৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লক্ষ্মীপুরে চোরের বিচার করতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০
লক্ষ্মীপুরে চোরের বিচার করতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল

 

মু.ইসমাইল হোসাইন (রনি),জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুরঃ-

 

লক্ষ্মীপুর জেলা সদর ২০ নং চর রমনী মোহন ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ডে গত (২৪আগস্ট) আমির হোসেন নামের এক চোরের বিচার করতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন অত্র ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট সোমবার গভীর রাতে ৩;৩০ মিনিটের সময় আমির হোসেন নামের এক চোর সাইফিয়া দরবার শরীফ মাদ্রাসা বাচ্চু মাস্টারের দালান ঘরের সানসেটের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলে, পরিশেষে সানসেট দিয়ে না ঢুকতে পেরে ঘরের পিছনের ৩ ফুট দেয়ালের উপর টিনের বেড়া ধাক্কা দিয়ে ছোট মইয়ের উপর উঠে বাচ্চু মাস্টারের ঘরে প্রবেশ করে।

 

ঘরে থাকা বাচ্চু মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনরা দেখতে পেল কে যেন তাদের ঘরে প্রবেশ করল, তখনই তারা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকে। বাচ্চু মাস্টারের আশেপাশের প্রতিবেশীরা তাৎক্ষণিক ছুটে আসেন। এরইমধ্যে চোর আমির হোসেন ব্যবহৃত চুরি ও পাটের বস্তা রেখে দৌড়ে পালাতে গিয়ে লোকজনের হাতে ধরা পড়ে। সেখান থেকে আশেপাশের লোকজন চোরকে ধরে গাছের সাথে বেধে রাখে।

 

স্থানীয় লোকজন চৌকিদার ও অত্র ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার স্বপনকে চোর সম্পর্কে অবগত করেন। ঘটনাস্থলে এসে স্বপন মেম্বার চোরকে গাছের সাথে বাধা দেখেন। তাৎক্ষণিক তিনি সোহাগ ও শরীফ কে দিয়ে চোরকে গাছের সাথে বাধা রশি খুলে পেলে। মেম্বার ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো ঘটনা জানার পর চেয়ারম্যান কে অবহিত করেন।

 

এরই ফাঁকে এলাকার মান্যগণ্য সকলেই চেয়ারম্যানকে বলেন প্রশাসনকে না জানানোর জন্য। চোর আমির হোসেনের আত্মীয়-স্বজন এসে অত্র ইউপি সদস্য কে অনুরোধ করে বলে আপনারা আমিরকে প্রশাসনের হাতে না তুলে দিয়ে নিজেরা বিচার করে দিন। পুনরায় ওয়ার্ড ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান কে গ্রাম্য সালিশ করে মীমাংসা করার জন্য বলেন। চেয়ারমান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ২৪ শে আগস্ট বেলা ১২;৩০ সময় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান।

 

চোর আমির হোসেন দীর্ঘদিন থেকে অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন ঘরে চুরি করার অভিযোগ রয়েছে, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মহিলাদের সাথে খারাপ আচরণ ও আশেপাশের মহিলারা গোসল করতে গেলে উকি মারার ও অভিযোগ রয়েছে।

 

চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর চোর আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ নং ওয়ার্ড এলাকা অনেক লোকের অভিযোগ শুনেন। চোর আমির হোসেনের আত্মীয় স্বজন এসে চেয়ারম্যানের হাতে-পায়ে ধরে বলে প্রশাসনের হাতের আমির হোসেনকে না তুলে দেওয়ার জন্য।

 

চেয়ারম্যান ও এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ চোর আমির হোসেনের পরিবারকে ভবিষ্যতে যেন আর চুরি কিংবা মহিলাদের সাথে খারাপ আচরণ না করার জন্য একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন।

 

ওই সাদা কাগজে লেখা ছিল ভবিষ্যতে আমির হোসেন চুরিদারি করবেনা, মহিলাদের সাথে খারাপ আচরণ করবে না, মহিলারা গোসল করতে গেলে উঁকিঝুঁকি মারবে না। পরবর্তীতে যদি তাকে কোথাও চুরি করার কথা শোনা যায় তাহলে সরাসরি প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে এই মর্মে আমির হোসেন ও তার পরিবারের লোকেরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন।

 

ওই সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল, ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য স্বপন, বাচ্চু মাস্টার, দেলোয়ার মুন্সি, হানিফ, ডাক্তার মহিম, সাইজুদ্দিন দেওয়ান সহ অত্র ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

 

পরিশেষে চোর আমির হোসেনকে বাচ্চু মাস্টারের ঘরে চুরি করতে ঢুকার অপরাধে এবং ভবিষ্যতে আর চুরি করবে না বলে ক্ষমা চেয়ে উক্ত বৈঠকে সম্পন্ন করেন।

 

গণমাধ্যমকর্মীরা আমির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালের নামে তার জমি দখলের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে আমির হোসেনের পরিবারেরা লোকেরা কোনো প্রতি উত্তর দেয়নি।

 

আমির হোসেনের আশেপাশের বসবাসরত বেপারী বাড়ী, মাঝি বাড়ি, ভূঁইয়া বাড়ি, মোল্লাবাড়ি, মাইন উদ্দিন হুজুরের বাড়ি সহ আশেপাশের আরো অনেক বাড়ির লোকদের কে জিজ্ঞাসা করে চেয়ারম্যানের নামে জমি দখল প্রসঙ্গে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সকলে একযোগে বলেন এখান থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ি প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্ব। তিনি এখানে জমির জন্য কেন আসবেন। আর তিনি থাকেন সব সময় লক্ষ্মীপুরে। এটা পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মনে করেন ওখানকার সাধারণ মানুষ।

 

এ সময় আমির হোসেনের প্রতিবেশীরা চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলেন, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, আজ যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় হয়েছে সম্পূর্ণ আবু ইউসুফ এর প্রতিপক্ষ লোকদের কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। এভাবে যদি দেশ চলতে থাকে তাহলে দেশে অরাজকতার দিকে চলে যাবে, বিচার-আচার যদি দেশ থেকে উঠে যায় তাহলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে না।

 

গণমাধ্যমকর্মীরা চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালকে আমির হোসেনের বাড়ীর জমি ও সালিশ বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে চুরি হয়েছে দিনের দশটায় আমাকে বলেছে আমি মেম্বার ও প্রতিবেশীদের ফোন পেয়ে ২৪ আগস্ট বেলা ১২;৩০ মিনিটের সময় উক্ত সালিশে গিয়ে উপস্থিত হয়। তিনি বলেন সালিসে আশা কি আমার অপরাধ? এর আগে রাত্রে কি ঘটেছে, কিংবা কারা বেঁধেছে, কারা ছেড়েছে, এ ব্যাপারে আমি কোন কিছু জানিনা। আমি যখন ঘটনাস্থলে গিয়েছি তখন তাকে ভাদা পাইনি।

 

চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বলেন, আমি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করি, তেনারা যেন এবিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের যথাযথ আইনী ব্যবস্থা করেন। তদন্তে যদি আমি অপরাধ করে থাকি তাহলে আইনের কাঠগড়ায় আমিও দাঁড়াতে রাজি।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031