২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চট্টগ্রামের কালারপোল উচ্চ বিদ্যালয়ের এপিট ওপিট

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ১৩, ২০১৯
চট্টগ্রামের কালারপোল উচ্চ বিদ্যালয়ের এপিট ওপিট

চট্টগ্রাম ব্যুরো,

অনিয়ম, নারী কেলেংকারী, অর্থ আত্মসাৎ ও কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগের আলোকে তদন্তে প্রমাণ মিললেও বহাল তবিয়তে আছেন কালারপোল হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরী! এমন দাবি তুলেছে একটি স্থানীয় স্বার্থন্বেষী মহল।

অপর দিকে কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল চন্দ্র নাথ অভিযোগ গুলোর তদন্ত করে দু’মাস আগেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর বরাবরে।
এই বিষয়ে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, আমি শুনেছি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেছেন। গত দুমাস আগে বিভিন্ন ডকুমেন্ট সহ তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করেছি।

অভিযোগ উঠেছে, নানা কারণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রচার মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি প্রতিবেদন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরও বিভিন্ন দুর্বলতা রয়েছে। ভেতরের গোমর ফাঁস হবে এমন আশঙ্কায় কমিটির সভাপতির মুখও বন্ধ রয়েছে। তবে তিনি বাঁচার জন্য দুষ্কৃতিকারী মুরাদ ও সাগরের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন। অপরদিকে, বিদ্যালয়ের কর্তব্য-কর্মে অবহেলাকারী শিক্ষকরা ব্যতীত অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই গোপনে প্রধান শিক্ষককে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যারা কিছুদিন আগেও সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রধান শিক্ষকের পক্ষে দরখাস্ত দিয়েছিলেন।

খবর নিয়ে জানা যায়, কালারপোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরী’র উক্ত বিদ্যালয়ে যোগদানের মাত্র ১বছরের মাথায় শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন হয়েছে। গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জেএসসির ফলাফল চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফলের উপরে ছিল যা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিরল । কিন্তু পরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ কর্মে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেংকারী ও কোচিং বাণিজ্য-সহ নানা বিষয়ে ভূয়া অভিযোগ তুলে সাবেক ছাত্রদের একটি অংশ ও বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট শিক্ষকরা ও কর্মচারীরা। যার প্রকৃত সত্য উচ্চতর তদন্তে বের হতে পারে বলে বিশ্বাস । গতবছর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মাহমুদ উল হক চৌধুরী’র স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে লেখাপড়ার মান ও ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারের তদন্তে বলা হয়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী কয়েকজন মহিলা শিক্ষক ও তথ্য দিয়েছেন বিভিন্ন কাজের বাহানায় তাদেরকে প্রধান শিক্ষক সামনে বসিয়ে রেখে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে উত্যক্ত করতেন এবং জোর করে তার অফিসে বসিয়ে রাখতেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বয়স্ক ২ জন শিক্ষিকা ব্যতীত বাকী সব শিক্ষকা ও প্রধান শিক্ষক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালায় এবং প্রাণে মারার হুমকি দেয় একটি কুচক্রি মহল। এহেন অপপ্রচার হুমকি দেয়ায় অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ২ জন ব্যতীত সব শিক্ষকা মিলে থানায় জিডি করে। প্রধান শিক্ষকের উত্যক্তের বিষযে জানতে চাইলে শিক্ষিকাগণ জানান, সবই মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

গত ৮ জুলাই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে সাবেক ছাত্রদের একটি অংশ যারা স্কুলের ক্যান্টিন,জমিজমা,পুকুরের মাছ, নারিকেল ও সুপারিগাছসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্যায় আবদারে ব্যর্থ হয়ে মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেয়।

ইতিপূর্বে স্বার্থান্বেষীমহল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে দূর্বল করার জন্য ফেইসবুকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে, বলদ মার্কা কমিটি, সভাপতিকে পদত্যাগ করতে হবে ও প্রধান শিক্ষককে মারার হুমকি দেওয়ায় ভয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কুচক্রি মহলের সাথে হাত মিলায় সভাপতি ।

তথ্যমতে, আগে থেকে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তে ১১ জন ফাঁকিবাজ শিক্ষকের সংশোধনের নিমিত্তে শো-কজ ও প্রাতিষ্ঠানিক বেতন স্থগিত রাখা হয়। অথচ সভাপতি নিজে তাদেরকে কর্মবিরতি পালনে উস্কে দেয়। ছাত্রদেরও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলতে বিভিন্ন ভাবে প্ররোচনা দেয়ার নির্দেশ দেয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সিদ্ধান্ত নিতে স্কুলে বৈঠকে বসেছিলাম কিন্তু প্রধান শিক্ষক বৈঠকে আসেন নি। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বেশী কিছু বলা যাবে না আর তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল ফোন রেখে দেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক বলেন, সভাপতি দীর্ঘদিন যাবৎ যে অনিয়ম করে আসছেন তার বিষদ বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত সচিব(মাধ্যমিক) ড. মাহমুদ উল হক বরাবর গত জানুয়ারীতে অভিযোগ পাঠিয়েছি। যার কারণে উনি ক্ষিপ্ত হয়ে দুষ্কৃতিকারীদের সাথে মিলে ছাত্র ও শিক্ষকদের আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে বাধ্য করেছেন। মূলত: স্কুলের সাবেক ছাত্র প্রভাবশালী মহিউদ্দিন মুরাদ ও হাসান মুরাদ সাগর ছিল মানববন্ধনের উদ্দোক্তা।
তাদের হাতে মাস্টার সিরাজুর রহমান মারধরের শিকার হন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমাকে স্কুলে গেলে মারবে বলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে মহিউদ্দিন মুরাদ ও হাসান মুরাদ সাগর নামে দুজন স্থানীয় প্রভাবশালী লোক। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লিখেছেন আমি গেলে আমাকে স্কুল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে। তাই ভয়ে আমি স্কুলে যাইনি। তারা আমাকে না পেয়ে স্কুল কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমাকে বহিষ্কার করার জন্য রেজুলেশন করতে বৈঠক দেয়। বৈঠকে সভাপতিসহ ৪জন উপস্থিত ছিলেন। বাকী সদস্যরা তাদের এহেন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় বাকী সদস্যদের বাড়ী ও বাসায় গিয়ে ও মোবাইলে হুমকি দিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করছে তারা।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম স্কুল কমিটির সদস্যদের জমা করে বৈঠকে আসতে বলেছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত করাতে না পেরে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করছেন। ইতিমধ্যে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্কুল কমিটির সদস্য অাবদুচ ছবুরকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছেন।

স্কুল কমিটির আরেক সদস্যা রাবেয়া বেগম জানান, আমি ঐদিন বৈঠকে উপস্থিত হতে পারি নাই। তাই সিদ্ধান্ত না জেনে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাছান মুরাদ সাগর তাকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছে স্বাক্ষর করতে এবং বলতে থাকে প্রয়োজন বশতঃ স্কুল ধ্বংস করে দিব তারপরেও প্রধান শিক্ষককে বিতাড়িত করবো অতএব স্কুল কমিটির সদস্য হিসাবে আপনি স্বাক্ষর করবেন অন্যথায় এলাকা ছাড়তে হবে। এদিকে রাবেয়া বেগমের বাসার জমিদারের মাধ্যমেও প্রেসার দিচ্ছে স্বাক্ষর করতে। স্বাক্ষর না দিলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিকলবাহার ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি আজ হজ্বে যাচ্ছি। আমি তো স্কুল কমিটির কেউ না। আমি কেন কমিটির সদস্যদের মোবাইল করবো। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।

অপরদিকে মহিউদ্দিন মুরাদ ও হাসান মুরাদ সাগর জানান, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই এবং সম্পুর্ণ মিথ্যা তারা কাউকে ভয়ভীতি দেখায়নি। প্রধান শিক্ষকের বিষয়টা সম্পূর্ণ পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে পরে।

স্থানীয় জনগণের ভাষ্যমতে, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমস্যা হলে কমিটি তার ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু আন্দোলন ও মানববন্ধনের নামে ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে স্থানীয় একটি চক্র সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদেরকে ব্যবহার করছে। এরকম কোন নিয়ম বা সিষ্টেম আমরা কোনদিন দেখিনি। আন্দোলন ও মানববন্ধনের নামে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের উচ্ছৃঙ্খলতা শেখানোর মত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে একটি স্বার্থেন্বষীমহল। আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। এবিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগ ছিল কালারপোল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেংকারী, অর্থ আত্মসাৎ ও কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কিন্তু এগুলোর সত্যতা না পেয়ে প্রতিবেদনে আনীত অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠ কোন প্রমাণ যুক্ত না করে বেশির ভাগ সময় প্রধান শিক্ষকের অতীত মিথ্যা প্রমাণিত কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়েছে। আরো জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে তিনি ক্ষেপে গিয়ে তদন্ত রিপোর্টে পক্ষ পাতিত্ব করেন। তাছাড়া কর্ণফুলী উপজেলার ৮ জন প্রতিষ্ঠান প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর বিভিন্ন অনিয়ম উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দেন।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদন এর সত্যতা জানিয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের জন্য বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত বিধি সম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30