২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের ছেলেকে ডেকে নিয়ে মাদকের মামলা দিল পুলিশ

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ৬, ২০১৯

পুনম শাহরীয়ার ঋতু : গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ভিক্ষুকের রিক্সা চালক ছেলেকে থানায় ডেকে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আয়েস আলী।

বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে আয়েস আলী সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান।

এক স্থান থেকে আসামি আটক করে তা পরিবর্তন করে অন্য স্থান থেকে আটক দেখিয়ে ৩৪ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল সাংবাদিকদের থানায় ডেকে নিয়ে ওসি’র দেওয়া বক্তব্য থেকে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তার ছেলে কাউছার (২৭) পেশায় একজন রিক্সা চালক। যাত্রীদের প্রয়োজনে দূর-দূরান্তে রিক্সা নিয়ে যায়। গত ২০ জুন দিবাগত রাতে উপজেলার কাপাইশ গ্রামের মোন্তাজ উদ্দিন দর্জির ছেলে রাসেল দর্জিকে নিয়ে ছৈলাদি গ্রামে যায়। পরে তাকে নিয়ে ফেরার পথে ওই গ্রামের তমিজ শেখের ছেলে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) বোরহান শেখ তাদের পথ গতিরোধ করে। এ সময় রাসেল দর্জির দেহ তল্লাসি করে ৫০ পিস ইয়াবা জব্দ করে। বিষয়টি জানাজানি হলে একই গ্রামের সফুর উদ্দিন শেখের ছেলে তাইজুল ইসলাম, মৃত সামছু শেখের ছেলে বাদল শেখ ও মফিজ উদ্দিন ওরফে বুইড্ডা শেখের ছেলে জয়নাল শেখ বিষয়টি সমঝোতা করেন। এ সময় চৌকিদার বোরহানকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখালে ইয়াবা রেখে তাদের ছেড়ে দেয়। পরের দিন (২১ জুন) এ ঘটনায় সমঝোতাকারী তাজুলের বিকাশ নম্বরে ২ হাজার টাকা পাঠায় কাউছার। স্থানীয়রা বিষয়টি জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি গ্রাম পুলিশ সিদ্দিকের মাধ্যমে থানায় জানান। পরে ওইদিন রাতে থানার এসআই আব্দুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স ও দুই গ্রাম পুলিশ সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে তার বাড়ী থেকে আটক করে। পরের দিন (২২ জুন) সকালে গ্রাম পুলিশ বোরহান কাইছারকে ফোনে ডেকে আনে এবং চৌকিদার বোরহানের কাছে রাখা ৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রাম পুলিশ সিদ্দিককে সাথে নিয়ে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু ওই রাতে ওই এসআই বাদী হয়ে থানায় ৪৪ পিস ইয়াবা দেখিয়ে কাউছারের নামে একটি মাদক (নং ২৩) মামলা দায়ের করেন। পরদিন (২৩ জুন) সকালে রাসেলকে থার্টিফোরে এবং কাউছারকে মাদক মামলায় গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়। এদিকে পুলিশ রাসেলকে তার নিজ বাড়ী থেকে আটক করলেও তাকে নির্দোষ প্রমান করতে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয় তাকে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে।

আয়েস আলী প্রতিবেদককে জানান, আমি গরিব এবং টাকা দিতে পারিনি বলে রাসেলের কাছ থেকে উদ্ধার করা ইয়াবা দিয়ে আমার ছেলে কাউছারকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি ২ জুলাই এসপি ও ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি।

অপরদিকে মামলার সাক্ষী বোরহান বলেন, উপজেলার কাপাইশ গ্রামে রাসেলের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এসআই আব্দুর রহমান। সাক্ষী আজিম উদ্দিনও একই কথা বলেন।

অপর সাক্ষী পুলিশ কনস্টেবল পায়েলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে জানিয়েছিল, বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এসআই আব্দুর রহমান।

জামালপুরের সিদ্দিক চৌকিদারও বলেন রাসেলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ এবং দুজনকেই মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তাকে পুলিশ জানিয়েছে বলে জানান সিদ্দিক।

এসআই আব্দুর রহমানের মোবাইলে একাধীকবার ফোন দিলেও তিনি তা বিচ্ছিন্ন করেছেন।

এর আগে থানার ওসি মো. আবুবকর মিয়া স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক থানায় ডেকে নিয়ে ওই এসআই’র পক্ষে সাফাই গান। ওই সময় তিনি রাসেলকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটকের কথা বলেন। কিন্তু রাসেলকে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয় অন্য স্থানের কথা। এছাড়া কাউছারকে চৌকিদার ধরে দিয়েছে বলে জানালেও মামলার এজাহারা উল্লেখ করেছে এসআই নিজ হাতে আটক করে তার দেহ তল্লাশি কালে তার পরিহতি লুঙ্গীর পিছন দিকে গোঁজা অবস্থায় ছিল যা সে নিজ হাতে বের করে দিয়েছে বলে।

এ ব্যাপারে পরে আবার ওসি আবুবকর মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মামলার প্রয়োজনে পুলিশ যে কোন স্থানের কথা উল্লেখ্য করতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নাই।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে তিনি যেই হোন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30