১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বিয়ের পিড়ি থেকে পালিয়ে চুয়াডাঙ্গার মেয়ে ইতিরএস এ গেমস আর্চারিতে স্বর্ণ জয়

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
বিয়ের পিড়ি থেকে পালিয়ে চুয়াডাঙ্গার মেয়ে ইতিরএস এ গেমস আর্চারিতে স্বর্ণ জয়

সাজিদ হাসান সোহাগ ,চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি :-

চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ইতি খাতুনের কতই বা বয়স তখন? এই বয়সেই তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে পরিবার। ইতির বাবা ইবাদত আলী একজন হোটেল কর্মচারী। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। মেয়েদের স্কুলের খরচ জোগাতে পারেন না বেশির ভাগ সময়। মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সে জন্যই। এক দিন তীর-ধনুকের অনুশীলন শেষে বাড়িতে এসে দেখে বাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। পাত্রপক্ষ বসাবাড়ির বারান্দায়। বিয়ের সব আয়োজন শেষ। কিন্তু শেষ মূহুর্তে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। সোজা চলে যায় আর্চারি ফেডারেশনের ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায়। চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের সেই আর্চারির প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রথম হয়েছিল সে। কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিল, তা এ স্বর্ণ জয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করল মেয়েটি। চলতি এসএ গেমসে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জিতে লাল সবুজের পতাকাকে তুলে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। অলিম্পিয়ান রোমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে রিকার্ভের দলগত ও মিশ্র দলগতের স্বর্ণ জিতেছে বিয়ের পিঁড়ি থেকে পালানো ইতি খাতুন। সে এখন আর পেছনে তাকাতে নারাজ, হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতেও আপত্তি। স্বর্ণপদক জয়ের পর মুখে কুলুপ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে আসার প্রসঙ্গ নিয়ে। এখন ১৪ বছর বয়সি ইতিকেই কি না, তিন বছর আগে তার পরিবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতির স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার, আলো ছড়ানোর। ইতি বলতে না চাইলেও গল্পটা বললেন আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল, ‘ইতি বিস্ময় বালিকা। এত অল্প বয়সে এ পর্যায়ে কেউ খেলে না। ২০১৬ সালে প্রতিভা অন্বেষণে চুয়াডাঙ্গায় পেয়েছি। ওর সঙ্গে তখন সোহেল আকরামও ছিল। তখন আমার ছেলে বলল, আমি একটা মেয়ে দেখেছি, দারুণ প্রতিভা, তাকে তৈরি করা যাবে। ওর মা-বাবা ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। বলতে গেলে বিয়ের পিঁড়ি থেকে ওকে তুলে আনা। ওর বিয়ের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ওর চিন্তা ছিল পড়াশোনা করা। তীরন্দাজ হওয়ার ইচ্ছা ছিল না হয়ত, কিন্তু ওপরে ওঠার ইচ্ছা ছিল। পড়াশোনা করবে বলেই বিয়ের আসর থেকে উঠে গিয়েছিল, সুযোগ খুঁজছিল কীভাবে পালাবে। বিয়েটা যেন না হয়। আমাদের ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামটা তার জন্য একটা উপলক্ষ ছিল। তার বো ধরা, দাঁড়ানো দেখে কোচরা বুঝে ফেলেন ভালো আর্চার হবে সে। নেওয়া হয় তীরন্দাজ সংসদ দলে। এখন তো দেশবরেণ্য তীরন্দাজ।’ স্বর্ণ জয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইতি জানায়, ‘কোচরা আমাকে বলেছেন, কোনোদিকে তাকাবে না। তোমার কাজ তীর মারা, তুমি শুধু ভালো জায়গায় মেরে যাবে। আমি আমার কাজটা করেছি। তাতেই রোমান সানা ভাইয়ের সঙ্গে স্বর্ণ এসেছে। এখন আমি আমার ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই।’ মেয়েদের রিকার্ভ এককের সেমিফাইনালে ইতির প্রতিপক্ষ ছিল এই আসরের অন্যতম সেরা নারী আর্চার কারমা দেবী। ভুটানের হয়ে ওলান্ড আর্চারি কোটা পেয়েছে কারমা। সেই কারমাকে ৬-০ সেট পয়েন্ট হারিয়ে ইতি বলে, ‘আসলে আমি জানতামই না ও অলিম্পিকে কোটা পেয়েছে। আমি জেতার পর জেনেছি। আমি যখন খেলেছি, তখন আমি শুধু আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি ভালো করছিলাম আর ও খারাপ মারছিল তাই ৬-০ সেট পয়েন্টে জয় এসেছে।’ইতিকে একটা সময় তীর-ধনুক হাতেই নিতে দিতেন না তার বাবা ইবাদত আলী। পদক জয়ের পর সেই দুঃখের কথা শুনিয়ে ইতি বলে, ‘বাবার পক্ষে সংসার চালিয়ে আমাদের পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তাই তিনি প্রায়ই বলতেন, মেয়ে হয়ে জন্মেছিস, কেন খেলবি? তোর খেলাধুলার দরকার নেই। বিয়ে-শাদি দিয়ে দিই, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সংসারে মন দে। কিন্তু আমি কখনই এসব কথা মাথায় নেইনি। তাইতো সাহস করে বিয়ের আসর ছেড়ে আর্চারি ক্যাম্পে যোগ দিয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031