রাশেদুল হাসান রিয়াদ,বরগুনা জেলা প্রতিনিধি: ঈদ-উল ফিতর কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) থেকে শুরু হওয়া স্পেশাল সার্ভিসের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে এরইমধ্যে নানান প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নির্ধারিত নদীপথে নাব্যতা ঠিক রাখার পাশাপাশি সাংকেতিক চিহ্ন ও বাতিগুলোর প্রতি এসময় সংশ্লিষ্ট দফতরের জোরদার তদারকি থাকছে।
এককথায় নৌ-পথে চালক-মাস্টারদের নানান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সম্পাদন করা হচ্ছে রুটিন কাজগুলোও। যার মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা নিরাপদ করে তোলা হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের।
তবে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের বরিশাল অংশে বিকন ও বয়ার বাতি (লাইট) খোয়া যাওয়ার আতঙ্ক রয়েছে। কারণ প্রায়ই এ রুটসহ বরিশাল অঞ্চলের নদীপথে সাংকেতিক কাজে ব্যবহৃত বিকন ও বয়ার বাতি চুরির ঘটনা ঘটছে। আর এ চুরির সঙ্গে জড়িত অসাধু জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দা।
নৌ-রুটে বিআইডব্লিউটিএর দেওয়া স্পেরিক্যাল বয়া এবং মার্কার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিকন ও বয়াবাতি। যার মাধ্যমে রাতে লঞ্চসহ নৌযান চালাতে গিয়ে নদীতীর ও সঠিক পথ খুঁজে নেন মাস্টার-চালকরা।
এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে বিকন ও বয়াবাতি পর্যাপ্ত থাকলেও এগুলো নিয়মিত ফ্লাশ (রাতের আলো) দেয় না।
যদিও এর কারণ হিসেবে চুরির একটি বিষয় রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগে বাতিগুলো নষ্ট হলে কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও ঠিক করা হতো না। এখন সংশ্লিষ্ট দফতর নিয়মিত বিকন ও বয়ার বাতি চেক করে এবং নষ্টগুলোকে প্রতিস্থাপনও করে। তবে প্রায়ই দেখা যায় বিকন ও বয়ায় কোনো বাতিই নেই, অর্থাৎ চুরি হয়ে গেছে। ফলে আকস্মিকভাবে রাতে এসব বাতি না থাকলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে লঞ্চ চালকদের। চরে আটকে যাওয়াসহ নানান দুর্ঘটনার শঙ্কাও থাকে।
এ রুটে চলাচল করা অন্য লঞ্চের মাস্টারদের মতে, বিকনবাতি জ্বলছে না এমন সমস্যা সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলার পর তারা গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছে নষ্ট নয়, বাতিই পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর নতুন বাতি লাগালো ২/১ দিন ভালো যাওয়ার পর আবার বাতি জ্বলছে না, এরকম ঘটনাও ঘটছে। যদি ঈদের আগে এ সমস্যা হলে দুর্ঘটনার শঙ্কা তো থাকছেই।
লঞ্চ চালনার ক্ষেত্রে মার্কা-বিকনবাতি-বয়াবাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের পরিদর্শক মৌজে আলী সিকদার জানান, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় ৫০টি মার্কা, ১০টির মতো বিকনবাতি, ৮টি বয়াবাতি, ২টি স্পেরিক্যাল। শুধু ঢাকা-বরিশাল নয়, বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে সব জায়গায় পর্যাপ্ত মার্কা, বিকনবাতি-বয়াবাতি, স্পেরিক্যাল বয়া রয়েছে।
শনিবার (২৫ মে) সবশেষ ঢাকা-বরিশাল রুটের বরিশাল অঞ্চলে থাকা সব সাংকেতিক চিহ্ন প্রকাশক সরঞ্জাম চেক করা রয়েছে। যার মধ্যে বেশকিছু স্থানে বিকন ও বয়ার বাতি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যা চুরি না গেলে সহসা সমস্যা দেখা দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিআইডব্লিউটিএ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, বরিশালের সর্বত্র সঠিকভাবে মার্কা, বিকনবাতি-বয়াবাতি, স্পেরিক্যাল বয়া বসানো রয়েছে। সবশেষ মিয়ার চরে যে বাল্কহেডটি ডুবেছে সেখানে লাল পতাকা ও বয়া লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঈদ ঘিরে এগুলো প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
তবে এটা সত্যি যে কৌশলে উন্নতমানের এ বাতিগুলো চুরি করে নেওয়া হয়। যা রোধে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছি, তাদের অবহিতও করেছি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি, কিন্তু চুরি রোধ সম্ভব হচ্ছে না। কোনো বছর থানায় লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ১০/১২টি আবার কোনো বছর ২০/২৫টিও হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে নৌ-নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের পর্যবেক্ষণের বাইরে লঞ্চের মাস্টার-চালকরা বাতি না থাকার বিষয়টি জানালেও দ্রুত লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে তিন বছর আগে বাতি চুরির একটি মামলায় পটুয়াখালীর এক ব্যক্তিকে কারাগারে যেতে হয়। যে ঘটনা ছাড়া আর কোনো ঘটনা বা অভিযোগে কাউকে আইনের আওতায় আনার খবর তাদের জানা নেই।