২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

যশোরের শার্শায় উদ্ভাবক মিজানুর রহমানের ফ্রি খাবার বাড়ি চালু করেছেন

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
যশোরের শার্শায় উদ্ভাবক মিজানুর রহমানের ফ্রি খাবার বাড়ি চালু করেছেন

 

 

মোঃ শাফায়েত সবুজ,যশোর জেলা প্রতিনিধি:

পথ শিশু ও পাগলদের জন্য রান্না করা খাবার পরিবেশনে দেশ সেরা উদ্ভাবক শার্শা’র কৃতি সন্তান গরীবের বন্ধু হিসেবে খ্যাত হয়ে ওঠা মোঃ মিজানুর রহমান এবারে ব্যতিক্রমি উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। তিনি ঐ সকল মানুষদের জন্য নিজ উদ্যোগে দিবা-রাত্রি রান্না করা খাবার পরিবেশনে ফ্রি খাবার বাড়ি(সরাই খানা) চালু করেছেন।

 

যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারনে গার্লস স্কুল গেইট সংলগ্ন বাদল নার্সারীতে তিনি এই সরাইখানা উন্মোচন করেন। সরাই খানাটি উন্মোচনের জন্য প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার,জুয়েল ইমরান,নাভারন সার্কেল,যশোর।

 

আজ শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে জুয়েল ইমরান বেশ কিছু পথ শিশু ও পাগলদের মাঝে রান্না করা খাবার পরিবেশন করে উদ্ভাবক মিজানুর রহমান এর ফ্রি খাবার বাড়ি উন্মোচন করে দেন। এ সময় কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে পবিত্র কোরআন শরীফ তুলে দেওয়া হয়।

 

ফ্রি খাবার বাড়ি উন্মোচন শেষে উদ্ভাবক মিজানুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ ইং সাল থেকে তিনি শার্শা উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাতেও গরীব,অসহায়,পথশিশু,মানসিক বিকারগ্রস্থ(পাগল),রাস্তার বেওয়ারেশ কুকুর এবং পশুপক্ষীদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করে আসছেন। নির্দিষ্ট কোন সরাইখানা না থাকায় বা নিজের কোন জায়গা না থাকায় এ সকল খাবার পরিবেশনে বেশ কষ্ট হচ্ছিল বলে তিনি জানান।

 

ফ্রি খাবার বাড়ি চালু করায় তিনি ঐ সকল গরীব অসহায়দেরকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। “ক্ষুধা লাগলে,খেয়ে যান” মানব সেবা হেল্প ফাউন্ডেশনের এ রকম একটি শ্লোগান তিনি ব্যবহার করেছেন।

 

উদ্ভাবক মিজানুর রহমান এর এমন ব্যতিক্রমি উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। তারা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগের কারনে এলাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা কমে আসবে অবশ্যম্ভাবি।

 

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে মিজানুর তার সপ্তম উদ্ভাবন করেছেন ফ্যামিলি মোটরযান দিয়ে। মিজানের অষ্টম উদ্ভাবনে রয়েছে পরিবেশ সেইফটি যন্ত্র। এটি পরিবেশ রক্ষার্থে বহুমুখী কাজ করে থাকে। যন্ত্রটি বাড়ি, অফিস বা কলকারখানায় ময়লা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। হাতের স্পর্শ ছাড়াই এ যন্ত্রটি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার হয়। এ যন্ত্রটি উদ্ভাবনের পর ২০১৬ সালের ৫ জুন জাতীয় পর্যায়ে মিজান পরিবেশ পদক লাভ করেন।

 

আর্থিক অনটনের কারণে বেশি দূর পড়াশোনায় এগিয়ে যেতে পারেননি মিজানুর রহমান। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলায় বেছে নিতে হয় মোটর মেকানিকের কাজ। যন্ত্রপাতি আর লোহালক্কড়ের সঙ্গে সেই পথচলা শুরু। কে বা জানত এই মানুষটি একদিন অতিসাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি করে ফেলবেন অটোমেটিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পরিবেশ দূষণ যন্ত্র আর স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্রসহ ৮টি উদ্ভাবন।

 

যশোরের শার্শা উপজেলার এই মোটরসাইকেল মেকানিক মিজান এখন দেশসেরা আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক হতে যাচ্ছেন। মিজানের একাডেমিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও আজ তিনি নিজের আলোয় আলোকিত। নতুন চিন্তা আর নতুন গবেষণায় আজ তার আবিষ্কারের সংখ্যা ৮টি।

 

শার্শা উপজেলার নজিমপুর ইউনিয়নের আমতলা গাতিপাড়ার অজপাড়া গাঁয়ে ১৯৭১ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন মিজান। পিতা আক্কাস আলী ও মাতা খোদেজা খাতুন। পিতা-মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে মিজান পঞ্চম। বর্তমান শার্শা উপজেলা সদরের শ্যামলাগাছি গ্রামে তিনি বাস করেন। ৮-৯ বছর বয়সেই বেঁচে থাকার তাগিদে নেমে পড়েন মজুরের কাজে। মাঠে শ্যালো মেশিন চালানো এবং মেরামতের কাজ করেন মিজান। এরপর নাভারন বাজারে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ পান। সেখান থেকেই তার মোটর মেকানিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে শার্শা বাজারে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ রয়েছে তার।

 

ছোটবেলা থেকেই তার শখ ছিল নতুন কিছু করা। তবে মেকানিক হিসেবে তার ইঞ্জিন তৈরি করতে প্রবল আগ্রহ ছিল।

 

মিজান প্রথমে উদ্ভাবন করেন হাফ ক্রানসেপ্ট দিয়ে একটি আলগা ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের সব যন্ত্রপাতি দেখা যেত বাইরে থেকে। এ ইঞ্জিনটি একবার জ্বালানি তেল দিয়ে চালু করলে পরবর্তীতে আর তেল লাগত না। ইঞ্জিনের সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে জ্বালানি তৈরি করে নিজে নিজে চলত ইঞ্জিনটি।

 

ঢাকার তাজরীন গার্মেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির পর মিজান দ্বিতীয় গবেষণা করে উদ্ভাবন করেন স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, যা বাসা বাড়ি, কলকারখানা, অফিস-আদালতে আগুন লাগলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষার্থে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে আগুন নেভাতে শুরু করে।

 

এটি বিদ্যুৎ না থাকলেও চলবে। কোনো জায়গায় আগুন লাগলে যন্ত্রটি তার তাপমাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্রের মাধ্যমে আগুনের অবস্থান নিশ্চিত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম ও লাইট অন করে দেয়।

 

এরপর একই সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফোন করে দেয়, পাশাপাশি যন্ত্রটি পানির পাম্পে সুইচ অন করে দেয়। যা আগুনের অবস্থান নিশ্চিতের ৫-৭ সেকেন্ডের মধ্যেই সম্ভব হয়।

 

অতঃপর পানির পাম্পের সঙ্গে সংযুক্ত পাইপের মাধ্যমে আগুনের অবস্থান পৌঁছে দেয় এবং অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত ফাঁপা বলয়ের পানি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আগুন নিভে যায়। এটি উদ্ভাবনীর পর ২০১৫ সালে জেলা স্কুলের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় মিজান এটি প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে এটি বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। দেশে পেট্রলবোমায় যখন মানুষের ক্ষতি হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে মিজান উদ্ভাবন করেন তার তৃতীয় উদ্ভাবন অগ্নিনিরোধ জ্যাকেট। এ জ্যাকেট পরে ড্রাইভার বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে পারবেন।

 

তার চতুর্থ উদ্ভাবন অগ্নিনিরোধ হেলমেট। এটি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আগুনে গলার শ্বাসনালি পুড়বে না। তার পঞ্চম উদ্ভাবন হলো প্রতিবন্ধীদের জীবন-মান উন্নয়নে মোটরকার। এটা বিদ্যুৎ বা পেট্রলচালিত।

 

কৃষকদের জন্য স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্র উদ্ভাবন হলো তার ষষ্ঠ উদ্ভাবন। কৃষকদের দূর-দূরান্তের মাঠের জমিতে পানি দিতে আর যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই সেচযন্ত্রটি।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30