ওমর শাকিল,লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি::
ছাত্রনেতার নির্দেশ পরীক্ষা চলবে না।
বন্ধ কর পরীক্ষা। কথা না শোনায়
লাঞ্চিত করা হয় হল পরিদর্শক
শিক্ষককে। শুধু তাই নয়; পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর অব্যাহত রাখায় জ্যামিতি বক্স
ছুড়ে মারা হয় শিক্ষকের মুখের ওপর।
বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনা ঘটেছে কফিল
উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। সময় তখন
সকাল ১০টা ২০ মিনিট। এইচএসসি
১মবর্ষের বাংলা ১মপত্রের পরীক্ষা
চলছিল। এসময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের
সভাপতি এম মাসুদ অনুমতি ছাড়াই
পরীক্ষার হলে ঢুকে নির্দেশ দেয়
শিক্ষার্থীদের প্রতি পরীক্ষা দেওয়া
বন্ধ কর। শিক্ষক এনাম আহমেদ তখনও
পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর করছিলেন।
শিক্ষক তার কথা না শোনায় চিৎকার
দিয়ে মাসুদ বলে ওঠলেন তোকে বলছিনা
পরীক্ষা চলবে না। তারপরও খাতায়
স্বাক্ষর করছিস কেন? পরীক্ষার ওই হলে
তখন প্রায় ১৫০ জন ছাত্রী পরীক্ষা
দিচ্ছিল। তারা তাৎক্ষণিক শিক্ষকের
প্রতি এমন আচরণের প্রতিবাদ করেন।
এসময় ওই শিক্ষকও প্রতিবাদ করে বলেন,
তোমাকে অনুমতিবিহীন পরীক্ষার হলে
ঢুকতে বলছে কে? যা বলার অধ্যক্ষের
কাছে গিয়ে বল। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে
শিক্ষকের মুখের ওপর ছুড়ে মারা হয়
জ্যামিতির বক্স। পরে শিক্ষক এনাম
আহমেদ ঘটনার প্রতিবাদ জানান কলেজ
প্রশাসনের কাছে। কিন্তু প্রতিকার না
পেয়ে তিনি তাঁর নিকটাত্মীয় পুলিশ
প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে
বলেন। ওই আত্মীয় কর্মকর্তা বিষয়টি
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
মহোদয়কে জানান। এরপর অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার রিয়াজুল কবির পুরো ঘটনাটি
লাঞ্চিত শিক্ষক এনাম আহমেদের কাছ
থেকে জেনে নেন। পরে তিনি এ বিষয়ে
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলেজ গভর্নি বডি
এবং অধ্যক্ষকে বলেন। না হলে ওই
শিক্ষককে মামলা করার জন্য বলেন।
একপর্যায়ে কলেজ গভর্নি বডির
সহযোগিতায় কথিত ছাত্রনেতা এম
মাসুদসহ অন্যান্যরা লাঞ্চিত শিক্ষকের
কাছে পায়ে ধরে মাফ চান এবং লিখিত
মোচলেকা দিয়ে এ যাত্রায় পার পান। এ
সময় চন্দ্রগঞ্জ থানার একদল পুলিশ সদস্য
কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিল বলে
জানা গেছে।
এরআগে কলেজের অধ্যক্ষের সাথে
ছাত্রলীগের অনৈতিক লেনদেন
সংক্রান্ত বিষয়ে কলেজ শাখা
ছাত্রলীগের সভাপতি এম মাসুদের সাথে
বাদানুবাদ চলছিল। এর জেরধরে ২০/২৫ জন
দলীয় কর্মীকে সাথে নিয়ে পরীক্ষা বন্ধ
করতে গেলে ওই শিক্ষকের সাথে উদ্ভূত
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ দিকে
শিক্ষকের প্রতি এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে
অন্যান্য শিক্ষকও প্রতিবাদ জানান। তবে
পুরো ঘটনাটি কলেজের অভ্যন্তরে
গোপনে মিমাংসা করা হয়, যাতে বাইরে
সাংবাদিকসহ কেউ জানতে না পারে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সাথে তাঁর
মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও
নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে
পরীক্ষার্থী অনেকের সাথে
বিক্ষিপ্তভাবে কথা বললে পুরো বিষয়টি
জানা যায়। তারা এমন ন্যাক্কারজনক
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ দিকে পরীক্ষা হলে ছাত্রনেতা কর্তৃক
শিক্ষক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে
মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষক
এনাম আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার
করে বলেন প্রশাসন ও গভর্নি বডির
হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।
পরীক্ষার হলে ঢুকতে হলে পূর্বানুমতির
প্রয়োজন যে ছাত্রনেতা এইটুকু জানেনা
তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলেজ
শাখা ছাত্রলীগের। শিক্ষকের প্রতি
একজন দায়িত্বশীল ছাত্রনেতার
অশালীন আচরণে বিষ্মিত হয়েছেন
অনেকেই।
লাঞ্চিত শিক্ষক এনাম আহমেদ লক্ষ্মীপুর
প্রেস ক্লাবের প্রাক্তণ সভাপতি প্রয়াত
সাংবাদিক মো. জাকির হোসেনের
মেয়ের জামাতা।