১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্ব্যবহারে বীরমুক্তিযোদ্ধা নিহত

অভিযোগ
প্রকাশিত জুন ২৯, ২০২১
গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্ব্যবহারে বীরমুক্তিযোদ্ধা নিহত

গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্ব্যবহারে বীরমুক্তিযোদ্ধা নিহত

রবিউল আলম স্টাফ রিপোর্টারঃ-গাজীপুর

ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দুর্ব্যবহারে তাৎক্ষনিক স্টোকে আক্রান্ত হয়ে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত বীরমুক্তিযোদ্ধার নাম কফিল উদ্দিন ফকির (৭০)। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার বটতলা সাজিম সুয়েটার কারখানার গেটে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাজিম সুয়েটার কারখানার সুপারভাইজার শকিল জানান, গত শনিবার সকাল ১১টায় ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাজিম সুয়েটার কারখানায় প্রবেশ করেন। এসময় কয়েকজন শ্রমিক মাস্ক পড়া না থাকায় তিনি কারখানার মালিককে ডেকে আনেন এবং কারখানার চাবি চেয়ে নেন।

পরে ম্যাজিস্ট্রেট কারখানায় তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান। জরুরী শিপমেন্ট থাকায় বিকল্প চাবি দিয়ে কারখানা খুলে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ওই একই ম্যাজিস্ট্রেট পুনরায় কারখানায় আসেন। এসময় ক্রেতাপক্ষের মান নিয়ন্ত্রক (কিউসি) বিল্লাল মাস্ক পড়া ছিলেন না। এ অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট কিউসি বিল্লালকে লাঠি দিয়ে বেদড়ক পিটাতে থাকেন। এ দৃশ্য দেশে কারখানার মালিক মতিউর রহমানের বৃদ্ধ পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন ফকির এগিয়ে যান এবং কারখানার ক্রেতাপক্ষের প্রতিনিধিকে মারধরের কারণ জানতে চান।

এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যজিস্ট্রেট টঙ্গী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার সাব্বির আহমেদ বীরমুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিনের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। সুপারভাইজারর শাকিল ও প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী হযরত আলী জানান, ম্যাজিস্ট্রেট বীরমুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিনকে ঘাড় ধরে কারখানা থেকে বের করে দেন। এব্যাপারে কারখানার মালিক মতিউর রহমান জানান, গত শনিবার কারখানা বন্ধ করে চাবি নিয়ে যাওয়ার পর বেলা ২টায় ম্যাজিস্ট্রেট তাকে এক লাখ টাকা নিয়ে তার (ম্যাজিস্ট্রেটের) অফিসে যেতে বলেন এবং টাকা দিয়ে চাবি নিয়ে যেতে বলেন। তিনি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে পুনরায় ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে আবারো ফোন দিয়ে চাবির জন্য যেতে বলেন।

এসময় তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান তার কাছে বিকল্প চাবি আছে। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে বিকল্প চাবি দিয়েই কারখানা খুলতে বললে তিনি কারখানা খুলে উৎপাদন শুরু করেন। মতিউর রহমান আরো জানান, কারখানায় তালা দেওয়ার কারণে তার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়র জন্য এবং যথা সময়ে কার্যাদেশ সরবরাহের জন্য সারারাত কারখানা চালু রাখেন। সোমবারও তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলেন। এঅবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় ওই ম্যাজিস্ট্রেট তার কারখানায় আবার হানা দেন। ম্যাজিস্ট্রেটের চরম দুর্ববহারে তার পিতা স্টোক করে মাটিতে পড়ে গেলে তিনি (ম্যাজিস্ট্রেট) কোন রকম সহযোগিতা না করে বরং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

মতিউর রহমান আরো বলেন, আমার বাবা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং তার বুকে মুক্তিযোদ্ধার ব্যাচ পড়া ছিল। এসব জেনেও ম্যাজিস্ট্রেট আমার পিতার প্রতি বিন্দু পরিমাণ সম্মান প্রদর্শন করেননি। তার উচিত ছিল আমার বাবাকে ভ্রাম্যমান আদালতের গাড়িতে করে হাসাপাতালে নেয়ার। কিন্তু তিনি কোন ধরণের সহযেগিতা না করায় এবং তাৎক্ষনিকভাবে কোন গাড়ী বা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে আমরা কর্মচারীদের সহযোগিতায় আমার বাবাকে ইজিবাইকে করে তাইরুন্নেচ্ছা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে এব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টঙ্গী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) কমিশনার অভিযুক্ত সাব্বির আহমেদ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এব্যাপাারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিও ঘটনাটি শুনেছে। এব্যাপারে তদন্ত করে ম্যাজিস্ট্রেটের দোষ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031