৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস

 

এম এ সালাম রুবেল-ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :

৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ঠাকুরগাঁও। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দিনটি উপলক্ষে নানান কর্মসূচি পালন করবে উদীচী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন।উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও সংসদের সভাপতি সেতারা বেগম বলেন, সকাল ১০টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে দিনটি উদযাপনের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। পরে সাধারণ পাঠাগার চত্বর থেকে একটি মুক্তি শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার চত্বরে এসে সবাই মিলিত হবে। তিনি জানান, দিবসটি উপলক্ষে শহীদ মিনার চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে । এছাড়া বিকেলে শহীদ মিনারে নাটক ও কবিতা আবৃত্তি এবং সন্ধ্যায় উদীচী জেলা সংসদের আয়োজনে গণসংগীত পরিবেশন করা হবে।মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেওয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। এছাড়া স্থানীয় ইতিহাস লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করার ওপর তাগিদ দিয়েছেন অনেকেই।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাতিভাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, দেশ হানাদার মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এদেশ এখনো রাজাকার মুক্ত হয়নি। তাই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে বারবার। এদের প্রতিহত করতে এখনই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্ত হয়। এ কারণেই আমরা আজকের দিনটিকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করি। প্রতিবারের মতো এবারো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। স্থানীয় রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস সংরক্ষণের কথা জানান ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর। ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে মেতে ওঠে তারা।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রানীশংকৈল খুনিয়া দীঘির পাড়ে মুক্তিকামীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাত্রাকালে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আটক করে। পরে তাদের পাথরাজ নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হয়।একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়া দীঘির পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনী হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার নিরীহ সাধারণ মানুষকে লাইনে দাঁড়করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। নির্বিচারে হত্যার কারণে পরবর্তীকালে এটি খুনিয়া দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে।১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষরাও।স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার মুক্তিকামী মানুষেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মাটিকে হানাদারমুক্ত করতে।২৯ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর মনোবল ভেঙে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটতে শুরু করে। অবস্থান নেয় ২৫ মাইল নামক স্থানে।৩ ডিসেম্বর ভোররাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও শহর। সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বের হয় আনন্দ মিছিল। হাজার মানুষের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পথঘাট।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2024
T W T F S S M
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930