পুনম শাহরীয়ার ঋতুঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের আন্দার মানিক এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে চাঁদা বাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে।
এসময় ইয়াবাসহ তিন জনকে আটক করার পর প্রধান আসামীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে দুজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরে মাদক মামলায় চালান দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার আন্দার মানিক এলাকার মৃত-শামছুল হকের ছেলে শাজাহানের বাড়ীতে গত বুধবার রাত প্রায় ৯টার দিকে থানার এস আই আনোয়ার হোসেন সঙ্গী কয়েকজনকে নিয়ে সাদা পোশকে ওই বাড়ীতে যান।
সেখানে শাজাহানের বাড়ীর একটি কক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন ও বাড়ীর মালিক শাজাহানকে মাদকসহ ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে শাজাহানের স্ত্রী ও আনোয়ার হোসেনের ভাই সফিপুর আনসার একাডেমী এলাকা থেকে আসামী ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য এসআই আনোয়ারের কাছে ২৬হাজার টাকা দেন।
শাজাহানের স্ত্রী ও আনোয়ারের ভাইয়ের নিকট থেকে টাকা নিয়ে তিন আসামীকে সেখান থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আরও টাকা লাগবে বলে।
পরে ভোর রাতে শাজাহানকে মামলার স্বাক্ষী করে ছেড়ে দেওয়া হলেও অপর দুই আসামী আনোয়ার হোসেন ও নাছিরকে ৩০ পিচ ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই এসআই এর সোর্স রানা যে নিজেকে পারভেজ পরিচয় দেয়। পরের দিন সকালে সোর্স রানা ওরফে পারভেজ আসামী আনোয়ারের মায়ের কাছ থেকে আরও ২৮ হাজার টাকা নেন ৫৪ধারায় অথাৎ (নন এফায়ার) চালান দেওয়ার কথা বলে। বর্তমানে আনোয়ার ও নাসির উদ্দিন গাজীপুর জেল হাজতে রয়েছে। অপরদিকে মামলার প্রধান আসামী মাদক ব্যবসায়ী শাজাহান এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আসামী আনোয়ারের মা অনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে আনোয়ার এবং শাজাহান ও নাছির নামে আরও দুইজনকে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমার ছোট ছেলে জয়নালের মাধ্যমে পুলিশ রাতে ২৬ হাজার টাকা ও সকালে সোর্সের মাধ্যমে ২৮ হাজার টাকা নেয় তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু ভোর রাতে প্রধান আসামী শাজাহানকে ছাড়লেও ওই দুই জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েও মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরন করে।
আমার ছেলে মাদক খেলেও নাছির নিরীহ। তাহলে পুলিশ টাকা নিয়ে কেন মামলা দিলো। আবার শাজাহানকে কেন ছেড়ে দিলো!
আনোয়ারের ভাই জয়নাল জানায়, শাহজাহান এবং আমার ভাইসহ তিনজনকে ৫শত পিচ ইয়াবাসহ আটক করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। পরে জানতে পারি তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পর প্রধান আসামীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ এছাড়া ৫শত পিচ ইয়াবার মধ্যে মাত্র ৩০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, শাহজাহান একজন মাদক ব্যবসায়ী তার বাড়ী সব সময় মাদক সেবন কারীদের আড্ডা হয় তার পরও পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
সোর্স পরিচয়হানকারী নিজেকে পারভেজ পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি কোন চাকুরী করিনা। আমার বাড়ী লস্করচালা এলাকায়ই। আপনারা আমার স্যারের সাথে কথা বলেন। আমি আাপনাদের সাথে সকালে দেখা করবো।
ছাড়া পাওয়া আটককৃত আসামী শাহজাহান জানান, বুধবার রাত প্রায় ৯টার দিকে থানার এসআই আনোয়ার হোসেন কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে সাদা পোশকে আমার বাড়ীতে ঢুকে একটি ঘর থেকে আমাকেসহ আরও দুজনকে ধরে নিয়ে যায়, সারারাত থানায় আটক রাখার পর ভোররাতে আমাকে ছেড়ে দেয়।
এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী আসামী ধরেছি, আবার চালান করে দিয়েছি। শাজাহান বাড়ীর মালিক তাই তাকে মামলায় স্বাক্ষী করে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে বলেছে টাকা নিয়েছি। বাদ দেন তো ভাই ওই সব মিথ্যা কথা।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মজুমদার বলেন, বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো। ঘটনার সত্যতা পেলে অপরাধী যেই হোক অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।