৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শ্রীবরদী সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধি, প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়রাণীর শিকার

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
শ্রীবরদী সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধি, প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়রাণীর শিকার

 

মোঃ তারিফুল আলম (তমাল),শেরপুর থেকেঃ
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত পথে চোরাচালান আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এসব চোরাচালানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নাজেহাল ও হয়রাণীর শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

জানা গেছে, স্থানীয় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বালিজুড়ি, কর্নঝুড়া, লাউচাপড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভারত থেকে চোরাই পথে মাদক, গাঁজা, ইয়াবা, হিরোইন, মোটরসাইকেল, গরুসহ ভারতীয় নিষিদ্ধ ঘোষিত পন্য আমদানী করে আসছে।

 

এসব পন্য আমদানী করে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে অবাধে বাজারজাতের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে।

 

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, সীমান্তের বিভিন্ন হাট -বাজারগুলোতে ভারতীয় চোরাই গরুসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত পন্য অবাধে বেচা -কেনার পাশাপাশি চলছে জমজমাট হুন্ডি ব্যবসা।

 

অভিযোগ রয়েছে, এসব চোরাকারবারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থানা পুলিশ, সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়মিত বখরা আদায় করছে কর্নঝুড়া গ্রামের জনৈক মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব।

 

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র জানায়, ভারত থেকে চোরাই গরু নেমে আসার সাথে সাথে মাহাবুবুর রহমান বিপ্লবের মাধ্যমে বাজারের ইজারাদারের কাছ থেকে গরু ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সংগ্রহ করে অবৈধ গরু বৈধতা দেয়া হচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব গত ২ বছর আগে প্রায় ৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। তিনি বর্তমানে কণঝোড়া বাজারে তথাকথিত ইজারাদার।

 

এ সুবাদে তিনি বিভিন্ন দপ্তরের লাইনম্যান হিসেবে চোরাকারবারীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করে থাকেন। বিভিন্ন দপ্তরের মাসোহারা আদায় করার কারনে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। আবার প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর নেমে আসে হামলা ও মিথ্যা মামলা।

 

এ ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। বর্তমানে মাহবুবুর রহমান বিপ্লবের হাতে জিম্মি সিঙ্গাবরুনা ইউনিয়নবাসী। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তে অবাধে চলছে জমজমাট চোরাচালানীর ব্যবসা। এ সীমান্তে চোরাচালানী বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএসএফএর গুলিতে মাঝে মধ্যেই ঘটছে সীমান্ত হত্যা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত কয়েক বছরে ২০ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছে।

 

এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন চোরাকারবারী নিখোঁজও রয়েছে। সিংগাবরুনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বলেন, চোরাকারবারীদের সাথে আইনশৃংখলা বাহিনী ও বিজিবির সক্ষতা দেখে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ বা মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পায় না। আবার কেউ মুখ খুললে উল্টো চোরাকারবারিদের দেয়া মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে হয়রানীর শিকার হতে হয়।

 

গত ২৫ জুলাই কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা চোরাচালান প্রতিরোধের লক্ষ্যে বগুলাকান্দি গ্রামের সমর আলীর বাড়ি থেকে ভারতীয় ৪ টি চোরাই গরু উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে জিম্মায় রাখেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ গরু ৪টি থানা পুলিশে দেন। এদিকে ওই ভারতীয় ৪টি চোরাই গরুর ক্রয় বিক্রয়ের রশিদ দেন কর্নঝুড়া বাজারের তথাকথিত ইজারাদার ও লাইনম্যান নামধারী মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব।

 

ওই রশিদ সংগ্রহ করে চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্য সমর আলী প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নামে আদালতে একটি হয়রাণীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে জামালপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

 

এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরে সিংগাবরুনা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার মোঃ নুরুল ইসলামসহ গ্রামবাসীরা ঘটনার বিচারের দাবিতে শেরপুরের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

 

এছাড়া সীমান্তে চোরাচালান তৎপরতা বন্ধে ও অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই সিঙ্গাবরুনা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

 

শ্রীবরদী উপজেলার কর্নঝুড়া বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি এক সপ্তাহ আগে এই ক্যাম্পে যোগদান করেছি। চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পক্ষ থেকে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি এখানে আসার পূর্বে গত ২ মাসে ৫টি চোরাই গরু ও ৩ টি মাদক মামলা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031