মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম শরীফ,বিশেষ প্রতিনিধি :
ফরিদপুর, ভাঙ্গার বড় ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের স্কুল প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুল হক মিয়া (৫২)
জমির কাচা ধান রাতের অন্ধকারে কেটে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী আকন বাড়িয়া গ্রামের মতিন মোল্লা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
গত ১লা নভেম্বর ২০১৯ রোজ শুক্রবার ভোররাতে মতিন মোল্লার নেতৃত্বে ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাচা ধান কেটে নিয়ে যায়।
এরা হলো মতিন মোল্লা (৭৫) শেখ ইচাহাক (৫৫) লাইলী বেগম (৪৩) আক্তারি বেগম (২৭) শেখ সবুজ (২৫) এবং সাথে আরো ৫/৬ জন।
মতিন গ্রুপের অস্ত্রের সামনে তখন দাঁড়ানোর মতো সাহস করেনি কেউ। তাইতো দূর থেকেই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এলাকাবাসী।
জানা যায় মতিন গ্রুপের সেকেন্ড ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার কনিষ্ঠ কন্যা আক্তারি বেগম ।
আক্তারি বেগমের বিয়ের অল্পদিনের মাথায় স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়াতে বাবা মতিন মোল্লার বাসায় আশ্রয় নেন।
পাশের বাড়ির সোনা শেখের পুত্র শেখ ইচাহাকের সাথে মতিন মোল্লার আরেক মেয়ে লাইলী বেগমের বিয়ে হয়।
নিরহ মানুষের জমিজমা দখল করার সময় লাইলী বেগমের স্বামী শেখ ইচাহাক , তাদের পুত্র সবুজ শেখ ও অন্য ৯ বোনের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।
তাদের বিরুদ্ধে টুশব্দ করার মতো সাহস নেই কারো। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই তাকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
জমির ধানকাটা বিষয়ে কথা হলো শিক্ষক মনিরুল হক মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, “আমার পিতা ও ছিলেন একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক। সারাজীবন তিনি সাদামাটাভাবে জীবনযাপন করে গেছেন।
আমার দাদার সময়কাল থেকে অদ্যাবধি প্রায় শতবছর ধরে এই জমিতে ফসল উৎপাদন করে আসছি। কিন্ত হঠাৎ করে গত ২ মাস আগে মতিন মোল্লা আমার কাছে ৪ লক্ষ টাকা চাদা দাবি করেন।
কিন্তু আমি চাদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর তার দল নিয়ে আমার জমি অবৈধভাবে দখলে আসার চেষ্টা করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। মামলা বিচারধীন থাকার পরেও কিভাবে এমন বর্বরোচিত কাজ করতে পারে তা আমার মাথায় আসছেনা।
মতিন মোল্লা প্রায়শই আমার পরিবারকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
আমি প্রশাসনের কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করছি।
এলাকার সাবেক ইউ পি সদস্য জনাব সরোয়ার হোসেন চাদার বিশেষ সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “মতিন মোল্লা জমির মালিক মনিরুলের কাছে গত ২ মাস আগে ৪ লক্ষ টাকা চাদা দাবি করেছিলেন।
কিন্ত মনিরুল চাদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি অবৈধভাবে জমি দখল করতে আসেন।”
গ্রামের হাফিজ মোল্লা (৪৫) তিনি বলেন, “মতিন মোল্লা ও তার মেয়েদের ভয়ে সবায় আতংকিত।
উনারা কোন আইনের পরোয়া করেনা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায়।
মতিন মোল্লা তার গ্রামের সিদ্দিক শেখের বাড়ি জালদলিল করে দখলে নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে আদালতে মামলা হয় আর সে মামলায় ও গতবছর তিনি হেরে যান।
মাজেদ শেখের স্ত্রী বলেন, “মতিন মোল্লার মেয়েরা আমার ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে।” একজন ভূমি দস্যু, ডাকাত, জোচ্চর ও খুনি মতিনের শেষ কোথায়?
মোল্লা সাহেব নারী ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে অন্যের জমি দখল, মসজিদের গাছ কেটে নেওয়া এটি তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মতিন মোল্লা বয়সে বৃদ্ধ হলেও তিনি এখনও অনেকটা সাহসী ও যুদ্ধবাজ সৈনিক ।
যৌবনে তিনি অপরাধ রাজ্যের মুকুট বিহীন সম্রাট ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বাইশ রশি বাবু হরিচরণ সাহার বাড়িতে ডাকাতি ও তাকে মার্ডার করার অপরাধে হাজতবাস করেন
যা জেলা রেকর্ড বোর্ডে নথিভুক্ত আছে। পরবর্তীতে তিনি কূটকৌশল অবলম্বন করেন এবং আইনের চোখে ধুলা দিয়ে বেরিয়ে আসেন বন্ধীদশা থেকে।
নিজের জামাতা শেখ ইচাহাকের সাথে ও গত প্রায় ১৮ বছর আগে তার মারামারি বেধে গিয়েছিল। সে মারামারিতে ইচাহাকের পরিবার মতিন মোল্লার বাম হাত প্রায় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো।
আজ ও পঙু হাত নিয়ে ও থেমে থাকেনি তার অপরাধ জগতের পথচলা।
তাইতো বিরামহীনভাবেই চলছে তার অবৈধ কর্মকাণ্ড। তিনি প্রায় সময় বলেন, “বাইরে থেকে লোক ভাড়া করা আমার প্রয়োজন হয়না ২/৪ টা গ্রাম দখলের জন্য আমার মেয়েগুলোই যথেষ্ট।”
তাইতো মতিন মোল্লা ও তার পরিবারের কালো ছোবল থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের প্রতি জোড়ালো দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।