জাহিদুল ইসলাম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় বিবাহ বিচ্ছেদ ইদানিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নব বিবাহিত তরুণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে এই প্রবণতা বেশী।
জেলার ডাকঘরগুলোতে তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির চিঠি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন বিবাহ তালাক রেজিস্টার কাজীর প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ জেলায় বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতার বৃদ্ধির কথা জানা গেছে।
এব্যাপারে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায়, বিশেষ করে নব বিবাহিত তরুণ, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলোর তরুণ নব দম্পতির মধ্যে এই প্রবণতা সবচাইতে বেশী বলে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হচ্ছে পরকীয়া।
বিশেষ করে যেহেতু এখন প্রায় সবশ্রেণি পেশার মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে আর এই মোবাইলের মাধ্যমেই সহজেই ফেসবুক এবং ইন্টারনেটে চ্যাটিং করার সুযোগ পায়। যে কারণে তারা পরকীয়াতে আসক্তি হয়ে পড়ছে এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব বেশী বাড়ছে। যে সমস- দরিদ্র নিম্নবিত্ত পরিবার যারা ঢাকায় রিক্সা-ভ্যান চালানো, গার্মেন্টেস বা বিভিন্ন পেশায় চাকরি করতে যায় তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পরার কারণেই এধরণের বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
তদুপরি সাংসারিক জীবন যাত্রা ব্যয় বহুল হওয়ায় দরিদ্র এবং নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো আয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না।
ফলে এ কারণেও সৃষ্ট লাগাতার দাম্পত্য কলহ থেকেও বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া মদ, জুয়ায় আসক্তি ও পুরুষ-নারীদের শারীরিক অক্ষমতার কারণেও কোন কোন ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বিবাহ তালাক রেজিস্টার কাজী সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সাধারণত গাইবান্ধার বাইরে যারা চাকরি করতে যায়, গার্মেন্টস, রাজমিস্ত্রী, রিক্সাচালকরা যে বিয়েগুলো করে এইসব বিবাহগুলো বিচ্ছেদের ঘটনা বেশী ঘটে। এরমধ্যে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশী তালাক দিয়ে থাকে।
গাইবান্ধার দক্ষিণ ধানঘড়ার বিবাহ তালাক রেজিস্টার কাজী মোহাম্মদ আলীর সহকারি ও খোলাহাটি ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া গ্রামের কাজী মিলন মিয়া জানান, বর্তমানে পরকীয়ার কারণে অনেক বিয়ে বেশীদিন টিকছে না।
তাদের মধ্যে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশী তালাকের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এছাড়া অনেকে স্ত্রীকে নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করার জন্য যায়, তাদের মধ্যে বেশী করে মেয়েরাই পরকীয়ায় জড়ে পড়ে। ফলে এক্ষেত্রে মেয়েরাই তালাকের ঘটনা ঘটাচ্ছে বেশী।
গাইবান্ধা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বিবাহ তালাক রেজিস্টার কাজী মো. আব্দুল গোফ্ফার আকন্দ জানান, উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে এবং শহর এলাকায় তালাকের প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম। তবে গ্রামাঞ্চলে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে ইদানিং তালাকের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘরে চিঠি বাছাই ও বিলি বিভাগে কর্মরত বিভিন্ন এলাকার বিট পিয়ন এবং ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ডাকঘরে আসা চিঠিপত্রের ধরণ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
এব্যাপারে গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘরের সহকারি পরিদর্শক মো. মোসলেম উদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার এই প্রধান ডাকঘরের আওতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে চিঠি আসা এবং বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা চিঠির সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনও প্রতিদিন যথেষ্ট চিঠি আসে।
তিনি বলেন, সাধারণত ব্যক্তিগত চিঠি এখন আর আসে না। কেননা মোবাইলে যোগাযোগ, চিঠির চাইতে অনেক দ্রুত করা যায়। তবে ইদানিং ব্যক্তিগত যেসমস- চিঠি বেশী আসছে সেগুলো হলো বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকনামার আইনা অনুযায়ি প্রদত্ত নোটিশের চিঠি।
প্রতিদিন গড়ে এই ডাকঘরে ২০ থেকে ২৫টি এধরণের বিবাহ বিচ্ছেদের চিঠি আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার ধারণা অনুযায়ি জেলার অন্যান্য উপজেলা ডাকঘর ও সাব ডাকঘর মিলে এই জেলায় এ ধরণের বিবাহ বিচ্ছেদের চিঠির পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫টি হবে বলে তিনি মনে করেন।
গাইবান্ধা শহর এলাকার বিট পিয়ন মশিউর রহমান মন্ডল জানান, তার বিটে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি চিঠি আসে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের নোটিশ। অন্য তিনজন বিট পিয়ন একধরণের কথা জানালেন। সবচেয়ে আশংকাজনক যে তথ্যটি তিনি উল্লেখ করেন প্রাপ্ত বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশগুলোর মধ্যে মেয়েদের পক্ষ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশের সংখ্যাই অপেক্ষাকৃত বেশী।