২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রাজনীতির মাঠে তৃতীয় শক্তি অর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
রাজনীতির মাঠে তৃতীয় শক্তি অর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ


মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান আজাদ লোহাগাড়া প্রতিনিধি

দেশে ভোটের রাজনীতিতে হঠাৎই কৌতূহল সৃষ্টি করেছে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’। সর্বশেষ গত শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে ভোটের অঙ্কে বাংলাদেশের বড়ো দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই তৃতীয় স্থানে চরমোনাই পিরের প্রতিষ্ঠিত দলটি।

বিশেষ করে, ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীর চেয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ‘হাতপাখা’ প্রতীকে পাঁচ গুণ বেশি ভোট পেয়ে এখন দেশ জুড়ে আলোচনায়। রাজনীতির মাঠে সাংগঠনিকভাবে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে না থাকলেও এবং নির্বাচনের আগে ২০ দিনের প্রচারণায় দৃশ্যমান তেমন কোনো শক্ত অবস্থান দেখা না গেলেও ভোটের ফলাফলে জাপাকে টপকে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় স্থান দখল করে চমক দেখালেও এ নিয়ে সাধারণ্যের মাঝে নানা প্রশ্নেরও উদ্রেক হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও কৌতুহলের জন্ম দেয় ইসলামী আন্দোলন। ঐ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে এককভাবেই সর্বোচ্চসংখ্যক, অর্থাত্ ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে চমক সৃষ্টি করে চরমোনাইর পিরের প্রতিষ্ঠিত দলটি। অথচ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৬০, বিএনপি ২১৯ এবং জাপা মহাজোটগতভাবে ২৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

অবশ্য ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বিবিসিকে বলেছিলেন, ৪০টির মতো নিবন্ধিত দলের মধ্যে ইতোমধ্যে সংবাপদপত্র ও বিভিন্ন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি।

দলগতভাবে সর্বাধিক আসনে শুধু প্রার্থী দেওয়াই নয়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাজধানীসহ সারাদেশে ‘হাতপাখা’র বিপুলসংখ্যক পোস্টার দেশের মানুষের নজর কাড়ে। বিএনপি ও দলটির পৃথক দুটি জোট ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্য প্রার্থীরা প্রচারণায় নানা ধরনের বাধা, হামলা-মামলার মুখে পড়লেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে ‘মধুর’ প্রচার-গণসংযোগ চালিয়েছে।

তবে দলটির কোনো প্রার্থীই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে দলটির প্রার্থীরা সর্বসাকুল্যে পেয়েছিলেন ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ ভোট। ঢাকার দুই সিটির এবারের নির্বাচনেও রাজধানী জুড়ে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকে দুই মেয়র প্রার্থীর প্রায় সমতালে ‘হাতপাখা’র বিপুলসংখ্যক পোস্টার দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর পোস্টারের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি পোস্টার ছিল ইসলামী আন্দোলনের দুই মেয়র প্রার্থীর। সিটি নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নগরীর অলিগলিতে বাধাহীনভাবে অবাধে মিছিল-প্রচারণা করেছে। কোথাও ‘হাতপাখা’র পোস্টার ছিড়ে ফেলার, প্রচারণায় হামলার কিংবা নির্বাচনি ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পর রাজধানীর নয়াপাল্টনে একটি রেস্তোরাঁয় এই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, ইসলামী আন্দোলন সম্পূর্ণ নিজের সাংগঠনিক শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্যে কিংবা আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ইসলামী আন্দোলন ভোটের মাঠে বিস্তৃতভাবে থাকছে এবং অবাধে প্রচারণা চালাচ্ছে; এসব বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার।

ঢাকার দুই সিটির গত শনিবারের ভোটে ভোটারের খরার মধ্যেও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুর রহমান ২৬ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। অথচ দক্ষিণে জাপার মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৩ ভোট। এই ভোটে গণফ্রন্টের প্রার্থীর চেয়েও কম ভোট পেয়ে জাপার হাজী মিলন পঞ্চম হন।

এবার ঢাকা উত্তরেও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে বারী ‘হাতপাখা’ মার্কায় ২৮ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। উত্তরে অবশ্য এবার মেয়র পদে জাপার প্রার্থী ছিল না, দলটি ব্রি. জে. (অব.) জি এম কামরুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার প্রার্থিতা বাতিল করে।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের পরই তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদ্বয়। ঐ নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে দলটির মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে বারী পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ভোট, আর দক্ষিণে আবদুর রহমান পান ১৫ হাজার ভোট। ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার মেয়র পদে দলটি উত্তরে ১০ হাজার এবং দক্ষিণে সাড়ে ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়েছে।

সাড়ে ৩২ বছর বয়সি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলেও তৃতীয় হয়। ঐ নির্বাচনে দলটির মেয়র প্রার্থী মো. নাসিরউদ্দিন ‘হাতপাখা’ প্রতীকে ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়েছিলেন। এটিই ছিল দলটির প্রথম সিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ।

গাজীপুর সিটি ভোটে তখন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ১৬৫৯ ভোট এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী পান ৯৭৩ ভোট। খুলনা সিটির সর্বশেষ নির্বাচনেও প্রথমবার অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলন পায় ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট। এটিও ছিল ঐ নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট। খুলনা সিটি নির্বাচনে জাপার মেয়র প্রার্থী পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২৩ ভোট। আর ঐ নির্বাচনে সিপিবির প্রার্থী পান ৫৩৪ ভোট।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টির মতো। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নীরবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। রাজনীতিতে তেমন কোনো আলোচনায় না থেকেও ইসলামী শাসনতন্ত্রে বিশ্বাসী এই দলের ভোটের হিসাব রীতিমতো চমক তৈরি করছে।
সূত্র: বরিশাল ক্রাইম নিউজ

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30