২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

নিজের মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে, সেই টাকায় জুয়া খেলতেন মা

Weekly Abhijug
প্রকাশিত মার্চ ১৪, ২০২৩
নিজের মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে, সেই টাকায় জুয়া খেলতেন মা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

বেশি ভিক্ষা পাওয়ার আশায় নিজের মেয়ে শিশুকে দিয়ে ভিক্ষে করাতেই মা হোসনে আরা বেগম (৩৭)। ভুক্তভোগী শিশু সেই পোড়া শরীর নিয়ে ভিক্ষা করত। আর ওই ভিক্ষার টাকায় মা খেলতেন জুয়া। আদালতে বিচারকের সামনে মায়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনে ভুক্তভোগী শিশু।শুধু তাই নয়,  টাকার লোভে একসময় মেয়েকে কাজের জন্য একটি বাড়িতে দেন হোসনে আরা। পরে ওই বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে করেন অপহরণ মামলা। সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উন্মোচন করে মূল ঘটনা। পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালতে নির্দেশে মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয় হোসনে আরাকে।১২ মার্চ রোববার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার প্রর্বতক মোড়ের বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।অভিযুক্ত নারীর গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি সদরের ক্যান্টনমেন্টের জলযানঘাট এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল খালেক ভূঁইয়া। হোসনে আরার স্বামীর বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম থানা এলাকায়। তবে, তিনি বর্তমানে নগরের পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকার খালেকের কলোনিতে ভাড়া থাকেন।আদালত সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল মেয়ের অপহরণের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা দায়ের করেন হোসনে আরা বেগম নামে এক নারী।মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ৯ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি অর্থকষ্টে দিনযাপন করেন। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাশেদা আক্তার নিখোঁজ হয়। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল হোসনে আরা জানতে পারেন মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী ফারজানা রাশেদাকে তাদের কাছে আটকে রেখেছেন এবং তারা রাশেদাকে দিয়ে অমানবিক কাজ করাচ্ছেন। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর মামলাটি তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। তদন্তে জানা যায়, রাশেদাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করতেন তার মা হোসনে আরা। বেশি পরিমাণে ভিক্ষা পাওয়ার আশায় রাশেদার গায়ে পলিথিন পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দিতেন তার মা। একপর্যায়ে ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে রাশেদাকে একটি বাড়িতে কাজ করতে দেন হোসনে আরা।তবে সেখানে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছিলেন রাশেদা। কিন্তু রাশেদাকে আবারও ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর চেষ্টা করেন মা হোসনে আরা। নালিশি মামলার অভিযুক্তরা (মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী) তাতে বাধা দেন। এ কারণে হোসনে আরা আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে আদালতে একই ধরনের জবানবন্দি দেয় ভুক্তভোগী রাশেদাও। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে মা হোসনে আরার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। আদেশে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী হতে বলা হয়। একই সঙ্গে পরিদর্শক মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের আদেশ পেয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম মামলাটির বাদী হন।মামলাটির তদন্তভার পান পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, হোসনে আরা নিজের মেয়েকে দিয়ে তিনি ভিক্ষা করান। ভিক্ষার সময় মানুষের সহানুভূতি পেতে তিনি মেয়ের শরীরে পলিথিন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। এরপর সন্তানের ভিক্ষার টাকা দিয়ে তিনি জুয়া এবং ছক্কা খেলেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী শিশু রাশেদাকে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য রেখে আসেন। ওই বাড়ির লোকজনকে অহেতুক হয়রানি করে টাকা আদায়ের জন্য তিনি মিথ্যা মামলার দায়ের করেছেন। সেই মামলায় পিবিআই প্রতিবেদন দিলে উল্টো হোসনে আরার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30