২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সৈদেরগাঁও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল সহকারী এখন ডাক্তার

অভিযোগ
প্রকাশিত জুন ২৯, ২০১৯
সৈদেরগাঁও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল সহকারী এখন ডাক্তার

 

ছাতক প্রতিনিধিঃ-
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি অনিয়ম আর দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিনত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এ সেবা কেন্দ্রটিতে মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এম এল এস ও আয়া পদ শুন্য রয়েছে। কেন্দ্রটি পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা ও মেডিকেল সহকারী দিয়েই চলছে। এ সুবাদে কেন্দ্রের মেডিকেল সহকারী হারুন অর রশিদ ডাক্তারের চেয়ারে বসেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে ডাক্তার দাবি করছেন। সরজমিনে রোগীদের প্রেসক্রিপসন করতে দেখা গেছে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা জানেনা তিনি যে ডাক্তার না। এভাবে রোগীদের ব্যাবস্থাত্র লিখে দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ৫০ থেকে দেড়শ টাকা। প্রতিনিয়তই চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এ অঞ্চলের সাধারন মানুষদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। আর রোগীরা পাচ্ছে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। কেউ কেউ ভুল চিকিৎসা নিয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ তার দাপটে রোগীরা অস্থির। রোগীদের ভাগ্যে জুটছেনা সাধারণ চিকিৎসা সেবাও। নারী-পুরুষ গর্ববর্তী মহিলা এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ যে কোন কঠিন রোগের চিকিৎসার অনুকুলে ব্যাবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন তিনি। এ ছাড়াও পুরুষ রোগীদের অবহেলা ও নারী রোগীদের যতেষ্ঠ সময় নিয়ে দেখেন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও উঠেছে। বিনা মুল্যে দেয়া সরকারী ঔষধ রোগীদের না দিয়ে তিনি বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারন রোগীরা। এ ছাড়াও ঔষধ কো¤পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা প্রতিনিয়ত দাঁড়িয়ে ভিড় জমাতে দেখা যায় এ কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রটি বর্তমানে হারুন অর রশিদ ও ঔষধ কো¤পানির রিপ্রেজেনটেটিদের দখলে। এতে করে রোগী ও তার স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাদের কো¤পানির ঔষুধ লেখা আছে কি না তা দেখতে রোগীদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। অথচ রোগীরা জানেনা এ প্রেসক্রিপশন যে ডাক্তার লিখেননি। এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কতৃপক্ষের টনক নড়েনি। হারুন অর রশিদ দীর্ঘদিন এখানে চাকরি করার কারনে একটি প্রভাবশালী মহলের চত্র ছাঁয়ায় নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তিনি চলছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে রাতের বেলায় অবাধে চলে গাঁজা সেবন, তাস খেলার নামে চলে জোয়ার আসর ও অসামাজিক কার্যক্রম। সরজমিনে পরিদর্শন কালে এর কিছু আলামত পাওয়া গেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশাল সীমানা প্রাচীর থাকলেও প্রবেশ পথে কোন গেইট না থাকায় রাতের বেলায় অবাধে লোকজনের বিচরন চলে। এতে করে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ঠ হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত কয়েক হাজার পরিবারের কথা বিবেচনাকরে মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রটিতে জনবল নিয়োগ ও অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে অতিদ্রুত প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
মেডিকেল সহকারী হারুন অর রশিদ পুরুষ রোগীদের অবহেলা ও নারী রোগীদের যতেষ্ঠ সময় নিয়ে দেখার কথা অস্বীকার করে বলেন, বাবা-রে এ সব বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিনকে অবগত করেছি। হাসপাতাল সংক্রান্ত আরো তথ্য জানতে চাইলে তিনি একপর্যায়ে এ প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পওে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এ সেবা কেন্দ্রটিতে মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এম এল এস ও আয়া পদ শুন্য রয়েছে। যেহেতু আমি রাত্রে এখানে থাকিনা সেহেতু পরিত্যাক্ত ভবনে অসামাজিক কার্যক্রমের ব্যাপারে আমি কোন কিছু জানিনা। আমি নিজ উদ্যোগে বেতন ভোগী ২ জন এম এল এস নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ শর্মা বলেন, হারুন অর রশিদ ডাক্তার না। তিনি মেডিকেল সহকারী। কেন্দ্রের প্রবেশ ধারে গেইট ও পরিত্যাক্ত ভবন সম্পর্কে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। সারা দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগ আপাদত বন্ধ রয়েছে। তিনি একা ঔষধ লিখবেন এবং বিতরণও করবেন তা সম্ভব না। তাই ব্যাক্তি উদ্দ্যোগে লোক রেখেছেন ঔষধ বিতরণ করার জন্য। সরকারী ঔষধ বিক্রির কোন সুযোগ নেই। হারুন অর রশিদের অসৌজ্য মুলক আচরণের বিষয়টি আমি দেখছি।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30