পুনম শাহরীয়ার ঋতু : মুক্তাগাছায় ৭ম শ্রেনির শিক্ষার্থী উমামা তাসনিম আত্মহত্যা করেনি। তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। একই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার অপরাধে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে তার সৎ মা দিলরুবা বিউটি বিরুদ্ধে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে থানা পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
এ ঘটনায় নিহত উমামা তাসনিমের বাবা স্কুলশিক্ষক রবিউল আলম রুবেল ও সৎ মা দিলরুবা বিউটি ও নানী রওশন আরাসহ সাত জনের নামে মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেছেন উমামার মামা ড. রেজাউল হক। পুলিশ অভিযুক্ত বাবা-মা’কে আটক করেছে। রোববার উমামার লাশ ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে মুক্তাগাছা শহরের যমুনাসিংহ মোড় এলাকায়। তার মৃত্যুর সঠিক বিচার ও তদন্ত চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি ইউনিয়নের কলাদিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে রবিউল আলম রুবেল কারিগরি শাখায় শিক্ষকতা করতেন আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার প্রথম স্ত্রী তাসলিমা আক্তার সাথীও একই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৮ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তার চার বছরের একমাত্র কন্যা সন্তান উমামা তাসনিমকে রেখে তিনি মারা যান।
ওই বছরই ময়মনসিংহের ফুলপুরের ধলী গ্রামের আব্দুল বাছেদের মেয়েকে বিয়ে করেন রবিউল আলম রুবেল। উমামা বড় হন তার সৎ মা দিলরুবা বিউটির কাছেই। সে তার বাবার স্কুলেই ৭ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। পানে থেকে চুন খসলেই উমামার গায়ে পড়ত বাবা ও সৎ মায়ের নির্মম নির্যাতন।
উমামাকে খেতে দেয়া হতো ফেলে দেয়া জুটা খাবার। এসব কারণে বিভিন্ন সময় তার নানার বাড়ির লোকজন তাকে তাদের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু রুবেল মেয়েকে তার নানার বাড়িতে যেতে দিত না। সৎ মায়ের ঘরে ছোট ছোট দু’টি সন্তানদের লালন পালনের দায়িত্ব পড়ত তার ওপরই। সৎ মায়ের সন্তানদের যত্নে সামান্য ত্রুটি হলে নির্মম নির্যাতন চলত উমামার ওপর।
শহরের যমুনাসিংহ মোড়ের রুহুল আমীনের চার তলা ভবনের নিচতলায় তারা ভাড়া থাকত। ওই ভাড়া বাসার ছোট একটি রান্না ঘরে তাকে থাকতে দেওয়া হতো। ওই ছোট কক্ষেই অধিকাংশ সময় কাটাতে হতো তাকে । ওই কক্ষেই শনিবার দুপুরে তার সৎ মা দিলরুবা গলা টিপে হত্যা করে তাকে।
তার অপরাধ কয়েকদির আগে সে একই স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিল। ভবিষ্যতে কথা না বলার অঙ্গীকারের পরও সৎ মা তাকে ছাড় দেয়নি। চলে লোমহর্ষক নির্যাতন। তাদের নির্যাতনে সে মারা যায়।
উমামাকে হত্যা করা হয়নি, সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে – এ ধরণের অভিযোগ প্রমাণের জন্য তার বাবা-মা দিনভর আত্মহত্যার নাটক সাজায়। তার মৃতদেহ ঘরে রেখেই তারা বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায়। হাসপাতালে নেওয়াটাও ছিল নাটকের একটি অংশ।
হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নানা কসরত চালিয়েও রক্ষা হয়নি তাদের। অবশেষে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে।
মামলার বাদি উমামা তাসনিমের মামা ড. রেজাউল হক বলেন, তার ভাগ্নিকে পরিকল্পিতভাবে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। তাকে তাদের বাসায় নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও উমামাকে তাদের বাসায় যেতে দেওয়া হতো না। তার সৎ মা বিভিন্ন সময় আমানুষিক নির্যাতন চালাত উমামার ওপর।
থানার ওসি আলী মাহমুদ বলেন, নিহত স্কুল শিক্ষার্থীর বাবা-মা’কে আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সৎ মা দিলরুবা বিউটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। একই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফোনে কথা বলায় উমামার ওপর নির্যাতনের কথাও স্বীকার করেন তিনি।