১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

গাইবান্ধায় স্কুলছাত্রী থেকে যে ভাবে ‘ইয়াবা কুইন’ স্বপ্না

অভিযোগ
প্রকাশিত আগস্ট ৮, ২০১৯
গাইবান্ধায় স্কুলছাত্রী থেকে যে ভাবে ‘ইয়াবা কুইন’ স্বপ্না

 

মেয়েটির নাম স্বপ্না। কিশোরী বয়সেই মাদকাসক্ত হয়ে যায় স্বপ্না। সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে অন্ধকার জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দিয়েছে আদুরী আকতার স্বপ্না।

যে বয়সে পড়াশোনা করে জীবন গড়ার কথা, সে বয়সেই মেয়েটি ইয়াবার নেশায় প্রচণ্ডভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। গডফাদারদের নির্দেশে ইয়াবা বহন করে নিয়ে যেত দূর-দূরান্তে। ইয়াবা মাদকের অন্ধকার জগতে সে ‘ইয়াবা কুইন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে কিশোরী স্বপ্না বলে, ‘রুমা আপা আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন সে আমার মুখে ইয়াবা তুলে দেয়। অন্যদিকে অভাবের সংসারের দায় সারতে ও নেশা থেকে আমার জীবন রক্ষা করতে মা-বাবা অল্প বয়সেই আমাকে বিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে আমি ইয়াবা কুইন।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের তালুকরিফাইতপুর গ্রামের মেয়ে আদুরী আকতার স্বপ্না। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে বড়। বাবার টানাটানির সংসারে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল দিন। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন স্বপ্নার মা। স্কুলে পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দেওয়ার চেষ্টা করতেন।

২০১৫ সালে জেএসসি পাস করে স্বপ্না। কিশোরী বয়সেই বাবা-মা স্বপ্নাকে বিয়ে দেন পাশের গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে।

বিয়ের পর ট্রেনে স্বামীর সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার পথে স্বপ্নার পরিচয় হয় রুমা নামের এক নারীর সঙ্গে। রুমার বাড়ি গাইবান্ধা শহরে বলে জানায় স্বপ্না। রুমা স্বপ্নাকে তাঁর যাত্রাবাড়ীর বাসায় থাকতে দেন। স্বপ্নাকে বলেন, ‘এখানে থেকে চাকরি খুঁজে নিও।’

তখনো এই কিশোরী বুঝতে পারেনি রুমার আসল উদ্দেশ্য। রুমা ধীরে ধীরে স্বপ্নাকে ইয়াবা সেবনে আগ্রহী করে তোলে। স্বপ্নার স্বামী রেজাউলকে রুমা বলেন, ‘আপনি কাজ খুঁজুন।’

দেখতে দেখতে যাত্রাবাড়ীর রুমার বাড়িতেই ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। একপর্যায়ে স্বপ্নাকে বাধ্য করা হয় নানা ধরনের অনৈতিক কাজ করতে।

এদিকে স্বপ্নার স্বামী আর তার কাছে ফিরে আসেনি। এরপর গাইবান্ধায় নিজ এলাকায় ফিরে আসে স্বপ্না। নিজের নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য যোগাযোগ করা শুরু করে গাইবান্ধার ইয়াবা বিক্রেতাদের সঙ্গে। জড়িয়ে পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে। ইয়াবার টাকা জোগাড় করতে অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে স্বপ্না। ঝুঁকে পড়ে অপরাধ জগতের দিকে।

বাদিয়াখালী, বোনারপাড়া, রিফাইতপুর, গাইবান্ধা শহর এমনকি বগুড়ায় তার যোগাযোগ হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের সঙ্গে। তাদের কথামতো ইয়াবা বহন করে স্বপ্না নিয়ে যায় দূর-দূরান্তে গ্রাহকের কাছে। এলাকায় এই কিশোরীকে সবাই এক নামে চেনে।

পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর স্বপ্না জানায়, নেশার টাকা জোগাড় করার জন্যই বাধ্য হয়ে সে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

সাংবাদিকের কাছে স্বপ্না বলে, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি এখন ইয়াবা কুইন। কয়জন আছে আমার মতো? পথে কেউ ইচ্ছে করে আসে না। আমাকে এ পথে ঠেলে দেওয়া রুমা আপাদের প্রতিরোধ করুন। না হলে আমার মতো অনেক কিশোরী মেয়ে আসল পথ হারিয়ে ফেলবে।’

গত সোমবার রাতে গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশ বাদিয়াখালীর তালুকরিফাইতপুর থেকে ওই কিশোরীসহ কয়েকজনকে আটক করার পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031