রমজান প্রামাণিক- চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
১৯৭৫ ইং সালের ১৫ই আগষ্ট এই দিনে ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর নিজ বাড়িতে সহপরিবারে দূর্বিত্তদের গুলিতে নিহত হন
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সদস্য। আজ জাতীয় শোক দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও শোকের দিন ১৫ আগস্ট।
প্রতি বছর দিনটি আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে। দিবসটি যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালন করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৫ আগস্ট নৃশংস হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, কর্নেল জামিল, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে।
এ হামলা থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এ সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে সন্তানসহ অবস্থান করেন শেখ হাসিনা। সেখানে বড় বোনের সঙ্গে শেখ রেহানাও ছিলেন।
সেদিন ভোরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে কাপুরুষোচিত হামলা চালায় ঘাতকরা। এ নারকীয় হামলার পর দেখা গেছে, ভবনের প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁজরা হয়ে গেছে।
চারপাশে রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র। প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে আছেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ। তার তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁজরা। পাশেই পড়ে ছিল তার ভাঙা চশমা ও অতি প্রিয় তামাকের পাইপ। এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
ছাত্র অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফার প্রণেতাও ছিলেন তিনি। ’৭০-এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বজ দৃপ্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত বাঙালি জাতি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এ স্বাধীন বাংলাদেশ
সারা দেশের ন্যায় চৌহালী উপজেলাতেও বঙ্গবন্ধুর ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় শোক দিবস পালিত,আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত উনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মোমিন মন্ডল কিন্তু তিনি উপস্থিত না থাকায়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গরিবের সরকার নামে খ্যাত নন্দিত জননেতা জনাব ফারুক সরকার চেয়ারম্যান চৌহালী উপজেলা পরিষদ, ও সাধারণ সম্পাদক চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তাহির, উপজেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আবু নজির মিয়া, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হযরত আলী মাস্টার, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান (হাবিব) মোঃ রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস অফিসার ইনচার্জ চৌহালী উপজেলা, চৌহালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোল্লা বাবুল আক্তার, চৌহালী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আক্তার, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক মোঃ আরিফ সরকার, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ এর উদ্যোগে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।তার পর শোক যাত্রা টি দলীয় কার্যালয় থেকে শোক র্যালিটি উপজেলা পরিষদ হল রুম পর্যন্ত পদক্ষিন করে এসে।তারপর উপজেলা হল রুমে বঙ্গবন্ধু ৪৪ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।