নাইম উদ্দিন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ-
আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভ‚মির নওগাঁর পোরশা উপজেলা আদিবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করেন।
বৃহস্পতিবার, সকাল থেকে দুই দিনব্যাপী জেলার পোরশা উপজেলার দেউলিয়া দুর্গা মন্দির মাঠে এ উৎসব পালিত হয়।
এ উপলক্ষে নওগাঁর সাপাহার ,মহাদেবপুর উপজেলা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আদিবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সভাপতি ও বিশেষ অতিথি মাটেন, ASA প্রকল্পের ম্যানেজার গোড়ায় বন্টে , কারিতাস মাঠকর্মী বনয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল সুপিন পাহান ও স্কুলের সভাপতি বিজয়।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে নাটশাল মাঠে নিয়মিত পালন করা হয় কারাম উৎসব। কারাম একটি গাছের নাম।
আদিবাসী বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বংশপরম্পরায় ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় পালন করা হয় এই পূজা। এ উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয়ে নওগাঁর আদিবাসী বসবাসরত এলাকাগুলো।
পূজার সময় আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরেন তাদের ধর্মগুরু। আদিবাসী বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন করায় তার ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের গাল কেটে আনেন।
এরপর সন্ধ্যায় পঞ্জিকা মতে পূর্ণিমা শুরু হলে কারাম ডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম এ উৎসব পালন করে। এ সময় পুরো এলাকা আদিবাসীসহ সব সম্প্রদায় হয়ে ওঠে মিলনমেলা।
পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরে জল বিসর্জন দেন। আদিবাসীরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।
এ উৎসবে বিভিন্ন জেলার সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন। জেলার পোরশা উপজেলার আদিবাসী ধর্মীয়গুরু বিজয় বলেন, প্রতি বছরই কারাম উৎসব করা হয়ে থাকে। এ উৎসবে দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়।
এতে করে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা হয়। এই বিশ্বাস থেকে বংশপরম্পরায় এই কারাম ডাল পূজা করে আসছে।
আদিবাসী পরিষদের সভাপতি মাটেন বলেন, এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসীদের নিজেদের ভাষা, সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সারা দেশে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার, উচ্ছেদ, নির্যাতন ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ করা। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা রক্ষার্থে সরকারিভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করেন তিনি।