২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শ্রীপুর ইতিহাস

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০১৯
শ্রীপুর ইতিহাস

আবু সাঈদ :: শ্রীপুর বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।অবস্থানঃশ্রীপুর উপজেলা গাজীপুর জেলার সর্বোত্তরে অবস্থিত।

 

উত্তরে গফরগাঁও উপজেলা ও ভালুকা উপজেলা, পুর্বে কাপাসিয়া উপজেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে গাজীপুর সদর উপজেলা ও পশ্চিমে কালিয়াকৈর উপজেলা ও টাঙ্গাইলের সখিপুর অবস্থিত। ২৩.৪৩ উত্তর অক্ষাংশ ৯০.২৪পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অবস্থিত। আয়তন ১৭৮.১৯ বর্গমাইল।

 

প্রশাসনিক এলাকাঃ
শ্রীপুর উপজেলায় একটি পৌরসভা রয়েছে।

এর প্রশাসনিক নাম শ্রীপুর পৌরসভা। শ্রীপুর উপজেলায় ০৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো:
মাওনা ইউনিয়ন
গাজীপুর ইউনিয়ন
তেলিহাটী ইউনিয়ন
বরমী ইউনিয়ন
কাওরাইদ ইউনিয়ন
গোসিংগা ইউনিয়ন
রাজাবাড়ী ইউনিয়ন
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন
শ্রীপুরের ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
শ্রীপুরের ঐতিহাসিক পটভূমি যুগে বিভিন্ন রাজবংশের শাসনের ক্রমঃ বিবর্তনের বৈশিষ্ট্যে অলংকৃত সম্ভবতঃ মহারাজাধিরাজ শশাংকের রাজত্বকালে ইহা প্রাগ জ্যেতিষপুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতিহাস বেত্তাগণ অনুমান করেন যে, আনই ভৌমিক বলিয়া প্রাগ জ্যেতিষপুর রাজ্যের সমস্ত রাজা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ভালুকা-গফরগাঁও ও শ্রীপুরের উত্তারাঞ্চলের রাজা ছিলেন। তাহার রাজবাড়ি ছিল ফুলবাড়িয়া বানার নদীর তীরে।

 

মহারাজা ধীরাজ শশাংকের পর বাংলাদেশে গোলাপ নামে এক রাজা, বৌদ্ধ রাজত্বের স্থাপন করেন। ঐ সময় হতে সম্ভবতঃ এই অঞ্চলে বৌদ্ধ রাজত্বের সৃষ্টি হয়। ১০৫০ সালে বিখ্যাত সুফী সাধক শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমী যখন নেত্রকোনায় মদনপুরে আসেন, প্রাগ জ্যেতিষপুর রাজ্যের সমস্ত রাজা মদন গারোর রাজ্যে আস্তানা স্থাপন করেন।

 

এর প্রায় অর্ধ শতাব্দীর পর ভাওয়ালের সুফী সাধক শাহ কারফরমা শাহ ইসলামের মহান বাণী নিয়ে ভাওয়ালে আসেন। তখনও শ্রীপুর এলাকা দুইটি ছোট বৌদ্ধ রাজত্বে বিভক্ত ছিল। একজন ইন্দ্রপাল রাজধানী ইন্দ্রপুরে যা আধুনিক মাওনার নিকট অবস্থিত । অপরজন ভবপাল । তার রাজধানী ছিল রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাইশুখানিয়া গ্রামে।

 

সম্ভবত: অষ্টম শতাব্দীতে রাজা ইন্দ্রপাল ইন্দ্রপুর ও তার আশেপাশের এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাজ্য গঠন করেন। ইন্দ্রপুরের কীর্তি তাঁহার ইন্দ্রপুরের দিঘী।

 

তৎপুত্র আতিদ্যপাল কোচ রাজাকে প্রতিহত করার জন্য শ্রীপুর মৌজার সর্বোত্তরে একটি সেনা ছাউনি ফেলিয়া তথায় একটি বড় দিঘী খনন করেন।

 

ইহাই আদিত্যপালের দিঘি নামে পরিচিত ছিল। যার বর্তমান প্রচলিত নাম ওয়াদ্দার দিঘী। তৎপুত্র রাজা শ্রীপালের নাম অনুসারে শ্রীপুর মৌজার নামকরণ করা হয়। মৌজার নাম অনুসরণ করে শ্রীপুর উপজেলার নামকরণ করা হয়। অভিধানিক অর্থে শ্রী-অর্থ সৌর্ন্দয্য, পুর -অর্থ নগরী অর্থাৎ সৌন্দর্য্যের নগরী। শ্রীপালের পুত্র কর্ণপাল বর্তমান গোসিঙ্গা ইউনিয়নে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন ও একটি বিশালাকায় দিঘী খনন করেন। তাঁহার নামানুসারে এই মৌজার নাম করণ করা হয় কর্ণপুর। সম্ভবতঃ তিনি ১০৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন।

 

কারফরমা শাহ ওরফে কারাশাহ। অনেকের ধারণা কারাশা গাজীদের আদি পুরুষ, তখন গৌড়ের শাসনকর্তা সম্ভবতঃ লক্ষণ সেন। কারাশাহের অধস্তন পুরুষেরা মসী ছাড়িয়া অসী ধারন করিলেন, তাঁহাদেরই একজন শেরআলী খান গাজী আধুনিক টঙ্গী হইতে উত্তরে গারোপাহাড় পর্যন্ত বিজয় করেন এবং শেরপুর শহর তাঁহারই নামের স্মৃতি বহন করে।

 

শেরপুর শহরের সাত মাইল উত্তরে গড়জরিপাদূর্গ আসাম রাজ্যের রাজার নিকট হইতে দখল করেন ও তথায় সুরম্য প্রাসাদ ও মসজিদ নির্মাণ করেন যাহার ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। সম্ভবতঃ গৌড়ে তখন হাবসী সুলতানগণ শাসন করতেন।

 

সম্ভবতঃ তাঁহারই ভাই পালোয়ান গাজী এই অঞ্চল শাসন করতেন। তৎপুত্র দিল্লীর মোহাম্মদ বিন ভোগলকের নিকট হইতে এই অঞ্চলের জায়গীর লাভ করেন। তাঁরই ছেলে ভাওয়াল গাজী ভাওয়াল পরগনার মালিক হন। কথিত আছে যে, এখানকার লোকেরা কৃষিকাজ শেষে বিশ্রামের সময় আইলে বসত, ব-আল ভাওয়াল পার্শী শব্দ। ব-অর্থ বসা, আল যা ক্ষেত্রের বাতর। সেজন্য তৎকালীন লোকেরা নাম রাখেন ভাওয়াল আর ভাওয়ালের শাসনকর্তা গাজী সাহেবকে তারা ভাওয়াল গাজী বলে সম্বোধন করেন। তাঁরই ছোট ভাই তফিল উদ্দিন গাজী মতান্তরে আবু তালেব। যার নামে স্মৃতি বহন করে তালিবাবাদ পরগণা। সম্রাট শেরশাহ ভারত দখল করে তাঁর রাজ্য ৪৭টি সরকারে বিভক্ত করেন। মুঘল আমলে প্রত্যক সরকারকে আবার পরগণায় বিভক্ত করেন। এই এলাকা তখন ভাওয়াল পরগণা নামে পরিচিত হয়। শ্রীপুর ভাওয়াল পরগণার অর্ন্তভুক্ত এলাকা।

 

গাজীদের রাজত্বকালে এখানে মুর্শিদাবাদের নওয়াব ছিলেন সুজা উদ্দিন খান। খাজনা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল পাঁচশালা বন্দোবস্ত। গাজী সাহেবের দেওয়ান ধূর্ত বলরাম রাজকর বাকী ফেলে সূর্য্যাস্ত আইনের মারপ্যাঁচে ভাওয়াল জমিদারী তার নিজের নামে বন্দোবস্ত আনেন। তখন হতে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত শ্রীপুর এলাকার তিন চতুর্থাংশের মালিক ছিলেন ভাওয়ালের রাজারা। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস গফরগাঁওয়ের জমিদার মাহমুদ মির্জা তালুক মোহাম্মদ ইকবাল, বন্দোবস্ত নেন আছমাতুন নেছা খানম নামে এক মহিলা ও তালুক মির আহাম্মদ, বন্দোবস্ত নেন মহেন্দ্র নারায়ন গুপ্ত। পরবর্তী সময়ে উক্ত আছমাতুন নেছা খানম এর উত্তরাধিকারগণ তালুক ও তৌজি বিভিন্ন লোকের নিকট বিক্রয় করেন। তাতে আরো ১২ জন তালুকদারের সৃষ্টি হয়।

 

১৭৬৫ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর ১৭৬৬ সালে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী দীল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট হইতে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার কর প্রদানের চুক্তিতে দেওয়ানি লাভ করেন। ১৭৭২ সালে কোম্পানীর কর্মচারী মি. র‌্যানেল বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা জরিপ করেন এবং ঐ জরিপ শেষ হয় ১৭৮২ সালে। কিন্তু এর মধ্যে ১৭৮১ সালে বঙ্গ প্রদেশে ৬টি রাজস্ব জেলার সৃষ্টি হয়। মেদেনীপুর, যশোহর, মর্শিদাবাদ, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও নোয়াখালী। তখন শ্রীপুর তথা ভাওয়াল পরগণা ময়মনসিংহ কালেক্টরী অর্ন্তভুক্ত ছিল। ১৮৫১ সালের ২৭ শে অক্টোবর ঢাকা প্রশাসনিক ও রাজস্ব জেলার সৃষ্টি হয় তখন ভাওয়াল পরগণা তথা শ্রীপুর অঞ্চল ঢাকা জেলার অর্ন্তভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে বর্তমান গাজীপুর জেলার সৃষ্টি হলে শ্রীপুর অঞ্চল এই জেলার অর্ন্তভুক্ত হয়।
১৮৫৮ সালে ভারতবর্ষে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30