১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

আমার বাবা সুইসাইড করার মতো মানুষ না : সুদীপের মেয়ে

অভিযোগ
প্রকাশিত জুন ৪, ২০১৯
আমার বাবা সুইসাইড করার মতো মানুষ না : সুদীপের মেয়ে

সুমন আহমদ ::

’এইটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার বাবা শুধু শুধু সুইসাইড করার মতো মানুষ না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’ -ওসমানী হাসপাতালের মর্গের সামনে কেঁদে কেঁদে এমনটি বলছিলেন শতাব্দী বড়ুয়া।

মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শতাব্দী রোববার লাশ উদ্ধার হওয়া গোয়াইনঘাট থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ বড়ুয়ার মেয়ে। রোববার থানা এলাকার বাসা থেকে সুদীপের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের।

সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে সুদীপের লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় ওসমানী হাসপাতাল মর্গের পাশে সুদীপের স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে উপস্থিত ছিলেন।

লাশ গ্রহণের আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সুদীপের মেয়ে শতাব্দী বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বাবা গোয়াইনঘাট থানায় বদলি হয়েছেন। যখন থেকে বদলি হয়েছে তখন থেকে প্রত্যেক দিন তাকে টর্চার করা হতো। বাবা আমাদের ফোন দিয়ে সবসময় বলতো- খুব টর্চার করে। অতিরিক্ত ডিউটি করায়। রেস্ট নিতে দেয় না।

গোয়াইনঘাট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শতাব্দী বড়ুয়া বলেন, ওসি সাহেব বাবার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করতেন। যা তা গালাগালি করে। আমার বাবা ভদ্র মানুষ। এসব গালি নিতে পারেন না। পরশু রাতেও ওসি সাহেব বাবাকে ইচ্ছেমত গালি দিয়েছেন। আমার বাবাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো।

তিনি বলেন, ওই ওসি দুনিয়ার অবৈধ কাজ করতেন। এগুলো আমার বাবা এগুলো সহ্য করতে পারতেন না। আমার বাবা একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ২৮ বছর ধরে পুলিশে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও নেই। আবার বাবা সবসময় বলতো- ওসি সবসময় অবৈধ কাজ করেন। অনৈতিক মানুষ। তিনি (ওসি) আমার বাবার নৈতিকতা সহ্য করতে পারতেন না। তারা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে একনাগাড়ে এসব অভিযোগ করেন শতাব্দী। একই অভিযোগ শতাব্দীর মা ও ভাইয়েরও। গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল জলিলের দুর্ব্যবহারের কারণেই সুদীপের রহস্যজনক মৃত্যু বলে দাবি তাদের। এঘটনার বিচারও চেয়েছে সুদীপের পরিবার।

যদিও পুলিশ বলছে, দারিদ্র্য ও মানসিক আস্থাহীনতা থেকে আত্মহত্যা করেছেন এসআই সুদীপ। দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল জলিলও।

রবিবার দুপুরে গোয়াইনঘাট থানা কমপ্লেক্সের নিজ কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উপ পরিদর্শক সুদীপ বড়ুয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার ময়না তদন্ত ও বিভাগীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় তার মরদেহ।

এসআই সুদীপের পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মাহবুবুল আলম জানান, ‘তার উপর অযাচিত কোন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে কিনা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে।’

এসআই সুদীপ অত্যন্ত সৎ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, এক জন সৎ পুলিশ অফিসারকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় যোগ দেওয়া সুদীপ বড়ুয়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সোনাইচড়ির মৃত রবীন্দ্র লাল বড়ুয়ার ছেলে। তার এক ছেলে নৌবাহিনীর স্কুলে এবং মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।

গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার সালাউদ্দিন জানান, রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত থানায় ছিলেন সুদীপ বড়ুয়া। এরপর থানা এলাকায় নিজের বাসায় যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পর তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031