্ষে মিয়ানমার সরকারের কথা মতে এই রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে।’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান করে নিজ দেশ থেকে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা জেনোসাইডের ঘটনা অনেক আগে থেকে ঘটিয়ে আসছিল। মিয়ানমার সরকার জেনোসাইডের ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করছে। যাতে করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এমনকি সরকার সেদেশে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করেছে। তাতে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে সেদেশের সরকার আগের থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। তাছাড়া আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা মামলা এটি প্রমাণ করে যে সেদেশে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছে।’

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আইসিজের ঘোষিত রায় নিয়ে যাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে সেদিকে সর্তক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

 

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালায় মিয়ানমার। সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা হত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এই নৃশংসতাকে গণহত্য আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া।

 

মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত যাতে আরও তীব্রতর না হয়-এজন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। আদালতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করা দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। তিনি গণহত্যার অভিযোগ খারিজের আহ্বান জানান।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031