১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

পুলিশকে তদন্তের আদেশ দিলেন আদালত

অভিযোগ
প্রকাশিত মে ২৮, ২০১৯
পুলিশকে তদন্তের আদেশ দিলেন আদালত

মোজাম্মেল হক,সুনামগঞ্জঃসুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার টুকদিরাই গ্রামের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী এনামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার আদেশ দিলেন আদালত। গত ২৬শে মে রবিবার ‘মানব পাচারকারী দিরাইয়ের এনামুল হক এলাকা ছাড়া’ দেখে সোমবার বিকালে সুনামগঞ্জের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (দায়রা জজ) মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।দিরাই উপজেলার টুক দিরাই গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে এনামুল হক’র লিবিয়ায় রয়েছে টর্চারসেল। ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে ইউরোপে যেতে আগ্রহীদের সেখানে পাচার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। দেশে পরিবারের লোকজনকে বলা হয় তাদের সন্তান মাফিয়ার কবলে পড়েছে। এনামুলকে টাকা দিলেই মাফিয়ার কবল থেকে মেলে মুক্তি। এভাবেই ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয় তাকে। নৌকা চালক থেকে আঙ্গুল ফুলে কোটিপতি হওয়া এনামুলের ক্ষমতার কাছে ভুক্তভোগীরা অসহায়। তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। তিউনিশিয়ায় সাগরে দিরাইয়ের মাহবুব নিখোঁজের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে এনামুল। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার টুক দিরাই গ্রামের হাজী আবদুল ওয়াহেদ মিয়ার পুত্র এনামুল হক ইঞ্জিন চালিত নৌকা
চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। হঠাৎ করে ঢাকা, সিলেট আসা যাওয়া করে এলাকার যুবসমাজকে ইউরোপ পাঠানোর স্বপ্ন দেখিয়ে মানব পাচার শুরু করে সে। স্বপ্নের ইউরোপ পারি দিতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনামুলের শরণাপন্ন হয়েছেন এলাকার অনেকেই। দীর্ঘ দিন অবৈধভাবে মানব পাচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এনামুল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ পারি দিলেও অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে সাগরেই। কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন কেউবা জেল খেটেছে। গত ৯ মে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের চন্ডিপুর গ্রামের মাহবুবুল করিম কনু (২৫) মিয়া নিখোঁজের পর দালাল এনামুল হক কে নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় উঠে। এরপর থেকে এনামুলকে এলাকায় আসতেও দেখছেন না কেউ।
তবে এনামুল হকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখন বলেছিলেন, এসব কাজে তিনি এখন নেই, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও নেই, মামলা হয়েছিল, তাও শেষ করা হয়েছে, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে এখন কিছুদিন ধরে সিলেট থাকছেন।
আদালতের নজরে আসলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, দৈন¤œস্বাক্ষরকারীর গোচরীভূত হয়েছে যে, দিরাই উপজেলার টুক দিরাই গ্রামের এনামুল হক, পিতা-হাজী আব্দুল ওয়াহেদ আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী দলের সদস্য হিসাবে এলাকার যুব সমাজকে ইউরোপ পাঠানোর নাম করে অবৈধভাবে অনেককে বিদেশ পাচার করে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করেছে। যারা তার মাধ্যমে পাচার হয়েছে তাদের অনেকেরই সলিল সমাধি হয়েছে। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে পাচার হওয়া যে সব বাংলাদেশী যুবক ছিল তাদের মধ্যে তার কর্তৃক পাচার করা জনৈক মাহবুবুল করিম কানুও ছিল মর্মে জানা যায়।
ওই আদেশে আদালত আরও উল্লেখ করেন, বেকারত্ব এবং আর্থিক অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর দালাল তাদের সংগীয় অন্যান্য দালালের সহায়তায় অনেক নারী ও যুবককে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারের অবৈধ কর্মে নিয়োজিত আছে এবং এর মাধ্যমে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। পক্ষান্তরে ঐ সব হতভাগা মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে এবং পাচারের শিকার হয়ে অনেকেরই সলিল সমাধি হচ্ছে। বিগত ৯ মে ২০১৯ ভূমধ্যসাগরে এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনায় অনেক বাংলাদেশী যুবকের প্রাণহানি ঘটে। প্রায়ই এসব ঘটনার কথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার করা হলেও পাচারকারীরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মানবপাচারের মতো ক্ষতিকারক সামাজিক সমস্যাটি সম্পর্কে আদালত আরও বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের জন্য ২০১২ সালে যে আইনটি প্রণয়ন করা হয় তার যথাযথ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না, কারণ এই আইনটি সম্পর্কে মানুষ এখনও সচেতন নয়। আবার অনেকে মামলা দায়ের করলেও বিচার নিষ্পত্তির আগেই নিজেরা আপোষ মিমাংসা করিয়ে নেয়। ফলে এই অপরাধে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। যেহেতু এনামুল হক আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী দলের কথিত সদস্য হিসাবে মানব পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট আছে মর্মে জনশ্রুতি আছে, সেহেতু মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন, ২০১২’এর ১৯ (১) ধারা অনুযায়ী অফিসার ইনচার্জ দিরাইকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন অত্র ট্রাইব্যুনালে আগামী ২০ জুন’এর মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া গেল।
আদালতের এমন আদেশ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাড. স্বপন কুমার দাস রায় বলেন, বিজ্ঞ বিচারক যে আদেশ দিয়েছেন এই আদেশ জনস্বার্থে সময় উপযোগী। এসকল বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে এমন আদেশ দিলে পাচারকারীদের দ্বারা নির্যাতিত সমাজের নীরিহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আইনের মাধ্যমে উপকৃত হবে, আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031