২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান ও দেহরক্ষী জাহিদের এক বছরের কারাদণ্ড

অভিযোগ
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০২০
হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান ও দেহরক্ষী জাহিদের এক বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের দ্বিতীয় ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ও দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ রাজধানীর চকবাজারে হাজি সেলিমের বাসার নিচে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

আশিক বিল্লাহ জানান, অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাস এবং মাদক রাখা ও সেবনের দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

এ ছাড়া তাঁর কক্ষ থেকে লাইসেন্স বিহীন বিদেশি অস্ত্র, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফ কেইস, মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেহরক্ষী মো. জাহিদের কাছ থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

আশিক বিল্লাহ বলেন, এ ছাড়া আমরা তাঁদের কাছ থেকে গুলি, হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন এবং কন্ট্রোল রুম থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ভেরি হাই সিকিউরিটি সেট (ভিএইচএস) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা ওয়াকিটকির একটি আধুনিক সংস্করণ। এ ছাড়া ওই বাসায় টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এর আগে আজ দুপুর থেকে চকবাজারের ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ি’ ঘিরে রাখেন র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। পরে তাঁরা বাসায় প্রবেশ করেন। ২৬, দেবীদাস ঘাট লেনের বাড়িটি ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের।

অভিযানকালে ওই বাড়িটিকে ঘিরে শত শত মানুষ জড়ো হয় চকবাজার এলাকায়। আটতলা বিশিষ্ট বাড়িতে হাজি সেলিম নিজে এবং তাঁর ছেলেরা থাকেন।

হাজি সেলিমের তিন ছেলে। তাঁর মেজ ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম থাকেন পঞ্চম তলায়।

চতুর্থ তলায় থাকেন ইরফান সেলিমের স্ত্রী, বাড়ির দ্বিতীয় তলায় হাজি সেলিম এবং ষষ্ঠ তলায় থাকেন বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম।

ছোট ছেলে আশিক সেলিম অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করেন। বাকি তলাগুলো ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম গতকাল রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের ওপর হামলা মামলার প্রধান আসামি। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদ মামলার ৩ নম্বর আসামি। ওই মামলার আসামি হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ইরফান সেলিমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা করেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ। বিষয়টি নিশ্চিত করে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম আলী মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল রাতের ঘটনায় আজ সোমবার সকালে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৬। এ মামলার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওয়াসিফ আহমদকে রক্তাক্ত দেখা যায়। ভিডিওতে তাঁকে মারধর করে তাঁর দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে বলেও দাবি করেন।

মামলার এজাহারে যা আছে

মামলার এজাহারে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বলেন, আমি ওয়াসিফ আহমদ খান (২৬), পিতা-ওয়ালিদ খান ইউসুফজাই, সাং-স্থায়ী ঠিকানা-১৩/২২, ব্লক-বি, বাবর রোড, থানা-মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বর্তমানে লেফটেন্যান্ট পদে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি হাজী মহসীন, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা-১২০৬ এ কর্মরত আছি।

থানায় হাজির হয়ে বিবাদী ১. ইরফান সেলিম (৩৭), পিতা-হাজি মো. সেলিম, সাং-বড় কাটারা দেবীদাস ঘাট, থানা চকবাজার, ঢাকা; ২. এবি সিদ্দিক দিপু (৪৫), পিতা+ঠিকানা-অজ্ঞাত, ৩. মো. জাহিদ (৩৫), পিতা+ঠিকানা-অজ্ঞাত, ৪. মো. মিজানুর রহমান (৩০), পিতা-মনিরুজ্জামান, সাং-আদর্শপাড়া, থানা ও জেলা-পিরোজপুর, বর্তমানে হোসেনী দালান, থানা-চকবাজার, ঢাকাসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করিতেছি যে, গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে আমি এবং আমার স্ত্রী আনান আদ্রিতা নীলক্ষেত থেকে পাঠ্যবই ক্রয় সমাপনান্তে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলযোগে কর্মস্থল বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি হাজী মহসিন, ঢাকা সেনানিবাস ফেরার পথে ধানমণ্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় প্রধান সড়কের ওপরে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ গাড়িটি আমার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।

অতঃপর বর্ণিত ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ গাড়িটি থেকে একজন ব্যক্তি নেমে আসলে আমি উক্ত ব্যক্তিকে আমার পরিচয় প্রদান করা সত্ত্বেও আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে অশ্লীল এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ হত্যার হুমকি প্রদান করত দ্রুতগাড়িতে আরোহন করে স্থান ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে আনুমানিক ১৯.৪৫ ঘটিকায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিপরীত পাশে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড সিগন্যালে বর্ণিত গাড়িটি দাঁড়ালে, আমি উক্ত গাড়ির বাম পাশে গিয়ে মোটরসাইকেলটি থামাই এবং জানালায় নক করি। অতঃপর উক্ত গাড়ির সব আরোহী গাড়ি থেকে নেমে আসলে পুনরায় আমার পরিচয় প্রদান করি।

এতদ্বসত্ত্বেও বর্ণিত গাড়ির সব আরোহী আমার উদ্দেশে বলেন যে, ‘তোর নৌবাহিনী সেনাবাহিনী বাইর করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বাইর করতেছি, তোকে এখনই মেরে ফেলব।

এরপর বর্ণিত গাড়ির সব আরোহী পথরোধ করে আমার ওপর অতর্কিতে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অংশে কিল-ঘুষি এবং লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে অনবরত আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত করেন।

একই সময় আমার স্ত্রী আমাকে রক্ষা করতে গেলে তাঁকেও ধাক্কা দেয় এবং এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে দ্রুত উক্ত স্থান ত্যাগ করে। আমি মাটিতে রক্তাক্ত ও আহত হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় সাধারণ জনগণ ও পাশের সিগন্যালে ডিউটিরত পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেন এবং ড্রাইভারসহ গাড়িটি আটক করেন।

এ সময় সাধারণ জনগণ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। উক্ত সময়ে বর্ণিত গাড়ির একজন আরোহীর ব্যক্তিগত আইডি কার্ডসহ অন্যান্য আক্রমণকারীদের ছবি তুলতে সক্ষম হই।

উক্ত ব্যক্তিগত আইডি কার্ডের মাধ্যমে জানতে পারি জনৈক ব্যক্তি ২ নম্বর বিবাদী এবি সিদ্দিক দিপু, প্রটোকল অফিসার হিসেবে মদিনা গ্রুপে কর্মরত।

তা ছাড়া আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে আক্রমণকারী সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই, যিনি ঢাকা-৭ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের পুত্র ১ নম্বর বিবাদী ইরফান সেলিম (কাউন্সিলর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা)।

পরবর্তীতে বর্ণিত গাড়িতে থাকা ড্রাইভার ব্যতীত সবাই পালিয়ে যায় এবং ওই সিগন্যালে ডিউটিরত পুলিশ ধানমণ্ডি মডেল থানার অফিসার ফোর্স আমাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যান।

পরবর্তীতে আমার ইউনিট কর্তৃপক্ষ সংবাদ পেয়ে আমাকে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। একই সঙ্গে টহলরত পুলিশ বর্ণিত গাড়ি ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ এর চালককে হেফাজতে নেন। উক্ত ড্রাইভারকে তাঁর নাম জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের ও বিবাদীদের উপরোল্লিখিত নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন।

অপর একজন আক্রমণকারী ৩ নম্বর বিবাদী ১ নম্বর বিবাদীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মো. জাহিদের নামও উক্ত ঘটনার সময় উপস্থিত আক্রমণকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30